শারফিন শাহ: মান্না, দিলদার, ডিপজল একসময় কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষের বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে। এদের মধ্যে দিলদার রুচিগত দিক থেকে খানিকটা উন্নত। তিনি ভাঁড়ামি করলেও একটা রুচিবোধ ধরে রেখেছেন। ফলে অভিজাত মহলেও তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন করে হয়েছিল টেলি সামাদেরও। অপরদিকে ডিপজল, মান্না বাংলা ছবিতে সহিংসতা ও গালাগালিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ছবিতে যেসব উদ্ভট বিষয় আমদানি করেছিলেন তার পথ ধরেই চলচ্চিত্র কোমায় চলে গেছে।
হিরো আলমও ওই ডিপজল ও মান্নার প্রতিনিধিত্ব করছেন। কারণ এখন জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার মতো নায়ক নেই। তাই হিরো আলমই তাদের আদর্শ হয়ে উঠেছেন। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়ের বর্দু তার সাংস্কৃতিক মূলধন তত্ত্বে বলেছেন, সমাজে যাদের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক মূলধন নেই, তারাই ‘নিম্নমানের সংস্কৃতি’ গ্রহণ করে থাকেন। আপনার টাকা আছে, আপনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছেন, আপনি রবীন্দ্রনাথ, শেকসপিয়র পড়েন, তার মানে আপনি সাংস্কৃতিকভাবে মূলধনের অধিকারী। আর যারা অর্থাভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারেনি, রবীন্দ্রনাথ পড়তে পারেনি, হ্যামলেট দেখতে পারেনি তারা কী করবে? ওই হিরো আলমকেই বেছে নেবে। মোবাইল ডিভাইসের প্রসার হওয়ার আগে টি-স্টল, বাজারে এই ধরনের বিনোদন উপভোগ করতেন শ্রমজীবী মানুষেরা। যে জয়নুল আবেদীন তার চিত্রকলায় দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন, সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, তাঁর মাথায়ও ওই পুঁজি বা মূলধনের ব্যাপারটা কেন আসেনি ভেবে অবাক হই! আর মামুনুর রশীদ হিরো আলমকে যেভাবে রুচির দুর্ভিক্ষের কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন, তাও বিস্ময়কর! তাঁর নাটকও তো ওই জনসাধারণকে ঘিরেই!
সমাজে যেমন নানা শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে সভ্যতার অগ্রগতির সাথে, তেমন সংস্কৃতিরও নানামুখী রূপ সৃষ্টি হয়েছে। হিরো আলম বাংলাদেশের পপুলার কালচার বা জনসংস্কৃতির প্রতীক, যেমন করে শাহরুখ খান ভারতের জনসংস্কৃতির প্রতীক। হিরো আলম এইভাবে চিরদিন জনপ্রিয় থাকবেন না, যেমন করে মান্না ও ডিপজলও নেই। তাই রুচির দুর্ভিক্ষের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। আপনার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, আর্থসামাজিক সূচকের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় আপনার বিনোদনের নায়ক হিরো আলম হবেন নাকি সিয়াম আহমেদ হবেন। কিউবার মতো দেশে হিরো আলমরা কেন তৈরি হয় না, বাংলাদেশে কেন হয় তার কারণ খোঁজে বের করলেই রুচির দুর্ভিক্ষের জন্য কারা দায়ী তা বের করা সহজ হবে। লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক
আপনার মতামত লিখুন :