আরিফ জেবতিক: ‘নুন ভাত’Ñএর ‘গরিবের ডাইল-ভাত’ এর স্লোগান থেকে এই যে প্র্যাকটিক্যালি গরিব এখন ‘মাছ-মাংস-চাউল’ এর স্বাধীনতার কথা বলার পর্যায়ে এসেছে, এটাই গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের মহান অর্জন। যারা একেবারেই তরুণ, তাঁরা দয়া করে তাঁদের পিতাকে জিজ্ঞেস করলেই জানবেন যে এই মাত্র কয়েক দশক আগেও এই দেশে মঙ্গা বলে একটি শব্দ ছিল। মঙ্গা মানেই নীরব দুর্ভিক্ষ। এমনকি আমাদের সিলেটের মতো তুলনামূলক স্বচ্ছল জেলাতেও ‘কার্তিক্যা’ নামের নীরব দুর্ভিক্ষ আশ্বিন-কার্তিক মাসে লেগে থাকত।
খুব অবস্থাপন্ন কৃষক ছাড়া গ্রামের বাকিরা ফ্যান আর ঘ্যাট কচু দিয়ে কোনো রকমে একবেলা খেয়ে এই সময়টা পার করেছে। আজকে যখন ফার্মের মুরগির দাম বেড়ে গেছে, গরিবে কীভাবে মুরগি খাবেÑএটি নিয়ে ফেসবুকে হাহাকার দেখি, তখন মনে পড়ে এই আশির দশকেও বাড়িতে জামাই এলে মুরগি জবাই করা হতো, মুরগি এরকম বিলাসী পণ্য ছিল মধ্যবিত্তের ঘরেও। গরিবে কোরবানির ঈদে টুকিয়ে পাওয়া গরুর মাংস ছাড়া গরিবে কোনো কালেই এই বাংলায় মাংস কিনে খেতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না।
আমি প্রথম আলোর মুছে ফেলা নিউজটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। কারণ ছোট বালকের মুখে এমন কাব্যিক স্লোগান তুলে দেওয়াটা যে বেশিবেশি হয়ে গেছে, সেটা প্রত্রিকার লোকজনই সম্বিত ফিরে পেয়ে বুঝতে পেরেছে এবং নিউজ সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সার্বজনীন ‘মাছ-মাংস’ খাওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখতে পেরেছি, গরিবে মাছ-মাংস-ডিম খেতে পারছে না বলে আমরা যে হাহাকার করছি-এর সবগুলোকেই আমি পজেটিভ ভাবে দেখি। এই হাহাকার তৈরি হওয়া মানে এই মাছ-মাংস-ডিম-চাউলের স্বাধীনতার সম্ভাবনা আমাদের মনে উঁকি দিচ্ছে। ৭১ থেকে ২০২৩ জংলা কাদাভূমি থেকে এই দেশ একটু একটু করে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।
হ্যাঁ, হয়তো প্রত্যাশার তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ সময় লাগছে। একটি মেধাহীন, পুষ্টিহীন, শিক্ষাহীন, দক্ষতাহীন, যার অধিকাংশ রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নেতাই চোর, সেই জনগোষ্ঠির কাছ থেকে এর চেয়ে দ্রুত গতি আশা করাটাও হয়তো বাস্তব সম্মত নয়। তবু আমরা এগিয়েছি অনেক। আমরা আরও এগোবো। এই দেশের প্রতিটি মানুষ ‘মাছ-মাংস-চাউল’ এর সক্ষমতা অর্জন করবে, এ আমরা আমাদের জীবদ্দশাতেই দেখে যাব ইনশাআল্লাহ। মহান স্বাধীনতা দিবস অমর হোক। যে পিতৃপুরুষরা বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের এই ভূখণ্ড দিয়ে গেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করছি। লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :