নূরী জাহানারা: মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া বাংলাদেশের ও পৃথিবীর সব দেশের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি দাবি জানাতে চাই। বাংলাদেশের বাংলাভাষীদের জন্য দেশের অন্যান্য ভাষা গোষ্ঠীর ভাষা, যেমন চাকমা, তঞ্চগ্যা, মারমা, গারো, সাঁওতালী ,ওঁরাও, হাজং ও অন্যান্য ভাষা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। ইংরেজি, ফরাসি শিখতে পারলে নিজের দেশের অন্য ভাষা শেখা কেন গুরুত্ব পাবে না? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। ভাষা শিক্ষা শ্রেণিকক্ষে এবং অনলাইনে রাখা হোক। ইউরোপে প্রতিটি মানুষ নিজের দেশের প্রধান ভাষা শেখার পাশাপাশি অন্য কমিউনিটি থাকলে তাদের ভাষাও শেখে। এভাবে ইউরোপ ইউনিয়নে প্রতিটি জাতিকে যুক্তি করে ইউরোপীয়ান মানে যে বৈচিত্র নিয়েই জাতি, এবং বহু মিলে এক, এই ধারণা প্রচার ও প্রসারে কাজ করছে। বৈশ্বিক, রিজিওনাল ও স্থানিক তিন পরিচয়েই যেন ইউরোপীয়ান শিশু বেড়ে ওঠে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমার লেখক বন্ধুদের কয়েকজনকে দেখেছি মধ্যবয়সে সাপমি ভাষা শিখছেন। বিদ্যালয়েও তারা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর ভাষা শিখেছে। তার মানে প্রতিটি শিশু এখানে কম করে হলেও দেশের ভেতরের দুটি ভাষা জানে ও ইউরোপ অঞ্চলের আরও দুটি কি তিনটি ভাষা শেখে। এতে তাদের জীবনের ডাইনামিক্স যে গতি পায়, তা আমাদের শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা চিন্তাই করতে পারি না। পাহাড়ে যারা কাজ করতে চায় তারা পাহাড়ের ভাষাগুলো শিখতে পারে সহজেই। ভাষাশিক্ষা অত্যন্ত উপকারী মস্তিষ্ক ব্যবহারের প্রক্রিয়া।
আমি পাঁচ বছরে সুইডিশ শিখতে শিখতে নরওয়েজিয়ান, ডেনিশ ও জার্মান ভাষা পড়ার চেষ্টা করতে করতে এখন তিন ভাষাই কম বেশি হরফ দেখলে বুঝি। কেননা এ ভাষাগুলোর মধ্যে মিল আছে। তবে ভাষা শেখার মূল শর্ত হলো, মাতৃভাষার উচ্চারণ ও ব্যবহার সম্পর্কে যে যতো ভালো জানবে, সে অন্য ভাষা তত ভালো ও দ্রুত শিখবে। ভাষা ইনস্টিটিউট প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ভাষা চিহ্নিত করে কারিকুলাম তৈরি শুরু করতে পারে। এসব ভাষা শিক্ষা কোর্সের শিক্ষক কে হবেন? বাধ্যতামূলকভাবেই ওই ভাষার সেরা উচ্চারণ, আচরণ, চর্চা ও পূর্ণ দক্ষতা যে ব্যক্তির রয়েছে, ওই ভাষাগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর পূর্ণ দখল রয়েছে যার, তাকেই তার ভাষাকোর্সের শিক্ষক করা হোক। এটি নিশ্চিত করতে হবে। এসব কোর্সে ওই ভাষা গোষ্ঠীর, সঠিক ব্যক্তিই শিক্ষক হবেন, সমতল কি পাহাড়ের বাঙালিরা নন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :