শিরোনাম
◈ খাগড়াছড়িতে প্রতিপক্ষের গুলিতে ৩ ইউপিডিএফ কর্মী নিহত, অবরোধের ডাক ◈ ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি ◈ গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে দিলেন তালা  ◈ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে ঢুকলে ফিরিয়ে দিত, এই সরকার কঠোর আচরণ করছে : ভারতীয় জেলেদের সংবাদ সম্মেলন ◈ ৩৫ প্রত্যাশীরা ফের আন্দোলনে, পুলিশের লাঠিচার্জ-জলকামানে ছত্রভঙ্গ ◈ দুইটি হজ প্যাকেজের খরচ এর বিষয় যা জানাগেল ◈ রাজনীতিবিদ ছাড়া সংস্কার সফল হতে পারে না : মির্জা ফখরুল ◈ অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের প্রভাব : ডয়চে ভেলে প্রতিবেদন ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ ◈ ৮ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ

প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:৩১ রাত
আপডেট : ০১ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রথম আলোর ‘ভুল’ নিয়ে

আর রাজী

আর রাজী: প্রথম কথা হচ্ছে, আমার বিবেচনায় প্রথম আলো প্রথমে যেভাবে ফটোকার্ডটি প্রকাশ করেছিল, তাতে কোনো ভুল ছিল না। তার কোনো রকম বদল ছিল অপ্রয়োজনীয়। কারণ কোথাও সাংবাদিকতার প্রচলিত রীতিরেওয়াজ, নীতিমালার বরখেলাপ হয়েছিল না। আমার অনুমান, প্রথম আলো এই ছবি প্রচারের পর পাঠক-প্রতিক্রিয়া দেখে চিন্তিত হয় যে, ক্ষমতাসীনরা এইটা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। সুতরাং সেই ভয় থেকে তারা টোন-ডাউন করে তা প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তটাই ছিল ভুল। ক্ষমতাসীনরা ধরে নেয় যে, প্রথম আলোর কিছু না কিছু দুর্বলতা আছে, নইলে সংশোধনী কেন দেব? দুষ্টু লোকজন আছে, যারা স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু, তারাও একইভাবে ধরে নেয় যে প্রথম আলোর অবশ্যই দুর্বলতা আছে। সুতরাং তাকে এই সুযোগে সাইজ করতেই হবে।

এ বাদেও কথা আছে। পৃথিবীতে নানান ধরনের বা রকমের সাংবাদিকতা রয়েছে। যেমন ধরেন, ‘নিউ-জার্নালিজম’ বলে গত শতকের ষাটের দশকে একধরনের সাংবাদিকতা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানে, পরিস্থিতি হুবাহু তুলে না ধরে, সাংবাদিক গল্পের মতো করে তাঁর ভাষায় শোনাতেন মানুষের বাস্তব জীবনের গল্প। ধরেন, গার্মেন্টসে কাজ করা নারীদের জীবন তিনি তুলে ধরতে চান, অনেক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকের যে অনুভূতি তৈরি হলো, সেই অনুভূতি কেবল একটা নারীর গল্পের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন তিনি। ধরা যাক, সেই নারীর নাম রোকেয়া। এই রোকেয়ার সারা দিনের গল্প উনি লিখছেন, কিন্তু সাংবাদিক যা বলছেন তার সাথে রোকেয়ার ব্যক্তিগত জীবনকাহিনীর মিল নাই। উনি রোকেয়ার গল্পে মিশিয়ে দিয়েছেন হেমা, রাবেয়া, কবিতা, চন্দনা, মালতী আরও অসংখ্য নারী কর্মীর গল্প, ভাষ্য, বিবৃতি। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে তিনি যে ছবি আঁকছেন সেই ছবি সত্য। সাংবাদিক বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারেন, তুলে ধরেন। এতে বস্তুনিষ্ঠতা বা ফেয়ারনেস কিছুই ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করা হয় না। 

প্রথম আলো যে ফটোকার্ডটি বানিয়েছে, তা খুবই নান্দনিক। একটা শিশুকে পেছন দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, তাকে সনাক্ত করার উপায় নাই। সে এই দেশের যেকোনো দরিদ্র শিশুর প্রতিরূপ যেন। আর কার্ডে যার কথা দেওয়া হয়েছে, কথার সাথে সেই ব্যক্তির নাম রয়েছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছেন তিনি। দারুণ অর্থপূর্ণ। এখানে ‘ভাত দে হারামজাদা/তা না হলে মানচিত্র খাবো’ লিখাও থাকতে পারতো। মানুষ কীভাবে তার মনের ভাব প্রকাশ করবে সে তো তার নিজের ব্যাপার। সাংবাদিক তো সাধারণ মানুষের যে অধিকার তার বেশি  কিছু অধিকার প্রয়োগ করছেন না।

