শিরোনাম
◈ ‘ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনের মুক্তিতে আর কোন বাঁধা থাকছে না’ ◈ বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত পুলিশসহ সবাইকে ধরা হবে, কিছু হয়েছে, ধরার পর আবার এক ওসি পালিয়েও গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান ◈ মারা গেছেন নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী ◈ সারজিসসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের প্রচার, যা জানা গেল ◈ নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব সারজিসের (ভিডিও) ◈ জয়বঞ্চিত ম্যানচেস্টার সিটি, হার এড়ালো লিভারপুল ◈ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রধান যে পাঁচটি সুপারিশ থাকছে ◈ জাতীয় পার্টির সঙ্গে কথা বলা যৌক্তিক মনে করছি না: উপদেষ্টা মাহফুজ (ভিডিও) ◈ বিএনপি বলছে সম্ভব, জামায়াত বলছে না

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৫৪ রাত
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভাষা কী?

গরীব নেওয়াজ

গরীব নেওয়াজ: ভাষা কী? এটা যেমন একটি সহজ প্রশ্ন, তেমনি জটিল প্রশ্নও বটে। ভাষার মূল হচ্ছে ধ্বনি। ভাষা হলো মানুষের মুখ হতে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতকগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টি। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ। আরও সোজা কথায় ভাষা হচ্ছে, আমাদের মুখ নিঃসৃত কথাবার্তা। কিন্তু শিশুর ভাষা  এবং বয়স্ক ব্যক্তির ভাষা এক নয়। ভাষার সংজ্ঞা খুঁজতে গেলে বইপত্রে বা লেখনিতে যা পাওয়া যায়, তা বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে। ভাষা নিয়ে সারাজীবন কর্মযজ্ঞ চালিয়েও শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেলেন, ‘ভাষার আশ্চর্য রহস্য চিন্তা করে বিস্মিত হই, ভাষা জিনিসটা আমরা অত্যন্ত সহজে ব্যবহার করি। কিন্তু তার নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখা একটুও সহজ নয়’। তথাপি তিনিই আবার আমাদেরকে একটি সংজ্ঞাগত ধারণা দিয়ে গিয়েছেন: ‘সমাজ এবং সমাজের লোকদের মধ্যে প্রাণগত মনোগত মিশনের ও আদান-প্রদানের উপায়স্বরূপ মানুষের শ্রেষ্ঠ যে সৃষ্টি, সে হচ্ছে তার ভাষা’।

পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের সহজতর সংজ্ঞাটি হচ্ছে, ‘Language is an instrument of communication’. অর্থাৎ ভাষা হলো যোগাযোগের যন্ত্র বা মাধ্যম অথবা বাহন। ভাষা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে। হাবিবুর রহমান স্বপন লিখেছেন, ‘আসলে ভাষা ধারণাটির কোনো সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক ও অবিতর্কিত সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। কেননা কোনো কিছুর সংজ্ঞা ভাষার মাধ্যমেই দিতে হয়। তাই ভাষার আত্মসংজ্ঞা প্রদান করা দুরূহ। তবে ভাষার একটি কার্যনির্বাহী সংজ্ঞা (working defination) হিসেবে বলা যায় যে, ভাষা মানুষের মস্তিষ্কজাত একটি মানসিক ক্ষমতা, যা বাকসংকেতে রূপায়িত (ধ্বনিভিত্তিক বা লৈখিকরূপে) হয়ে একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। ভাষা মানুষে-মানুষে যোগাযোগের প্রধানতম বাহন’। 

ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: ‘মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ-যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত, ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট জনসমাজের মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখ দিয়ে অন্যের বোধগম্য অর্থপূর্ণ যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে তাকে ভাষা বলে। ড. মুহম্মদ শহীদউল্লাহর মতে, মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম ভাষা। ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট ভাষার একটি বিজ্ঞানসম্মত ও সর্বজনগৃহীত সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন: A language is a system of arbitrary vocal symbols by which members of a social group co-operate and interact. অর্থাৎ ভাষা হলো মানুষের উচ্চারিত প্রণালিবদ্ধ ধ্বনি-সংকেত, যা দিয়ে এক-একটি বিশিষ্ট সমাজ পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে। অন্য কথায়, যে ধ্বনি মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা হয়-তাকে ভাষা বলে। দেখা যাচ্ছে, ভাষা হলো মানুষের ভাব তৈরি এবং তা আদান-প্রদানের ব্যবস্থা। এককথায় ভাষীক ব্যবস্থা। সেই ভাষীক ব্যবস্থার মধ্যে তৈরি হয় বিভিন্ন ভাষার বুলি। 

এখন দেখা যাক, ভাষা বলতে ঠিক কী বুঝায়। প্রথমে মনে রাখা দরকার, ভাষা মানে জন্মগতভাবে সম্পর্কিত এক সেট বা এক গুচ্ছ উপভাষা। এখন সেই গুচ্ছে কোন্-কোন্ উপভাষা থাকবে তার উত্তর খুঁজতে গেলে অন্তত দুটি বিবেচনা মাথায় রাখতে হবে। উপভাষীরা পরস্পরের উপভাষা না শিখে কত শতাংশ বুঝতে পারে একে অপরকে এবং দ্বিতীয়ত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে তারা নিজেদেরকে একই ভাষীক গোষ্ঠীর সদস্য মনে করেন কিনা। আমাদের ক্ষেত্রে যেমন ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালী, যশোর, রংপুর, ময়মনসিংহ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা ইত্যাদি এর সবগুলো মিলেই কিন্তু বাংলা ভাষা। অনেকসময় আবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের ভাষাকে আলাদা ভাষা দাবি করা হয়। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক বিবেচনায় যেসব উপভাষা বাংলা ভাষার সদস্য বলে পরিচিত তাদের সেট বা গুচ্ছকে বাংলা ভাষা বলা হয়। সব ভাষার ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। যদি ভাষা না থাকতো, তাহলে ভাষাহীন বিশ্বে মানুষ কথা বলতে পারত না, লিখতে পারত না, এমনকি খুব বেশি চিন্তাও করতে পারত না। কারণ চিন্তার বাহন হচ্ছে ভাষা। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিস্তৃতি লাভ করত না, আদিম জীবনেই মানুষ রয়ে যেত। চিন্তা হচ্ছে অনুচ্চারিত ভাষা, আর ভাষা হচ্ছে উচ্চারিত চিন্তা। চিন্তা মানে মনে-মনে কথা বলা, আর কথা বলা মানে জোরে-জোরে চিন্তা করা। 

সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ভাষারূপেরও পরিবর্তন হয়। পাঁচ শ’ বছর আগের বাংলা ভাষা এবং আজকের বাংলা ভাষা হুবহু এক নয়। পাঁচ শ’ বছর পরেও এক থাকবে না। সব ভাষার ক্ষেত্রেই তাই। পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্থির থাকে না। ভাষা স্থির হয়ে গেলে তা মৃত ভাষায় পরিণত হয়। বস্তুত ভাষা চলমান, সজীব এবং ক্রমাগতভাবে বদলাতে থাকে ভিন্ন-ভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন ভাবে। এই পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ থাকে। যেমন ধরুন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে ছোট-ছোট পরিবর্তন জড় হয়ে নতুন উপভাষার জন্ম দেয়। আবার অন্য ভাষার দীর্ঘ সংস্পর্শে উল্লেখযোগ্যভাবে একটি ভাষা বদলে যেতে পারে। ভাষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কাঠামোরও একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়