ইমতিয়াজ মাহমুদ: ভাস্কর শামীম সিকদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বিদায়ে শোক প্রকাশ করছি। আপনজনের বিদায়ে যে রকম শোক, সেইরকম শোক অনুভব করছি। কোনোদিন কখনো পরিচয় হয়নি তাঁর সাথে। আমি দেখেছি তাঁকে টিএসসির সামনে স্বোপার্জিত যখন বানাচ্ছিলেন তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আর আমার মতো পথ চলতি লোকজন অবাক বিস্ময়ে মুগ্ধতার সাথে দেখতো প্যান্ট-শার্ট পরা বিড়ি খাওয়া শামীম সিকদার কাজ করছেন ঠুক ঠুক করে। লোকের এই মুগ্ধ বা বিস্মিত দৃষ্টি তাঁকে খুব একটা স্পর্শ করতো বলে কখনো মনে হয়নি।
ভাস্কর্যই করতেন। তাঁর একটা শিল্পকর্ম স্বোপার্জিত স্বাধীনতা টিএসসির সামনে রয়েছে সেটা তো চেনেন সবাই। শিল্পের অন্যান্য শাখায় কিছু করেছেন কিনা জানিনা। ভাস্কর্য পড়েছেন বুলবুলে। চারুকলা অনুষদ তখন আর্ট কলেজ ছিল, সেখানে শিক্ষকতা করেছেন। নারীবাদ কথাটা তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আজকের মতো আলোচিত হতো না। নারী অধিকারের আন্দোলন করতেন যারা ওরা সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলোর লাইনে বা এনজিও ধরনের সংগঠন করে কাজকর্ম করতেন। মহিলা পরিষদ তখন অগ্রণী নারী সংগঠন ছিল, এছাড়া আরও কয়েকটা সংগঠন ছিল যারা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতো।
শামীম সিকদার সেইরকম কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্ভবত জড়িত ছিলেন না। আমি খোঁজ নিয়েছিলাম, কেউ বলতে পারেননি। কিন্তু নারীর অধিকার সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন এবং সেই নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট ছিল। পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইটা তিনি নিজের মতো করেই করেছেন, পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নারীর জীবনযাত্রার ধরণ বা সীমিত ভূমিকার মধ্যে তিনি যে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি সেটা তো সকলেই জানেন। বাংলাদেশে নারীবাদের তসলিমা তরঙ্গের সূচনাকালে তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে যখন মৌলবাদী ও সরকারি হামলার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তখন তিনি তসলিমা নাসরিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নিঃসঙ্কোচে।
শামীম সিকদারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। কিন্তু শোকের চেয়ে যেই কথাটা আপনাদেরকে জানিয়ে রাখতে চাই, শামীম শিকদার বাংলাদেশে জন্মেছিলেন বলে আমার গর্ব হয়। আমি কল্পনা করি, প্রত্যাশা করি, আমাদের মেয়েদের মধ্যে আরও অনেকেই নিজের জীবনে এইরকম দুরন্ত দুঃসাহসী স্পর্ধায় পিতৃতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ওই সাহস ও স্পর্ধাÑ সেইটা জরুরি। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :