হাসান মোরশেদ: ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি বড় হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ, বন্যা ও নদীভাঙ্গনের তাণ্ডব বেড়েছে এই বছরগুলোতে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন যদি ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়ে, সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে ১ মিটার। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ তলিয়ে যাবে। আমাদের সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘কৌশল ও কার্য পরিকল্পনা ২০০৯’ গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় দুটি তহবিলও গঠন করা হয়েছে- বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল আমাদের নিজেদের অর্থায়নে আর বাংলাদেশ জলবায়ু সহনশীলতা তহবিল উন্নয়ন অংশীদারিদের সহযোগীতায়। অবশ্য উন্নয়ন অংশীদারদের হতে আমরা অতি সামান্যই সাহায্য পেয়ে থাকি’।- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা [সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯। Council on Foreign Relations- এর আলাপে]
বৃহত্তর সিলেট, রংপুর অঞ্চলে বন্যা কিংবা দক্ষিণবঙ্গে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসকে কেবল স্থানীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা ভুল। সিলেট নগরীতে ড্রেন ঠিক আছে কিনা, ড্রেনে মানুষ ময়লা ফেলে কিনা- এসব হলো তুচ্ছ আলাপ। সিলেট অঞ্চলে প্রবাহিত প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ জলধারা। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি স্রোত ও পলি এই নদীগুলো বহন করে মেঘনা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে, মেঘনা মিশেছে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বন্যা শুধু সিলেটে না, বন্যা হচ্ছে আসামের ডিমাহাসাও জেলা এবং মেঘালয় রাজ্যেও। সিলেটের উত্তর এবং পূর্ব দুই অংশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার সিলেট। মেঘালয় এবং আসাম দুই রাজ্যেই বিপুল পরিমাণ বন উজাড়, পাহাড় কাটা এবং কয়লা/পাথরের জন্য ওপেন মাইনিং চলে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক তীব্র গতিতে সুরমা কুশিয়ারায় পাহাড়ী স্রোত ও পলির চাপ পরে। এদিকে সুরমা কুশিয়ারায় ড্রেজিং নাই, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলো বিপুল পানি ও পলি বয়ে নিয়ে মেঘনায় পৌঁছে দিতে পারছে না। এদিকে মেঘনার কাছাকাছি ইটনা মিঠামইনের হাওরে বানিয়ে ফেলা হয়েছে ‘পর্যটন সড়ক’। কোনো সংকটই একক নয়, বিশেষ করে জলবায়ু সংক্রান্ত সংকটগুলো। আমাদের নিজেদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথেও এ সংক্রান্ত আন্তরিক সমঝোতা। সিলেটের নদী খনন, আসাম ও মেঘালয়ের প্রকৃতি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা না গেলে এই অঞ্চলে এমন দুর্যোগ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
লেখক ও গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :