শিরোনাম
◈ হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট, ভারত থামলো ৩৭৬ রানে ◈ অস্ট্রেলিয়ার তা-বে উড়ে গেলো ইংল্যান্ড  ◈ নারী দলের লঙ্কান কোচকে ২০ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ◈ দিল্লিতে এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার রুপিতে ! ◈ অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেফতার (ভিডিও) ◈ খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা-সংঘর্ষ, গুলি (ভিডিও) ◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২২, ০৯:৫৪ সকাল
আপডেট : ২০ মে, ২০২২, ১১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপি নির্বাচনে না এলে কী হতে পারে?

দীপক চৌধুরী

দীপক চৌধুরী: প্রায় এক যুগ ধরেই মানুষ শুনে আসছে সরকার পতনের ‘গল্প’। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো ‘সরকার পতনের’ নানারকম হুমকি দিয়েছে। সময়-সুযোগ মতো হুমকি দিয়েছে জাতীয় পার্টিও, বহুবার এমন হুঙ্কার দিয়েছে  হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল। বাস্তবতা হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি ওরা। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কিছুই হয় না।   
এখন বিভিন্ন ‘আঁতেল’ রাতের টিভি টকশোতে বলার চেষ্টা করছেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য খুবই দরকার। ‘বিএনপি-বিহীন’ নির্বাচন হবেই না। একজন তো সম্প্রতি একটি টিভি  টকশোতে বলেই ফেললেন, ‘শেখ হাসিনা কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বলেছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে।’ ওরে মা-রে কী ভয়ংকর রকম মিথ্যাচার! কেউ চ্যালেঞ্জ করে না। উপস্থাপিকাও এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলেন না। বরং আওয়ামী লীগ নেতাকে একের পর এক আক্রমণাত্মক প্রশ্ন করলেন। মানুষ মনে করে, এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য অন্তত টকশোতে প্রচার করা ঠিক নয়। যাঁরা একসময়  টকশোকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন, যুক্তি দিয়ে কথা বলতেন, আলোচনার বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখতেন, সেসব প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ আলোচককে এখন অতিথি হিসেবে  দেখাই যায় না। রাত জেগে শুনলেও সেসব আলোচনায় মানসিক খোরাক যোগাতো।     

নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিন কথা চলছে। বক্তৃতা, ভাষণে, সেমিনারে, টকশোতে নানাকথা। সরকারের বিপক্ষে আলোচনা যেন মজার বিষয়। একশ্রেণির টিভিতে অযৌক্তিকভাবে সরকারকে দোষারোপ করা ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। ‘কী করিলে কী হবে’ এমন পরামর্শ দেয়া দূরের বিষয়। সংসদে ‘শক্তিশালী বিরোধীদল নেই’ এটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু সমালোচনার একটা যৌক্তিক জায়গা দরকার। মিথ্যাচার কেন?  যাতে জনগণ উপকৃত হয় সেই সমালোচনা দরকার। সরকার ভুল করলে শোধরানোর যেন সুযোগ পায়। কিন্তু দেশে যেনো এর উল্টোটাই আমরা প্র্যাকটিস করছি। কিছু লোক জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে। 

কী রকম কথা! বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র রায়, নজরুল ইসলাম, আমির খসরু মাহমুদ, আমানুল্লাহ আমান, ডা. শাহাদাত, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুন্নবী সোহেল, অ্যানি, শ্যামা ওবায়েদরা বলেই চলেছেন বিএনপি ছাড়া এদেশে নির্বাচন হতে দেবেন না। এরমধ্যে টকশোতে বলানো হচ্ছে, ‘বিএনপিবিহীন’ নির্বাচন করা ঠিক হবে না- এর মানে কী?

টিভির টকশোতে কারো কারো মুখে আবার আন্তর্জাতিক গন্ধও শুনি। অতীতেও বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের দাওয়াত সাজিয়ে নানা কল্পকাহিনী প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া-পরিবেশ নিয়ে  ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত একরকম কথা বলেন আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার উন্নয়নের ম্যাজিক দেখেন।  

এবার, গ্রাম-গঞ্জে হাট-বাজারে সাধারণ মানুষের মুখে উল্টো কথা শুনি। তারা অনুমান করেন, বিএনপি না এলে নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি দেখেছি। গত ২০১৮-এর ৩১ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন দেখেছে জনগণ। দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে ২০২২-এ এসে মানুষের মনে প্রশ্ন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করে তাহলে কী নির্বাচন হবে না দেশে? না হওয়ার কী আছে! মারামারি-কাটাকাটি, খুনোখুনি, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, অবরোধের ডাক? জনগণ এসব তো কখনো চায় না।  মানুষ শান্তি চায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে,  ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে হেফাজতের মহাতাণ্ডবের মদদদাতা জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি। হেফাজতের মাজা ভেঙ্গে গেছে। জামায়াতে ইসলামী দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে এখন চলছে। বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেশবাসী পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে সহিংসতা বাড়বে! অস্থিরতা বাড়বে। মৌলবাদী সন্ত্রাসের উত্থান ঘটবে। হয়তো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বাড়বে। কিন্তু দেশের মানুষের শান্তির জন্য যে ধরনের রাজনীতির কামনা মানুষের, এর কী হবে? আর, সরকার কী তখন দর্শকের মতো বসে থাকবে? অশুভ শক্তির পুনরাবৃত্তি আর মহাতাণ্ডবের সুযোগ  দেবে বলে মনে হয় না।      

