শেখ ফরিদ : [১] বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখা যায় যারা গ্রাম থেকে এসেছে তারা কেবল গ্রাম থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিশে। আবার অনেকেই শুধু নিজ এলাকার ফ্রেন্ডদের সাথেই চলাফেরা করে। এতে করে অনেকের অ্যাটিচিউড আর কথাবার্তায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করলেও কোনো পরিবর্তন আসে না। শহরে বড় হওয়া স্টুডেন্টদের মধ্যে অন্যকে এপ্রিশিয়েট করা, পজিটিভলি চিন্তা করা, অন্যকে উৎসাহ ও মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আবার গ্রাম থেকে যারা আসে তাদের মাঝে অন্যকে সহযোগিতা করা, বিপদে সর্বোচ্চ দিয়ে এগিয়ে আসা, ও কঠোর পরিশ্রম করার অভাসগুলো সাধারণত থাকে। কারো ফ্রেন্ড সার্কেলে এই দুই ধরনের ছাত্রছাত্রীরা থাকলে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ডেভেলপমেন্টটা ভালো হয়। এটা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও যোগাযোগ দক্ষতায়ও অনেক প্রভাব ফেলে।
[২] আপনি যে সেক্টরেই জব করতে চান না কেন, যোগাযোগ দক্ষতা আর নেটওয়ার্কিং এর বিকল্প নেই। ভাল লিখতে পারা, ভালভাবে কথা বলতে পারা ওভার দা টাইম ডেভেলপ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করতে করতে এই দুইটা দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব দিতে হবে।
[৩] সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিলে স্পেসিফিক কোন দক্ষতা না থাকলেও চলে, এই চাকরি সরাসরি একটা চেয়ার দেয়। তবে আপনি যে সেক্টরেই চাকরি করতে চান না কেন, অন্তত ‘আপনি কী পারেন?’ এই প্রশ্নের একটা উত্তর যেন থাকে। অন্তত একটা বিষয়ে যদি আপনি দক্ষ হতে পারেন, সেই দক্ষতা আপনাকে যে কোন চাকরিতেই বেনিফিট করবে।
[৪] যারা একাডেমিয়াতে ক্যারিয়ার গড়তে চান, মাস্টার্সের পরেই বাইরে পিএইচডির জন্য এপ্লাই করবেন। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য যথেষ্ট ফান্ড আছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারা আর একাডেমিশিয়ান হওয়া এক নয়। আপনি যদি আসলেই ভালো শিক্ষক হতে চান, ভালো গবেষক হতে চান, বাইরের ডিগ্রি আপনাকে নিতেই হবে,এর কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো দেখছেন অনেকেই কোনো ভালো ডিগ্রি ছাড়া, কোনো একাডেমিক কন্ট্রিবিউশান ছাড়া ‘বহু কিছু’ হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, তাদের ছাত্রছাত্রীরা তাদের পেছনে তাদের নিয়ে কী বলে। আপনি আপনার কোনো শিক্ষকদের ভালোবাসেন, সম্মান করেন? একাডেমিশিয়ান হতে চাইলে সত্যিকারের একাডেমিশিয়ান হোন।
[৫] আপনি যদি আপনার সাবজেক্টের পড়া ভালো করে না পড়েন, দয়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে যাবেন না। দেশের এত বড় ক্ষতি করবেন না। চোখের সামনে যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেখেছি, তাদের অনেককেই ৫ বছর তার বিভাগের লাইব্রেরিতে যেতে দেখিনি। আপনার টাকা আছে বলে, আপনার লিংক আছে বলে, আপনার আর কোন চাকরি হয় না বলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইবেন? এটা সত্য, এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কিছু অযোগ্য-অদক্ষ-নীতিহীন লোকের হাতে থাকায় অনেক সময় আপনার কোন রকম একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন ছাড়াও আপনার সুযোগ আসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। অনুরোধ থাকলো, হতে যাবেন না। দেশের, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এত বড় ক্ষতি করবেন না। শুধু পেটের আহার যোগানোর জন্য, টাকা আয়ের জন্য, আরামের জন্য এই পেশায় গিয়ে হয়তো একটা চাকরি-ই করে যাবেন সারাজীবন, না শিক্ষক হতে পারবেন, না একাডেমিশিয়ান। আপনি যা না, তার জন্য সম্মানিত হওয়ার চেয়ে আপনি যা, তার জন্য অপমানিত হওয়া-ই শ্রেয়। টাকা আয়ের আরো বহু উপায় আছে, দেশের একাডেমিক ব্যবস্থা ধ্বংসে কন্ট্রিবিউট করবেন না।
[৬] চিন্তাকে শৃঙ্খল মুক্ত করেন। প্রযুক্তির ব্যবহারে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর এআই টুল ব্যবহার করতে পারেন না, একটা ডাটা এনালাইসিস সফটওয়্যারও ব্যবহার করতে জানেন না, এই কথা কাউকে যেন শোনাতে না হয়। আপডেটেড প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে নিজে নিজেই শিখতে হবে। এই পরামর্শ যে কেউ দিতে পারতো, এর জন্য সফল হতে হয় না। আমি শুধু আপনাদের জন্য গুছিয়ে লিখলাম। ফেসবুকে ১০-১-২৪ প্রকাশিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :