রাজিয়া সুলতানা জেনি: শেষ করলাম ৭ পর্বের এই ওয়েব সিরিজ। চরকিতে এসেছে। ঈদ রিলিজ। সম্ভবত হৈচৈ এর সঙ্গে টক্কর দিতে। ওরা এনেছে, ‘মহানগর-২’, আর চরকি আনলো এটা। ফেসবুক আর অন্য সব সোশ্যাল মিডিয়ায় যা রেসপন্স দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, দুটোই হিট। পাবলিক বেশ খেয়েছে। মহানগর-২ খেয়েছে সাহসী ডায়ালগবাজির জন্য আর ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ খেয়েছে নাসিরুদ্দিনের অভিনয় আর মিথিলার বোল্ড প্রেজেন্সের জন্য। এনিওয়ে, মূল আলোচনায় আসি। আমার কেমন লাগলো। এককথায় উত্তর দিলে, বলবো মিক্সড। প্রথম চার পর্ব অনবদ্য। এরপরে শিহাব শাহীন অ্যাজ ইউজুয়াল যা করেন, সেটাই করেছেন। কাহিনী লেজেগোবরে করে ফেলেছেন। কাহিনীর বেশ অবাস্তব আর রগরগে একটা টুইস্ট দিলেন। যদিও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, প্লটটাকে বিশ্বাসযোগ্য আর গ্রহণযোগ্য করার, বাট আই অ্যাম অ্যাফ্রেইড চেষ্টাটা খুব কাজে দেয়নি। তারপরও পরিচালককে সিরিজটার জন্য একটা ধন্যবাদ দিব। নিশো, অপূর্ব, মেহজাবিন কিংবা মোশাররফ করিম কেন্দ্রিক ওয়েব সিরিজ বানাবার যে হিড়িক চলছিলো, সেখানে একটা বিরাম টানবার জন্য। কেবল নাসিরুদ্দিনের উপর আস্থা রেখে একটা সিরিজ করার বানাবার সাহস দেখাবার জন্য। নিডলেস টু সে, নাসির সাহেব ব্রিলিয়ান্ট পার্ফম্যান্স দিয়েছেন।
যাইহোক, গল্পটা নিয়ে একটু আলোচনা করি। যমজ ভাইয়ের গল্প। একজন স্মাগলার অন্যজন ইন্সিওরেন্স এজেন্ট। বেশ কিছু ঘটনা ঘটে এবং এরপরে এক ভাইয়ের জায়গায় আরেকজন আসে। সেই পরিবারে, তার অফিসে কীভাবে অন্যজন নিজের অবস্থান পোক্ত করে এটা দেখা যায় পরের কিছু পর্বে। পঞ্চম পর্বে এসে কাহিনী সুন্দর একটা মোড় নেয়। আর সেই সঙ্গে কাহিনীকার উদ্ভট এক প্লটের জন্ম দেন। ব্যাপারটায় বেশকিছু রগরগে ব্যাপার আনেন। মিথিলার অট্টহাসি, তই তই তইÑ এসব কেমন যেন আরোপিত লাগে। অন্তত মিথিলার চরিত্রের যে অবয়ব তিনি তৈরি করেছিলেন বিগত চার পর্বে, তার সঙ্গে বর্তমান চরিত্র কেমন যেন বেমানান লাগে। মনে হয়েছে, রগরগে ব্যাপারগুলোর আমদানি করতে, চরিত্রকে হঠাৎ পাল্টে ফেলা হলো।
যদিও রাইটার বোঝাতে চেয়েছিলেন দেড় বছরের সেক্স স্টার্ভেশান আর অর্থের লোভ থেকে এমনটা করেছে মিথিলা, তারপরও, ব্যাপারটা এতোটাই আচমকা আর এতোটাই দ্রুত যে বেশ হোঁচট খেতে হয়। আর যেভাবে কোনো অনুতাপ অনুশোচনা ছাড়া মিথিলা নতুন রূপে আবির্ভূত হয়, তাতে আর তাকে একটু আগে দেখা অ্যাভারেজ মধ্যবিত্ত নারী মনে হয় না। পরিবর্তনটা গ্র্যাজুয়াল, বেশ কয়েক মাস ধরে ঘটলে কেমন লাগত জানি না, তবে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা সেভাবে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
শেষটা খুব খারাপ হয়নি, তবে প্রেডিক্টেবল ছিলো। একটা ক্লিফ হ্যাঙ্গারও রাখা হয় দ্বিতীয় সিজনের জন্য। যেমন আলোচনায় এসেছে সিরিজটা, তাতে মনে হয়, এটা সিজন টু অবশ্যম্ভাবী। জানি না কী হবে, তবে সিরিজটা নাসিরকে স্টার করে দিয়েছে। এক্সপেক্টেশান বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বোপরি নতুন ধাঁচের নাটক তৈরির সাহস যুগিয়েছে। সবশেষে বলবো, সিরিজটা নিয়ে আরেকটু হোমওয়ার্ক করলে, হয়তো দুর্দান্ত একটা সিরিজ হতো। চতুর্থ পর্বের পর গল্পের ফোকাস থেকে সরে যাওয়ার, ‘আমি অনেক পারি’ দেখাবার যে প্রবৃত্তি ডিরেক্টর সাহেবের আছে, সেটায় রাশ টানতে শিখলে, হয়তো সুন্দর একটা সিরিজ পেতাম। তারপরও, সিন্ডিকেট বা মরীচিকার চেয়ে বেটার হয়েছে। হোপ ফর দ্যা বেস্ট ফর হিজ নেক্সট ভেঞ্চার।
আপনার মতামত লিখুন :