রুমী আহমেদ: পুরো ব্যাপারটা একটা বিশাল কালচারাল শকের মতো ছিলো অনেক গুলো কারণে। প্লেব্যাক সঙ্গীত ছিল চলচ্চিত্রের অঙ্গনের ব্যাপার- টিভি নাটকের না। আর প্লেব্যাক হিসেবে কনভেনশন বা আধুনিক গানের ট্র্যাডিশন ভেঙে রবীন্দ্রসংগীতের কথা কারও কল্পনাতেও আসেনি। তখন পর্যন্ত জেনারেলি বলতে গেলে রবীন্দ্রসংগীত রেডিওতে সীমাবদ্ধ ছিলো। শুধু তাই না, যে রবীন্দ্র সংগীতটি টিভির নাটকটিতে প্লেব্যাক হলো যে গানটি মানুষ আগে কখনো শুনেনি। আর অদ্ভুত ভরাট নারী কণ্ঠে যিনি গানটা গাইলেন তাঁর নাম অধিকাংশ মানুষ আজই প্রথম শুনলো। ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পরে আলো’Ñ হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এই সব দিন রাতি’ তে ছাদের উপর বসে রেজওয়ানা চৌধুরীর কণ্ঠে লিপ সিঙ করেন শাহানা চরিত্রে শিল্পী সরকার অপু। ওই মনে হয় টিভির নাটকের ইতিহাসে প্রথম ব্যাকড্রপে রবীন্দ্র সংগীতের ব্যবহার। এই গানটাই- চাঁদের হাসি। এই গানটা টিভির ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন মোমেন্ট।
সেদিন থেকে এপার বাংলা আর ওপার বাংলা আর আগের মতো রইলো না। রবীন্দ্রসংগীত টিভির একটা অত্যাবশ্যকীয় এসেনশিয়ালে পরিণত হলো। ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পরে আলো’ এর পর অবশ্যই বলতে হবে দিলরুবা খানের কণ্ঠে আরেক অমর টিভি প্লেব্যাকÑ ‘দুই ভুবনে দুই বাসিন্দা বন্ধু চিরকাল, রেললাইন বহে সমান্তরাল’। একটা বিশাল বটগাছের নিচে আউটডোর লোকেশনে অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফির নৈপুণ্য। প্রথম দিককার আরও কয়েকটি প্লেব্যাকের কথা না বললেই নয়, সংশপ্তক ধারাবাহিকে তপন চেধুরীর কণ্ঠে ‘দমই জীবন দমই মরণ সবই দমের খেলা’ অথবা অয়ময় ধারাবাহিক নাটক এ ‘আসমান ভাইঙ্গা জোছনা পড়ে, আমার ঘরে জোছনা কই? আমার ঘরে এক হাঁটু জল পানি তে থৈ থৈ। নিশি রাইতে সবাই ঘুমায় আমার চোখের...’।
তারপর তো হুমায়ূন আর শাওনের কিছু মাস্টারপিস তো আছেই-‘লীলাবালি’ ‘ভ্রমরও কইও গিয়া’ ইত্যাদি। তবে সব কিছুর শুরু কিন্তু ওই ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পরে আলো’। আমরা যেন আমাদের এই কালচারাল মাইলস্টোনগুলো মনে রাখি। আর আমাদের এই সব যিনি দিয়ে গেলেন, সেই হুমায়ূন আহমেদকেও আমরা যেন মনে রাখি। লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :