শিরোনাম
◈ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, কোন তারিখে ট্রেনের কোন টিকিট এর বিষয়ে যা জানাগেল ◈ ইরানকে আঘাত করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে, আমেরিকা বিশ্বকে ধোঁকা দিচ্ছে: ইমাম খামেনেয়ী ◈ আমি জানি না, ওরা কেনো মাঠ থেকে অবসর নিলো না : খালেদ মাহমুদ সুজন ◈ হান্ড্রেড বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৯ ক্রিকেটারের কেউই দল পেলেন না ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ◈ গালি দেওয়া সেই সংবাদ উপস্থাপিকার চাকরি ফিরিয়ে দিতে বললেন হাসনাত ◈ বাংলাদেশে থাকতে চাই না, আমাদের বার্মা ফেরত পাঠাও, খাদ্য সহায়তা কমানোয় দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা ◈ সৌদি আরবের হঠাৎ সিদ্ধান্তে হাজারো ওমরাহযাত্রী  বিপাকে ◈ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তরুণদের নিয়ে আরেকটি দল গঠনের ইঙ্গিত ◈ কী ঘটেছিল সেই রাতে, কেঁদে কেঁদে জানালেন আছিয়ার মা

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ রাত
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রথম আলোর মিথ্যা সংবাদ কি দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির পায়তারা?

শামীম আহমেদ

শামীম আহমেদ: সংবাদপত্রের কাজ কী? একটি সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার কোনো সরকারই ত্রুটিমুক্ত নয়। এমনকি পৃথিবীর অনেক মিডিয়া, পত্রিকা প্রকাশ্যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে, সেটিও দোষের কিছু নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। আমার মনে আছে আমাদের একদম ছোটকালে বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ ইত্তেফাক পড়ত। তারপর নব্বই দশকের শুরুতে হঠাৎ করে জনকণ্ঠ এসে ইত্তেফাকের বাজার দখল করল নতুন ধরনের সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে। তারপর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জনকণ্ঠের জনপ্রিয়তা চলে গেলো প্রথমে ভোরের কাগজ এবং পরে প্রথম আলোর কাছে। গত প্রায় আড়াই দশক ধরে প্রথম আলো বাংলাদশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা প্রায়শই সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে এসেছে, সরকারের সমালোচনা করেছে, তবু যেহেতু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেছে, মানুষ তাদের পত্রিকা কিনেছে, পড়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে সেনাশাসিত সরকার আসার পর প্রথম আলোর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার হতে থাকে। তারা ইউনূসের সরকার দখলের ব্যর্থ চেষ্টায় সবসময় সমর্থন দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগের যেকোনো ব্যর্থতায় বিএনপির অন্যায্য দাবি-দাওয়াকেও। 

বাসন্তী ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি কার পরিকল্পনায়? কিন্তু গত ২৬ মার্চ ২০২৩ তারা যা করেছে তা অগ্রহণযোগ্য, অন্যায়। সাভারে স্মৃতিসৌধের গেট ধরে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলের ছবিসহ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’। প্রথম আলো উল্লেখ করে এই কথাটি বলেছে সাভারের দিনমজুর জাকির হোসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, বিএনপি-জামায়াত পন্থী লোকজন এতে ব্যাপক খুশি হয় এবং এই সংবাদ ও ছবিটি অনলাইনে ছড়াতে থাকে। আমরা যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, আমাদের স্বাধীনতায় উদ্বেলিত হই, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে আনন্দের অবগাহনে ভেসে যাই, তাদের কাছে এই সংবাদটি ভালো লাগেনি। আমরা জানি সারা দুনিয়াতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, মানুষকে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে ভালো থাকবার জন্য, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আমেরিকা ও ন্যাটো বনাম রাশিয়া-চায়না, এই ধরণের একটি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সব দেশ ভুগছে এটা আমরা জানি ও মানি। 

মিথ্যা সংবাদ তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে কারা? এই সংবাদের বিষয়বস্তু নিয়ে তাই আমাদের অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেক না হলেও খারাপ লেগেছে সংবাদ প্রকাশের ধরণ ও এর উদ্দেশ্য নিয়ে। ঠিক আমাদের স্বাধীনতা দিবসের দিনই যখন কেউ কেউ, কোন কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের স্বাধীনতার অর্জনকে খাটো করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে, তখন সেটি সহজভাবে মেনে নেবার অবকাশ থাকে না। তাই প্রথম আলো দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধীতা করলেও আমাদের স্বাধীনতা দিবসের দিন তাদের এই ধরণের সংবাদ ও ছবি প্রকাশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রাক্কালে একই রকম উদ্যোগ নিয়ে বাসন্তী নামের এক মেয়ের গায়ে মাছ ধরার জাল ধরিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। আমরা যখন বড় হচ্ছি তখনও অনেকে এই সংবাদ বিশ্বাস করত, আমাদেরও তাই বলেছে। যেহেতু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিরাই দূর্বল সেনাশাসক ও রাজনৈতিক দলের উপর ভর করে দেশ চালিয়েছে, তারা এসব মিথ্যাচার উন্মুক্ত হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাসন্তীকে নিয়ে মিথ্যাচার প্রকাশ হয়, কিন্তু ততদিনে আমরা আমাদের জাতির জনককে হারিয়েছি। 

