শিরোনাম
◈ ‘মেগা বাঁধ’ ঘিরে চীন-দিল্লি উত্তেজনা ◈ রাজধানীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনীর অভিযান (ভিডিও) ◈ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্স থেকে মাশরাফিকে বাদ দিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ◈ আবুধাবি টি-টেন ক্রিকেটে বাংলা টাইগার্সে সাকিবের পর তাওহীদ হৃদয় সুযোগ পেলেন ◈ দুই কুশলের ব্যাটিং তা-বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো শ্রীলঙ্কা ◈ অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ◈ পাকিস্তানে ভারত খেলতে না গেলে জয় শাহকে বিকল্প খোঁজার আহ্বান ইসিবির ◈ চাপাতি নিয়ে দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক বর্ণনা, অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৩ (ভিডিও) ◈ সংস্কারের ধীর গতি ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, যা বলছেন উপদেষ্টারা ◈ সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ

প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:৫০ রাত
আপডেট : ২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:৫০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

থ্যাংক্স গিভিং হিস্ট্রি অব রেসিপ্রোসিটি নাকি হোস্টালিটি?

বাতেন মোহাম্মদ

বাতেন মোহাম্মদ: ২৩ নভেম্বর ছিলো থ্যাংকস গিভিং ডে। ক্রিসমাসের পর সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে উত্তর আমেরিকায় পালিত হওয়া বড় উৎসব! সবাইকে থ্যাংকস গিভিংয়ের শুভেচ্ছা। এই দিনে টার্কি মুর্গি, কুমড়ার পাই, ক্রেনবেরি সস দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। আমেরিকা ও কানাডায় দুই দেশেই থ্যাংক্স গিভিং মহাসমারোহে পালিত হয় এবং এটা ন্যাশনাল হলিডে। যদিও দুই দেশে একই দিনে পালিত হয় না। আমেরিকায় হয় নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার আর কানাডায় এটা পালিত হয় অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার। থ্যাংক্সগিভিং একান্তই কলোনিয়াল উৎসব। আরো নির্দিষ্ট করে আমেরিকায় আগত কলোনিয়ালদের উৎসব। আরো ন্যারো ডাউন করে বললে, এটা আমেরিকায় আগত পাদ্রীদের উৎসব।

ইতিহাস বলে ১৬২০ সালে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা (মূলত প্রটেস্টান্ট) লাভের উদ্দেশ্য একদল পাদ্রী আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ইউরোপ থেকে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটেস (বোস্টন) এর প্লাইমাউথে আসে। এসেই পড়ে শীতের কবলে। তাদের মধ্যে কিছু পাদ্রী শীতে ও কেউ কেউ খাবারের অভাবে মারা যায়। তখন প্লাইমাউথে বসবাস করা ওয়াম্পানোগ ট্রাইব নাকি ইমিগ্রান্ট পাদ্রীদের থাকতে দিলো। তাদের নিজের জমিতে চাষ করতে দিলো। কীভাবে চাষ করতে হবে সেটা শিখিয়ে দিলো। এরপরের বছর অটামে পাদ্রীরা তাদের হারভেস্ট ঘরে তুলে ওয়াম্পানোগ ট্রাইবকে দাওয়াত দিলো। তারা তিনদিন ধরে মানে বৃহস্পতি থেকে শনিবার উৎসব করলো। মূলত কুমড়ার নানা পদ দিয়ে আপ্যায়ন করলো। এটা ন্যাটিভ আমেরিকানদের প্রতি ইমিগ্রান্ট ইউরোপিয়ান আমেরিকানদের গ্রাটিটিউড।

তবে এটা ম্যাসাচুসেস্টসের বাইরে পুরো আমেরিকার উৎসব হয়েছে আরো অনেক পরে। ১৮৬৩ সালে আব্রাহাম লিংকন গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে থ্যাংক্সগিভিং ডে কে ছুটির দিন ঘোষণা করে একধরনের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলো। সেই ধারাবাহিকতায় থ্যাংকসগিভিং পালিত হয়ে আসছিলো। পরে ১৯৪১ সালে মার্কিন কংগ্রেস পুরো আমেরিকার সব স্টেটে থ্যাংক্সগিভিংকে লিগ্যাল ছুটি হিসাবে স্বীকৃতি দিলো। অন্যদিকে কানাডা দাবি করে তাদের থ্যাংক্স গিভিং ইতিহাস আরো পুরোনো। মূলত মার্টিন ফ্রবিসার নামে ব্রিটেনের রানীর নামে এক অভিযাত্রী নাকি ১৫৭৮ সালে কানাডার ভুখণ্ডে থ্যাংক্স গিভিং প্রথম উদযাপন করেন। যদিও অফিসিয়ালি এটা উদযাপিত হওয়া শুরু করে ১৮৭৯ সাল থেকে।

থ্যাংক্সগিভিংয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়। এটার একটা অন্য ভার্সনও আছে। আমেরিকার বেশির ভাগ আদিবাসী এই দিনকে আদিবাসী নির্যাতন দিবস হিসাবে দেখে। উপরে পাদ্রীদের আশ্রয় দিয়েছে আদিবাদী ট্রাইব এবং বিপরীতে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের ভোজের আমন্ত্রণ দিয়েছেÑ এমন রোমান্টিক গল্প আদিবাসীদের ভার্সনে নেই। সেখানে আছে অত্যাচার, ভূমি দখল, নির্যাতন, ধর্মান্তরিতকরণের ইতিহাস। আদিবাসীদের বর্ণনায় এই দিনে ইউরোপিয়ান একদল অভিযাত্রী এসে আদিবাসীদের মেরে তাদের ঘর বাড়ি দখল করে নেয়। জমি দখল করে নেয়। তাদের ফসল কেড়ে নেয়। তারপর নিজেরা উৎসব করে সেই ফসল দিয়ে। অন্যদিকে আদিবাসীরা ক্ষুধার্ত, শীতে ধুকে ধুকে অনেকে মরে। এই দিনকে তাই আদিবাসীরা গণহত্যা, নিজের ভূমি হারানোর যন্ত্রণা, সংস্কৃতিকে বিকৃত করার কষ্টের দিন হিসাবে দেখে।

ইউরোপিয়ান কলোনাইজাররা তাদের রক্তাক্ত ইতিহাসকে রোমান্টিক করে উপস্থাপন করার যে প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মনে হয় তারা আসলে ন্যাটিভ আমেরিকানদের ত্রাতা হিসাবে এসেছে, এখানে সভ্যতা- যা কিছু ভালো সব তাদের হাতে তৈরি সেভাবেই ইতিহাসের বয়ান তৈরি করেছে। অন্য অনেক ইতিহাসের মতো থ্যাংক্স গিভিংয়ের ইতিহাসও রক্তাক্ত, বিতর্কিত। কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের কল্যাণে আর ইউরোপিয়ান হেজিমনির বদৌলতে আজকে এটা সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও বিনিময়ের উৎসব। কিন্তু বিপরীতে আদিবাসীদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ সেটা কি সুন্দর ঢেকে গেলো এক ‘মহৎ’ ইতিহাসের আড়ালে। এই মহৎ বানানোর প্রচেষ্টাই চলছে সবখানে। ইতিহাস আসলে ক্ষমতার জয় ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি নয়। লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেইন, যুক্তরাষ্ট্র

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়