ব্রাত্য রাইসু: অভাবের কারণে অনেক আত্মহত্যা ঘটে। সব খবর পাওয়া যায় না। আমার খুব কাছের একজনের স্কুলের ক্লাসমেট বান্ধবীর এই রকম আত্মহত্যার কথা জানতে পারছিলাম অনেক বছর আগে। নিজের শ্রেণির কারও এই রকম আত্মহত্যায় মন খুব খারাপ হইছিলো তখন। বাঁইচা থাকাটারে নির্লজ্জতার মতো লাগতেছিলো। তার সেই আত্মহত্যার কথা খুব বেশি মানুষ জানতে পারেনি। না মিডিয়া, না সমাজ। তখন বিশ্বাস হইতে চায়নি। এখনো তার কথা ভাইবা আমি তারে চিনিও না, নামও মনে নেই, কিন্তু অনেক কষ্ট পাই তার কথা ভাইবা।
কেন পাই জানেন? কারণ যাদের অভাবে মৃত্যুবরণের কথা না তারা যখন সে কারণে মারা যায় তার চাইতে বড় অপচয় আর হয় না। কিন্তু অভাবের কারণে কেউ আত্মহত্যা করেও না। আমি দেখছি অভাবের চাইতে বরং লজ্জার কারণেই আত্মহত্যা করে মানুষ বেশি। অভাবের সমাধান আছে। সাহায্য বা ভিক্ষা প্রার্থনা করলে অভাব কমে। আমি খুব অভাবের সময় ফেসবুকে ধার চাইয়া পাইছি। অভাবের আশু সমাধান হইছে। আমি বাঁইচা গেছি।
কীভাবে বাঁচলাম? কারণ আমি লজ্জা পাইতে শিখিনি। আমার চাইতে গ্রেট কাউরে আমি ভাবি না। কাজেই লজ্জা আমি পাইও না। যারা অন্যদের নিজের চাইতে বড় ভাবে তারাই লজ্জা পায়, তারাই আত্মহত্যা করে। আমার অভাব থাকতে পারে কিন্তু লজ্জা বলতে নেই। তাই আমার অভাব শেষ পর্যন্ত থাকেও না। আমার থাকে সমস্যা। তার সমাধানে আমি মানুষের কাছে হাত পাতি। এতে আমার স্ট্যাটাসের কমতি হয়। কিন্তু এর একটা পজেটিভ দিকও আছে। অনেক মানুষের অনেক নাটক থেকে রক্ষা পাই আমি। অনেক বন্ধুরে আর বন্ধু না ভাবলেও চলে। আমার লজ্জা নেই। আমার জীবনের লজ্জা হচ্ছেন অন্যরা।
লজ্জাই সেই কালপ্রিট, যা মানুষের কাছে বাস্তবতা সম্পর্কে বাস্তবের চাইতে বড় বড় ব্যাখ্যা হাজির করে। মানুষ ছোট জিনিসরে অনেক বড় কইরা দেখতে পায় স্রেফ ‘লজ্জার’ কারণে সাহায্য চাইতে যে হয় সেই ‘লজ্জার’ কারণে, ধার যে চাইতে হয় মাথা নিচু কইরা সেই ‘লজ্জার’ কারণে, ভাত চাওয়ার ‘নির্লজ্জতার’ কারণে। আপনি সাহায্য করতে না পারেন, ভাত দিতে না পারেন কাউকে, ধার দিতে না পারেন অন্তত লজ্জা যে পাইতে হবে না তা শিখাইতে পারেন মানুষকে। আমি তা শিখাই, নিজেরে আপনাদের পায়ের নিচে নামতে দিয়া দিয়া তা শিখাই। কারণ তাতে লজ্জার কিছু নেই। জগতের সব কিছুতে সবার সমান অধিকার। আসেন ঠিক করি, আমরা ভাত চাইতে আর লজ্জা করবো না কোনোদিন। কারণ ওই ভাত আমাদেরও।
লেখক: কবি
আপনার মতামত লিখুন :