এক গোত্রের ফিচার হয়, সেখানে ভাষাটাও হয় খিস্তিখেউড় মেশানো। যদি রাজারাণীকে গালি দেয় কেউ, সেটিও তুলে ধরা হয় সেই ভাষাতেই। ‘গঞ্জ জার্নালিজম’ বলে যার পরিচয়। এদেশের সাংবাদিকতায়, সুরুচি রক্ষার নামে, কেউ কাউকে গালি দিলে আমরা গালিকেও সুভাষিত করে প্রকাশ করি। এতে যেমন কেউ মনে করে না যে, প্রকৃত বক্তব্য ‘বিকৃত করা’ হয়েছে, তেমনি উলটো ক্ষেত্রে, মানুষের ক্ষোভ  গালির সাহায্য নিয়ে প্রতিবেদক যদি প্রকাশ করেন, সেটিও ‘বিকৃত করা’ বলে বিবেচিত হয় না।

নানানভাবে ভাষায় সাংবাদিকতা হতে হয়, হতে হবে মানুষেরই স্বার্থে। সবার ওপরে মানুষ সত্য, মানুষের ওপরে তো রাষ্ট্র না। মানুষ না থাকলে রাষ্ট্র থাকে? সেই মানুষের কষ্ট, বেদনা, যন্ত্রণা বিচিত্রভাবে রূপ দেন সাংবাদিকরা। এমনভাবেই তারা ভাষা দেন যেন সংশ্লিষ্ট লোকজন বাধ্য হন এ্যাক্ট করতে। সেই ধারাবাহিকতাতেও প্রথম আলোর ফটোকার্ড উৎড়ে যায় কার্যকর সাংবাদিকতা হিসেবে।

আজকের মতো বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এতো সংকীর্ণ ছিল না। ছোট বেলায় একটা সাপ্তাহিকে ঈদের শুভেচ্ছা কার্ড ছাপা হতে দেখেছিলাম। সবটা ভালভাবে মনে নাই। কিন্তু কার্ডটা ছিল অনেকটা এরকম- একটা শিশুর কঙ্কালসার বুক, যে বুকের হাড় ঈদের চাঁদেরই মতো; তার পাশে কাজী নজরুলের ‘কৃষকের ঈদ’ কবিতার কয়েক পঙক্তিÑ ‘জীবনে যাদের হর রোজ রোজা/ক্ষুধায় আসে না নিদ/মুমুর্ষু সেই কৃষকের ঘরে/এসেছে কি আজ ঈদ/একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে/যে খোকা মরিল তার/উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি/সে শিশুর পাঁজড়ের হাড়’? 
আজকের দিনে কোনো সংবাদমাধ্যম যদি এমন কিছুই করে, নানান প্রশ্ন তুলে সংবাদমাধ্যমটিকে সাইজ করার চেষ্টা হতে পারে বলে শঙ্কা হয়। সেই ছোট বেলায় একুশে ফেব্রুয়ারি দিন এক সংবাদপত্রে একটা ছড়া ছাপা হতে দেখেছিলাম. সেই ছড়াটা ছিল অনেকটা এমনÑ‘একুশ এলেই ভাষণ সভা/একুশ এলেই শোক/একুশ এলেই ভাষার দরদ/অশ্রুভেজা চোখ/একুশ গেলে ভাষার দরদ সবচে আগে ভুলে/ফি বছরই এমনি করে সিকায় রাখি তুলে’। আজ যদি একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোনো সংবাদমাধ্যম এই রকম ছড়া ছাপে, তাহলে একুশের চেতনা নষ্টের অভিযোগে মামলা খাওয়ার শঙ্কা আছে।

আজই কিছু শিক্ষার্থীর সাথে আর্থিক টানাপোড়েন নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন কথাটা উঠলো, ‘ভাত দে হারামজাদা/তা না হলে মানচিত্র খাবো’Ñ বুকে লেখা টি-শার্ট বানানোর। কিন্তু অমন টি-শার্ট রাষ্ট্রবিরোধী বলে বিবেচিত হয় যদি। সুতরাং নিজের ক্ষোভ নিজে গিলে ফেলতেই হবে। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশে কি আজ আর স্বাধীন আছে? লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়