দেশের বিরুদ্ধে এইসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে : বাংলাদেশ যেই সময়টাতে বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের এক অনন্য নিদর্শন, ঠিক তখন প্রথম আলো কেন এই সংবাদটি প্রকাশ ও প্রচার করল সেটি যখন ভাবছি, সেই মুহুর্তে এই সংবাদটি যে সর্বৈব মিথ্যা সেটি উন্মোচন করেছেন আইনজীবী ও সাংবাদিক নিঝুম মজুমদার। তার সাথে ভিডিওতে একাত্তর টিভির তুখোড় সাংবাদিক ফারজানা রূপাকেও দেখেছি। তারা সবুজ নামের সাত বছরের বালকটিকে খুঁজে বের করেছেন যাকে প্রথম আলোর সাংবাদিক জাকির হোসেন নাম দিয়ে, পরিকল্পিতভাবে সাভারের স্মৃতি সৌধের গেটে ফুল হাতে দাঁড় করিয়ে একটি কাল্পনিক উদ্ধৃতি সাজিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই সংবাদ শুধুমাত্র তাদের অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং জনমত এই সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকলে তারা এর শিরোনাম পরবর্তীতে পাল্টে দেয়। 

জাকির হোসেন বলে কেউ নেই, প্রথম আলোর সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা : নিঝুম মজুমদার ও ফারজানা রূপা সবুজের বাসায় গিয়ে সবুজ ও তার মায়ের সাথে কথা বলেন। কথা বলেন পাড়া-প্রতিবেশীসহ অনেকের সাথে। তারা তার সরাসরি ভিডিও করে সেটি স্বচ্ছতার জন্য উন্মুক্তও করেছেন। সেখানে সবুজের মা তার ছেলেকে নিয়ে এ ধরনের সংবাদে বিস্ময় প্রকাশ করেন। জানান যে তাদের সামর্থ অনুযায়ী তারা ভালো খাওয়া দাওয়া করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে সবুজের পক্ষে এই ধরণের বক্তব্য দেয়া যে অসম্ভব তা তার সাথে আলাপচারিতাতেই প্রকাশিত হয়। প্রথম আলো মূলত তার কাছে কোন বক্তব্যই চায়নি। তাকে দশ টাকা ও হাতে ফুল ধরিয়ে স্মৃতিসৌধের গেটে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে চলে যায়। প্রথম আলোকে এ বিষয়ে একাত্তর টিভির পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করলে তাদের পক্ষে সাজ্জাদ শরীফ জানান ছবিটি প্রকাশের ১৭ মিনিটের মাথায় তারা আবার সরিয়ে ফেলেন।  

রাষ্ট্রবিরোধী এই উদ্যাগের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন : প্রথম আলোর এই মিথ্যা সংবাদ আমাদের ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। তাদের সাংবাদিক এই কাজ নিজ থেকে করেছেন নাকি এর পেছনে অন্য শক্তির প্ররোচণা আছে তা খুঁজে বের করা দরকার। উল্লেখ্য এখন যদিও প্রমাণিত হয়েছে এই সংবাদটি মিথ্যা, তবুও এটি এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে যে অনেকে এটি বিশ্বাস করবে, এবং যারা এটি ছড়াতে সাহায্য করেছে তারা আরও নানাভাবে এটি যে আসলে সঠিকই ছিল তা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। এই বিষয়টি কোনভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিঝুম মজুমদার ও একাত্তর টিভিকে ধন্যবাদ দিই, ধন্যবাদ দিই ফারজানা রূপাকে এই মিথ্যা সংবাদটি তুলে ধরার জন্য। সংবাদপত্র সরকারের বিরুদ্ধে লিখবে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু তাদের অবস্থান যখন মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে উৎখাত করা, এবং আমাদের স্বাধীনতা দিবসের দিন আমাদের স্বাধীনতার যৌক্তিকতাকে মিথ্যা ছবি দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা, তখন আমরা সেই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারি না। লেখক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়