ডেস্ক রিপোর্ট : গাজীপুরের টঙ্গীতে র্যাবের হাতে আটক আওয়ামী লীগ নেতা কবির উদ্দিন বেপারীকে (৫০) জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির দুই নেতা ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ। রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে টঙ্গী বাজার সংলগ্ন আনারকলি সিনেমা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
কবির উদ্দিন বেপারী স্থানীয় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপির দুই নেতা হলেন— ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হালিম উদ্দিন বেপারী ও একই ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সমির উদ্দিন বেপারী।
এলাকাবাসি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার রাত আটটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় বউবাজার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-১ এর একটি দল। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা কবীর উদ্দিন বেপারীকে তার বাসা থেকে আটক করে রাজধানীর উত্তরার র্যাব কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে তার দুই ভাই বিএনপি নেতা হালিম উদ্দিন বেপারী, সমির উদ্দিন বেপারী ও তাদের ভাগিনা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম বাপ্পি খবর পেয়ে তাদের সমর্থকদের নিয়ে টঙ্গী বাজার সংলগ্ন আনারকলি সিনেমা হল এলাকায় র্যাবের গাড়ি আটকে দেয়। সেখানে তারা র্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করে। একপর্যায়ে জোরপূর্বক র্যাবের গাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কবির উদ্দিন বেপারীকে ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনাস্থলের পাশের বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধরা পড়ে । তাতে দেখা যায়, একদল লোক র্যাবের গাড়ি আটকে দিয়ে জোরপূর্বক কবির উদ্দিন বেপারীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। পরে তারা মিছিলসহ টঙ্গী বাজারের ভেতরের গলি দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কবির উদ্দিন বেপারীর মুঠোফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হালিম উদ্দিন বেপারী ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সমির উদ্দিন বেপারী বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। আমার ভাগিনা বাপ্পি ফোন করে আমাকে জানিয়েছে কবির ভাইকে আটকের পর র্যাব আনারকলি হলের সামনে থেকে ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহম্মেদ সুমন বলেন, বিএনপি নেতা হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জঘন্য কাজ। দলীয় সভা ডেকে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান— এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এই বিষয়ে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। টঙ্গীর বউ বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে শাসন-শোষণ করে আসছিলো আওয়ামী লীগ নেতা কবির বেপারীর পরিবার। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তার দুই ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এছাড়াও তাদের ভাগিনা আরিফুল ইসলাম বাপ্পি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী। বাপ্পি ওই এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানান অপকর্ম করে আসছিলেন। তিন হাজার পিস ইয়াবা ও বিদেশি পিস্তলসহ বাপ্পি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটেন। এছাড়াও বিএনপি নেতা হালিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। যখন যেই দলই ক্ষমতায় আসে তাদের পরিবারের অত্যাচার-জুলুম থেকে এলাকার নিরিহ লোকজন রেহাই পায় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সুত্র : ঢাকা টাইমস