যারা নির্বাচনের মাধ্যমে  ক্ষমতা পরিবর্তনে  বিশ্বাস করে না, যারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করে;  তারা স্বাভাবিক রাজনীতি ও স্বাভাবিক পরিবেশে আস্থা রাখবে কেনো?  এসব দল  তো ঘোলাপানিতে মাছ ধরতে চায়। এটাই এসব দলের চিন্তা ও কৌশল।  সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি আমলের নির্বাচন এতটাই কলুষিত  যে এ নিয়ে তাদের কথা বলার  কোনো অধিকার  নেই।’ বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস যারা ঘাটাঘাটি করেন তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, বিএনপির জনক জিয়াউর রহমান কীভাবে দল গঠন করেছেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে গায়ের জোরে গঠন করা দল কী কখনো জনগণের দল হতে পারে? গণতান্ত্রিক আইন ভঙ্গ, সেনা আইন ভঙ্গ করে দল করা বেআইনি কর্ম, এটা প্রমাণিত। ১৯৭৮ এর হাঁ-না ভোট, ’৭৯-এর সংসদ নির্বাচন কীভাবে করা হয়েছিল এর গল্প শোনার সুযোগ হয়েছে  সেই সময়কার প্রশাসনে কর্মরত ডিসি-এসপির মুখ থেকে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা কত অসহায় ছিলেন সেসময়!  

মনে থাকার কথা, পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে কানাডার  ফেডারেল  কোর্ট। সম্ভবত, ২০১৭-এর ২৫ জানুয়ারি ফেডারেল  কোর্টের বিচারক  হেনরি এস ব্রাউন এই রায়  দেন। বিএনপি সম্পর্কে দুনিয়ায় এমন খবর দ্রুত পৌঁছে গেছে।  

দেশের রাজনীতিতে নানারকম ইস্যু সৃষ্টি হয়, উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে এর পর মিলে যায়।  ভালো কাজ  থেকেই যায়, কারণ ভালো কাজ মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মানুষ খারাপ কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করে। মাঝেমাঝেই আমরা দেখি, পরিবেশ নিয়ে কোনো কোনো  পরিবেশবাদী মাঠ গরম করে ফেলেন। কিন্তু লক্ষ্য করেছি, ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজত রাজধানীর মতিঝিল-দিলকুশায় যে রকম ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো, যেনো মতিঝিল-দিলকুশা এলাকাকে ধর্ষণের পর ছিন্নভিন্ন করে  দেওয়া হয়েছিল, মেরে ফেলা হয়েছিল।  তখন কিন্তু পরিবেশবাদীরা ‘চুপ’ ছিলেন। তারা বিক্ষোভ-আন্দোলন করে মতিঝিল-দিলকুশার সৃষ্টি করা ক্ষত সারিয়ে পুননির্মাণ করে দিতে  হেফাজতকে বাধ্য করা যেতো। 

দশম নির্বাচনকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। আন্দোলন-অবরোধের নামে বর্বরতা দেখেছে মানুষ। কত নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপে কত অসহায় গাড়ি-ট্রাকচালককে হত্যা করা হয়েছে, কত মাকে বিধবা করা হয়েছে, কত সন্তানকে এতিম করা হয়েছে, কতশত মানুষকে আহত-পঙ্গু করা হয়েছে-  এসবের হিসেব আছে কী? এসবের বিচার কী হয়েছে? শোনা যায়, এবার নাকি সরকার ভীষণ কঠোর হবে।
এটা অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না যে,  ‘সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কাগজের ব্যালটে বা ইভিএমে  ভোট গ্রহণ করার সুযোগ আছে।’ খেয়াল রাখতে হবে যে, অবশ্যই বলা নেই, ‘ইভিএমে ভোট করা যাবে না। ’

যারা বলে থাকেন নতুন ইভিএম  কেনার বিষয়েও ইসিতে এখনো  কোনো আলোচনা হয়নি- তারা কোন্ গ্রহে বাস করছেন আমরা জানি না। ইতিহাস কীভাবে পথ সৃষ্টি করে এর ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে। ইতিহাস কীভাবে পাল্টে সত্যের জায়গায় ফিরে আসে এরও ভুরিভুরি প্রমাণ আছে।  ইভিএম নিয়ে সন্দেহের জায়গা দূর করা কঠিন। যেখানে দেশের ক্ষতি করে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার চিন্তা সেখানে এটা অসম্ভব। 
 

বর্তমানে দেশ স্বাভাবিক অবস্থানে রয়েছে! বাংলাদেশও কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছে। সময়মতো সেই অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি।   আমাদের দেশ এমন এক জায়গায়  পৌঁছেছে, তাতে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মত দূর্বল অর্থনীতির  দেশের সঙ্গে তুলনা চলে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান দুই  দেশের অর্থনীতির  যোগফলের সমান। এটাই বাস্তবতা। 

হিসেবের খাতায় স্পষ্ট হয়ে আছে, ১৩ বছর ধরে  দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে  পোশাক রপ্তানি,  রেমিটেন্স প্রবাহ ও ধান উৎপাদন  বেড়েছে। বাংলাদেশের   বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার রিজার্ভের সমষ্টির দ্বিগুণ। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। 

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়