শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০২২, ০২:৪০ দুপুর
আপডেট : ২৮ এপ্রিল, ২০২২, ০২:৪০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : এ কলামেই ‘উপজেলা-ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের প্রস্তাব’ করেছিলাম, অবশেষে সরকার ... ..

দীপক চৌধুরী : অবশেষে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করার জন্য সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

আমাদের সময় ডটকমের ‘নির্বাচিত কলামে’ সরকারের কাছে আমি প্রস্তাব দিয়ে লিখেছিলাম, “প্রত্যেক মন্ত্রী-এমপির নির্বাচনি এলাকাসহ প্রতিটি উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন জরুরি।” ১২-০৬-২০২১  তারিখে এটি প্রকাশ হয়েছিল। 

কেনো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন জরুরি এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিলাম লেখায় । লিখেছিলাম, আওয়ামী লীগ দলীয় এলাকার প্রত্যেক সংসদ সদস্যের দায়িত্ব হবে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা। প্রত্যেক মন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকা, ইউনিয়নে সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে ঘিরে নির্ধারিত আলোচনা সভার স্থান  করার জন্য নান্দনিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন। সেখানে সেমিনার, টকশো, কুইজ, চিত্রাঙ্কন, রচনা, বক্তৃতা, নাটকসহ নানারকম আয়োজন করা হবে। (সূত্র: প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুর দেশে’, পৃষ্ঠা-১০১)

২৬ এপ্রিল, ২০২২ তারিখ দেশের ইউনিয়ন পরিষদসমূহে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন, ইউনিয়নের  গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য  জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনা  দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার এক চিঠিতে এই নির্দেশনা  দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক পত্রের আলোকে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে জানানো হয়।

২০২০ সালে দেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় হেফাজতে ইসলাম ও উগ্রবাদীরা হঠাৎ বছরের শেষের দিকে সারা দেশে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনে সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করে। তারা  বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার হুমকি দিয়ে মাঠে নেমেছিল, যা অব্যাহত ছিল ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচালের যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পর্যন্ত। 

তবে এখনো যেটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হচ্ছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের নামে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ঔদ্ধত্বপূর্ণ হুমকি। অবশ্য, এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এদেশের মানুষ। 

গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধাপ্রদান করা হয়েছিল। এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছিল চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। হয়তো তারা আপাতত ঘাপটি মেরে আছে সমাজে। এখন ভাস্কর্যের বিষয়ে নিরব থাকলেও বিভিন্ন  মোড়কে সাম্প্রদায়িক ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে। এ অপশক্তির ব্যাপারে আমাদের জাগ্রত থাকতে হবে। 

পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ সকল মুসলিম প্রধান দেশেই ভাস্কর্য আছে, যা নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ইতিহাসের মহানায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রাণকেন্দ্র হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্য রয়েছে। যেগুলোকে পৌত্তলিকতা বা মূর্তি আখ্যায়িত করে অপসারণের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেননি সে দেশের কট্টরপন্থীরা। 

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতিকে এক অনন্যসাধারণ সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী তাঁর অপরাপর সহযোগীরা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা মুছে ফেলে ধর্মের নামে হত্যা সন্ত্রাসের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে বৈধতা দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির যে ‘সাম্প্রদায়ীকরণ’ প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছিলেন সেই অভিশাপ থেকে আমরা  আজও মুক্ত হতে পারিনি। 

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি সেই সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পালন করেছে স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। জাতির পিতার খুনি রশিদ-ফারুক-মেজর হুদা  গং দিয়ে ফ্রিডম পার্টি করেছেন এরশাদ। খালেদা জিয়া পবিত্র পার্লামেন্টে খুনি রশিদকে বিরোধি দলের চেয়ারে বসিয়েছিলেন।  বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন, বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া, দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া ও সংসদে বসানোর পর আর কী বাকি থাকে? বাংলার জনগণ এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, নিন্দা জানিয়েছে, আন্দোলন- সংগ্রাম করে জীবন দিয়েছে।    

তবে এটা অনেক বড় বিষয় যে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী  দেশরত্ন শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসায় এদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও মানবাধিকার হরণকারীদের বিচার করা হয়েছে ও হচ্ছে। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে পেরেছি। 
 উল্লেখ্য, ১১ এপ্রিল ২০২২ “বঙ্গবন্ধুর দেশে” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. ফাহিম হাসান শাহেদ প্রমুখ।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়