কাজী এম মুরশেদ: ডিপ-ফেইক নিয়ে আগেও কথা বলেছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এর মাধ্যমে অডিও এবং ভিডিও এডিট করে কতো কিছু করা যায়। এটার শুরু মজা করার জন্য। একজনের ছবি দিয়ে তার গলার স্বর নিয়ে যুক্ত করে পুরো একটা ভাষণ তৈরি করে চমকে দিয়েছিলো। আমার প্রথম ডিপ-ফেইক দেখা বারাক ওবামাকে দিয়ে। তিনি নিজে কোনো কথা বলেননি বা ছবিতেও ছিলেন না, তার ভাষণ বানানো হয়েছিলো। তেমনি ভøাদিমির পুতিন বা অন্যদের দিয়েও করা হয়েছিলো। এখনো বেশকিছু প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা পাওয়া যায় যেখানে অভিনেতা বা অভিনেত্রী ছিলেনই না। পুরোটাই এআই ব্যবহার করে ছবি, আর গলার স্বরকে ব্যবহার করা। এবার পাকিস্তানের নির্বাচনের আগে ডিপ-ফেইকের ব্যবহার বেশ ভালো করেছিলো পিটিআই। ফলাফল হাতেহাতে পেয়েছে।
ঘটনাটা বলি। ইমরান খানের দলের টেকনোলজি বিশেষজ্ঞরা তার সাথে জেলখানায় দেখা করতে যায়। সেখানে তার অনুমতি চায় যে তার কথা ব্যবহার করবে জনগণের কাছে পৌঁছাতে। ইমরান খান ভেবেছিলেন, কোনো জুম মিটিং করবে, যেটা পাকিস্তানের জেলখানায় সম্ভব নয়। তাকে বলা হয়, তারা অনুমতি নিতে এসেছে তার ভাষণ তারাই তৈরি করবে, ছবি এবং গলার স্বর ব্যবহার করবে যদি অনুমতি দেন। ইমরান রাজি হলেন। বাকিটা ইতিহাস। পিটিআইয়ের টিম চার মিনিটের এক ডিপ-ফেইক ভাষণ তৈরি করে, যার শুরুতে সুরা ফাতেহার কয়েক লাইন। এরপর ভাষণ উর্দুতে দিয়ে বলে এখন জেলখানায় আটক আছে, সেখান থেকে দলে দলে গিয়ে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেবার অনুরোধ জানায়।
২৬৪ সীটের মধ্যে ১০০ সীট জেলখানায় বসে জয়, প্রায় নিশ্চিত নওয়াজ শরীফের বিজয়, পুরো সেনাবাহিনী এবং বিচারবিভাগের সমর্থন পাবার পরও দুই আসন থেকে দাড়িয়ে একটা হারা, অন্যটা পিটিআই প্রার্থী আদালতে চ্যালেঞ্জ করা, তার দল ৭৫ আসন পেয়েছে। ডিপ-ফেইক আর কী কী করে দেখা যাক। একটা দেশের নির্বাচনের ফল উল্টাতে পেরেছে, আরো কিছু নিশ্চয়ই করবে। এআই ব্যবহার করে পুরো বই লেখা, প্রিন্ট করে বাঁধাই পর্যন্ত করা গেছে কোন হাতের স্পর্শ ছাড়া। সিনেমা বানানো গেছে। ভোটে যে হাত দেবে সেটা চিন্তা না করাই আমাদের কারো চিন্তায় হয়তো ছিলো না, সেটাও শুরু হয়ে গেলো। লেখক: কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :