আজিজুর রহমান আসাদ: মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থী বলাৎকার অব্যাহত আছে কেন? কারণ শিশুর প্রতি এই ধরনের পৈশাচিক, নির্মম, অমানবিক, ঘৃণ্য অপরাধের প্রতি একধরনের অস্বীকৃতি, প্রশ্রয়, সহনশীলতা, নীরবতা, ও অবহেলা আছে। মাদ্রাসা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ও এই ব্যবসার উপকারভোগী ধর্মজীবী শ্রেণি এইধরনের ঘৃণ্য অপরাধ আড়াল ও অস্বীকার করতে চায় ‘বিরল অঘটন’ নাম দিয়ে এবং এটি ‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ পাল্টা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে। প্রায়শই অপরাধকে ‘অঘটন’ বা ‘অপকর্ম’ নাম দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং নিজেরা ‘মিটিয়ে ফেলার’ ব্যবস্থা করে। অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে এটি হয়তো তেমন গুরুত্ব বহন করে না। মানবাধিকার সংগঠনের আলাদাভাবে করা মাদ্রাসায় বলাৎকারের কোনো তথ্য আমি পাইনি। আছে শিশুর প্রতি যৌনসহিংসতার তথ্য, যেখানে মাদ্রাসায় বলাৎকার কেবল একটি ঘটনা, অন্য সকল ঘটনার মতোই। আলাদা করে এই ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়ার কোনো প্রমাণ এখনো পাইনি (কারো কাছে যদি থাকে তাহলে তথ্য দেয়ার জন্য আগাম ধন্যবাদ জানাচ্ছি)।
সাংবাদিক ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বেশ কৌতূহলোদ্দীপক গবেষণা হতে পারে। আমি এটি নেতিবাচক বা ইতিবাচক বলতে চাইছি না। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিশ্লেষণ করার মধ্যদিয়ে আপনি কিছু প্যাটার্ন পাবেন, যা এই দুই পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মাদ্রাসায় বলাৎকারকে কীভাবে গ্রহণ ও বয়ান দিচ্ছে, তা বোঝা যায়। মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকারের ব্যাপারটা বাংলাদেশের সমাজের একটি আয়না, যেই আয়নায় আমরা নিজেদের ধর্মের, নৈতিকতার, মানবিকতার, পেশাদারিত্বের ও বুদ্ধিবৃত্তির চেহারাও দেখে নিতে পারি (নমুনা হিসেবে ২৬ জানুয়ারি ২০২৪Ñদ্য ডেইলি স্টার বাংলা’ পত্রিকায় মাদ্রাসায় বলাৎকার নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ পড়ে দেখতে পারেন বা গুগল করে এই সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনা ও এর সাথে যুক্ত মানুষদের আচরণ ও মনোজগৎ বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন। ‘ইন বিটুইন লাইনস’ পড়তে না জানলে হয়তো কিছুই ধরা দেবে না।
লেখক: গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :