কামরুল আহসান: ২০০২ সালে আমি উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের একটা বাচ্চাকে পড়াতাম। ওর নাম ছিল অতুল। অতুল ছিল খুব দুষ্ট। কারও কাছেই ও পড়তে চাইতো না। তিন- চারজন টিচারের পর আমাকে রাখা হয়। আমি প্রথম সাতদিন ওর সঙ্গে বক্সিং আর লুকোচুরি খেললাম। তারপর একদিন বললাম, আসো, একটু লেখাপড়া করি। তা না-হলে তোমার নানী তো আমাকে বকবে। তিন মাসের মধ্যে অতুল বদলে গেলো। আমি না গেলে নাকি ওর ভালে লাগে না। আমি চলে আসতে গেলে ও আসতে দেয় না। প্রতিদিনই প্রথমে আমি ওর সঙ্গে একটু খেলাধুলা করি, গল্প করি, তারপর পড়তেও বসি খেলাচ্ছলে। পরের পরীক্ষাতে ও ভালো রেজাল্ট করলো। ওর নানী আমার বেতন বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুণ। কিন্তু একটা কারণে কিছুদিন পর আমাকে টিউশানিটা ছেড়ে দিতে হয়। বাচ্চাদের পড়ানো মজার, আর চ্যালেঞ্জিং। অবশ্যই তাদের আনন্দের সঙ্গে পড়াতে হবে। কিন্তু যেÑসমাজব্যবস্থায় আমরা থাকি, এই টানাপোড়নের অর্থনীতির মধ্যে আনন্দ কোথায়? আনন্দ কি আমাদের ঘরে-পরিবারে আছে যে স্কুলে থাকবে?
সরকারি বা বেসরকারি বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা বেতন পান কত যে স্কুলে গিয়ে বিদেশি শিক্ষকদের মতো ব্যাঙের মতো লাফাবেন? কিন্ডারগার্টেনের এমন অনেক শিক্ষককে চিনি বেতনের টাকায় চলতে পারেন না বলে বিকেলে ফার্মেসি বা ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালান, বিকাশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। আর সত্তর-আশিজন ছাত্রের ক্লাসে কজনের দিকে একজন শিক্ষকের মনোযোগ দেওয়া সম্ভব? এমন আত্মত্যাগী শিক্ষকইবা এখন কজন আছেন? শিক্ষকরা কি নিজেরা পড়াশোনা করেন যে তারা ছাত্রদের প্রতিনিয়ত অভিনব উপায়ে পড়াবেন? বাংলাদেশের কজন শিক্ষকের বাড়িতে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি আছে? কেবল প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদান সম্ভব নয়। ট্রেনিং দিয়ে হঠাৎ করে কাউকে সৃজনশীল করা সম্ভব নয়। এটা একটা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। ছোটবেলা থেকে জীবনচর্চার মধ্যদিয়ে এটা বিকশিত হয়। অনেক শিক্ষককে কাছ থেকে দেখেছি, ছাত্র তো দূরের কথা, সন্তানের সঙ্গেই তার কমিউনিকেশনের ক্ষমতা নেই। আর শিক্ষা জিনিশটা যে কী এই বোধই তো এ জাতির হয়নি। লেখক ও সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :