শিরোনাম
◈ মার্কিন শুল্কনীতি: সংকট মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ◈ ভারতে জেল খেটে ফিরলো ৭ বাংলাদেশি ◈ অনসোর পিএসসির খসড়া প্রস্তুত, মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে শিগগিরই! ◈ নিউজিল্যান্ড এ’ দলের বিরু‌দ্ধে বাংলা‌দে‌শের স্কোয়াড ঘোষণা, দ‌লে আস‌লেন মুস্তাফিজ ◈ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ভ্যাটিকান সিটিতে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময় ◈ দেশে নতুন ভোটার ৬৩ লাখ, বাদ ২৩ লাখ মৃত ভোটার ◈ দেশের দক্ষিণের ২১ জেলায় বিকেল থেকে ‘ব্ল্যাক আউট’ ◈ বড় দুই ভাই টম ও স্যাম কারান ইংল্যান্ডের হ‌য়ে খেল‌লেও বাবার দেশের হয়ে খেলছেন বেন কারান! ◈ জুলাই যোদ্ধাদের মতো দেশের জন্য ভাবতে হবে, শিক্ষার্থীদের আসিফ নজরুল ◈ তিন দাবিতে ফের আন্দোলনে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:১০ বিকাল
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নতুন ফাঁদ সুন্দরী নারীদের, বেশি পা দিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা

হানি ট্র্যাপ যেন নতুন মোড়কে পুরনো ফাঁদের আরেক নাম। সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে গড়ে তোলা এসব চক্র এখন আতঙ্কের নাম। এদের প্রধান টার্গেট সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও ধনাঢ্যরা। এদের থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও।

দেশে ও দেশের বাইরে থেকে অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় রয়েছে এসব চক্র। সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে পাতা হচ্ছে নিখুঁত ফাঁদ। এসব তরুণী ছলচাতুরীর মাধ্যমে কাউকে যৌন আবেদনের ফাঁদে জড়াতে পারলেই তার জীবন এক প্রকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের থেকে দিনের পর দিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, চক্রের সুন্দরী তরুণীরা টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। তারা মূলত যৌনতার ফাঁদ আঁটে। প্রথমে অনলাইনে অর্থাৎ ইন্টারনেট ভিডিও কলে খোলামেলা আলাপচারিতার ভিডিও রেকর্ড করে জিম্মি করে ফেলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো গভীর করে রুম ডেটের জন্য ডেকে নিয়ে বাসাবাড়িতে আটকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সূত্র বলছে, ভিডিও কলে নুডস অবস্থায় কথা বলার সময় রেকর্ড করে জিম্মি করা তরুণীদের অনেকে দেশের বাইরে অবস্থান করে। তারা টার্গেট ব্যক্তির ফেসবুকের অনেককে ফ্রেন্ড তালিকায় যুক্ত করছে। অনেক ক্ষেত্রে টার্গেট ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেও ফেসবুকে যুক্ত হয়। পরে টার্গেট ব্যক্তির কাছে দাবি করা টাকা না পেলে এসব ছবি ও ভিডিও তার স্বজনদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।

এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকার একটি অংশ চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশের বাইরে থাকা ওই তরুণীদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

এসব ঘটনায় সামাজিক লাজলজ্জার ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতেও চান না বেশিরভাগ ভুক্তভোগী। আবার অনেক ক্ষেত্রে চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী কিছু আইনজীবীও এ চক্রের ফাঁদে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরী নারীদের এ ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পুরুষেরা। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ছাড়াও ‘কলগার্ল’ সরবরাহের আড়ালেও পাতা হচ্ছে হানি ট্র্যাপ। শুধু সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে মাসে এসংক্রান্ত গড়ে ৩০টি অভিযোগ জমা পড়ছে।

বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই মামলা করা ছাড়া হানি ট্র্যাপের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি চান। তবে এখান থেকে নিস্তার পেতে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, হানি ট্র্যাপ এক ধরনের অপকৌশল। এই ফাঁদ পাতা হয় ধনাঢ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণির লোকের ক্ষেত্রে। প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন না হলে শুধু আইন প্রয়োগ করে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ইউনিট সূত্র বলছে, ভুক্তভোগীর তালিকায় বেশি আছেন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। এদের জিম্মি করে চক্রগুলো বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে যে ফোন নম্বর তারা ব্যবহার করছে তার রেজিস্ট্রেশন ভুয়া। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইমো, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউবের শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে পাতা হচ্ছে হানি ট্র্যাপ। প্রতিদিনই ভুক্তভোগীদের থেকে আসছে অসংখ্য অভিযোগ যার মধ্যে মাসে গড়ে ৩০টি অভিযোগ আসে গুরুতর।

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি মো. আবুল বাশার তালুকদার বলেন, শুধু আমরা কাজ করলেই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। এক্ষেত্রে মানুষের সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। হানি ট্র্যাপের বেশকিছু ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে চক্রগুলো। ভুক্তভোগীদের একজন ঢাকার দোহারের সোহেল মৃধা। তিনি বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে ভিডিও কলে নুড হয়ে কথা বলেন তারা। কথা বলার মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন ওই তরুণী। পরে সোহেল মৃধার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিচ্ছেন ওই তরুণী।

সোহেল মৃধা বলেন, আঁখি আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে ইমোতে আমার পরিচয় হয়। আবেগের বশে ভিডিও কলে খোলামেলাভাবে তার সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু সে আমার নগ্ন ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছে। এখন পর্যন্ত বিকাশের মাধ্যমে চার লাখ টাকা আমার থেকে নিয়েছে।

আঁখি আক্তার নামের ওই তরুণীকে ফোন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের পরিচয় শোনার পর ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বরিশাল থেকে এক ভুক্তভোগী চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে হানি ট্র্যাপে পড়ার অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ফেসবুকে ‘লাভারস ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সাইটে প্রবেশ করে সঙ্গীতা নামের এক নারীর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক হয়। ওই নারীর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করতেও রাজি হন ভুক্তভোগী। এজন্য এনআইডি কার্ড ও ছবি দেন তাদের। বেশ কিছু টাকাও এ চক্রকে তিনি দিয়েছেন। পরে চক্রটি ওই ভুক্তভোগীর নগ্ন ছবি তৈরি করে। টাকা না দিলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নগ্ন ছবিগুলো ভাইরাল করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তিভোগী। তথ্যসূত্র : যুগান্তর

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়