শিরোনাম

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২২, ০২:৪৫ রাত
আপডেট : ২০ মে, ২০২২, ১১:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গাফ্ফার চৌধুরী আমাকে বলেছিলেন, দারিদ্রতার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধু লেখক হয়ে ওঠো

মো. গোলাম সারোয়ার

মো. গোলাম সারোয়ার: মহাকাশে আমাদের কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর জনকণ্ঠে আমি একটি উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছিলাম, যা সরকার উৎকৃষ্ট কলাম হিসেবে নির্বাচিত করে আমাকে অর্থ সম্মানিও দিয়েছিলেন। সে কলাম পড়ে জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরি আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমাকে দিয়ে হবে। তিনি আমাকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, তুমি চাকরিবাকরি ছেড়ে দাও। চাকরি করার জন্য দেশে বহু ছেলে আছে। তুমি দারিদ্রতার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধু লেখক হয়ে ওঠো। তোমার সব অর্থ, বিত্ত, সম্মান, আকাশ জোড়া পদ মর্যাদা তোমার মৃত্যুর পর শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু যদি লিখো তবে তুমি বেঁচে থাকবে। 

আমি উনাকে না বলার সাহস পাইনি। কিন্তু আমার বৃহৎ পরিবারের কথা মাথায় রেখে আমি সাহস করে পরিপূর্ণ সাংবাদিক, লেখক কিংবা কবি হয়ে উঠতে পারিনি। তবে আমার সব সময় স্বপ্ন ছিলো যখন আমার ভাইয়েরা আরো শক্তপোক্ত হবে তখন আমি সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে স্টাডি রুমে ঢুকে যাবো। উনার মতো শুধু লিখবো আর পড়বো। বাঙালি গত কয়েক বছর আগে থেকে তার কালপুরুষদের হারাতে শুরু করেছে। এটি হলো জাতির ক্ষয় রোগের সময়। জাতি ক্রমান্বয়ে মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতি কত যুগ পরে পুষবে আমরা জানি না। বুদ্ধিজীবী হত্যার পর জাতির যে ক্ষতি হয়েছিলো এঁরা সেই ক্ষতি জাতিকে পুষিয়ে দিয়েছিলো। বর্তমান জেনারেশন কি এঁদের ক্ষতি পোষাতে পারবে ?

আমাদের কালপুরুষদের একে একে মৃত্যুর পর সবাই শোক জানিয়ে লিখেছে এবং লিখে। আমি কখনো লিখিনি কাউকে নিয়ে। এর কারণ এই নয়, আমি কাউকে মিস করিনি। আমি নিবিড়ভাবে মিস করি। তবুও আমি লিখিনি। কারণ আমি জীবিত মানুষ নিয়ে কাজ করি। মৃতদের নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এরও কারণ আছে। আমার পৃথিবীর সবচেয়ে মহান দুটো লাশ আমি নিজের হাতে সমাহিত করে এসেছি আমার বাড়ির সামনে। এরপর পৃথিবীর কোনো মৃত্যু আমাকে স্পর্শ করে না। তবুও জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আমার হৃদয় কেঁপে উঠেছে। উনিসহ আমাদের সব কালপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। উনাদের এই তিরোধানে আমাদের যে জাতিগত মেধার শূন্যস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সেটা এই জেনারেশন পূরণ করবে সে আশা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়