শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২২, ০৩:৫৯ রাত
আপডেট : ১৩ মে, ২০২২, ০৩:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খান আসাদ: আরেকটু সাহসী হবেন বিশ্বাস প্রকাশে, পরীমনিদের মতো

খান আসাদ: আমার পুত্রবধূ, সোফিকে ছবিটা পাঠিয়েছি হোয়াটসআপে। ওকে বলেছি গর্বের সাথেই, ‘এটা এক বাঙালি মেয়ের ছবি। বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে’। শরীরের ‘সত্য’ জানা ও তা প্রকাশের জন্য শুধু সমাজবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বা নন্দনতত্ত্বের বিকশিত বোধ যথেষ্ট নয়, সত্য প্রকাশের সাহস দরকার। ছবিটি সেই সাহসের বার্তা, একটি মৌলবাদী ধর্মান্ধ সমাজে। সোফি পিএইচডি করছে, আমার ভাষায় ‘শরীরের রাজনীতি’ নিয়ে। শরীরের ‘সত্য’ এবং শরীরের নন্দনতত্ত্ব নিয়ে মানুষের জ্ঞান খুব যে বিকশিত হয়েছে, তা মনে করার কারণ নেই। শরীর নিয়ে যাদের বিজ্ঞানবোধ রয়েছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রদের, সেখান মূলত দর্শন ও নন্দনতত্ত্ব নেই, রয়েছে প্রকৃতিবিজ্ঞান। ফলে, সোফি ‘শরীর ও সমাজ’ এর আন্তঃসম্পর্ক বা ক্ষমতাসম্পর্ক নিয়ে যে কাজ করছে, সেটিকে মূল্যবান মনে হয়। জানি না, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রদের ‘শরীরের রাজনীতি’ নিয়ে উৎসাহ আছে কিনা। 

শরীরের রাজনীতির সাথে ভাষার একটি সম্পর্ক আছে। সম্প্রতি আমি ‘পর্দা’ বিষয়ে কোরানের আয়াতসমূহ ইংরেজি ও বাংলা দুই মিলিয়ে পড়েছি। একটি অবাক করা বিষয়, ইংরেজিতে যা প্রাইভেট পার্টস বা ‘ব্যক্তিগত অঙ্গ’, বাংলাভাষায় সেগুলির অনুবাদ ‘লজ্জা স্থান’ ও ‘যৌন অঙ্গ’। কি অদ্ভুত! বাংলায় দুটো শব্দই সম্পর্কিত বডিশেমিং ও যৌনবাদী, পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্বের, ঠিক লিংগিয় মতাদর্শ নিরপেক্ষ নয়। আজকে আপনারা যে এই ছবিটির বিপক্ষে অসংখ্য ‘ইসলামী’ সমালোচনা বা ঘৃণা দেখছেন, সেটির একটি উৎস শরীর সম্পর্কে বাঙালির সামাজিকায়নের বা শিক্ষার ভাষাও। নারীমুক্তি বা নারী-পুরুষের সমানাধিকার ও সমমর্যাদা চাইলে, আপনাকে ‘শরীরের দর্শন’ যে ভাষায়, সেই ভাষা নিয়েও কাজ করতে হবে। 

ভাগ্যিস পরীমনি কোনো ‘বিপ্লবী’ পার্টি করেননি। তাহলে, নির্ঘাত বয়স্ক নেতাটি যথেষ্ট অভিভাবকত্ব নিয়ে প্রপিতামহের কণ্ঠে বলতেন, ‘এই সব ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া ‘পশ্চিমা অপসংস্কৃতি’। ভাগ্যিস, পরীমনি বাংলাদেশের প্রথাগত নারীনেত্রীদের পরামর্শ শোনার অবস্থায়ও নেই। থাকলে, কোনো এক নেত্রী হয়তো খালাম্মার আবেগ নিয়ে বলতেন, ‘দ্যাখো পরী মা, বাংলাদেশে এখনো এই সব ছবি গ্রহণ করার মতো অবস্থায় আসেনি’। ঠিক, বাংলাদেশের সমাজ সেই অবস্থায় আসেনি। সেই ধরনের একটি মুক্ত, মানবিক, স্বাধীন, নান্দনিক বোধের অবস্থায় আনার জন্য যে সাহস দরকার, দুঃখের ব্যাপার সেটি আমাদের প্রচলিত ‘বিপ্লবী’ বা ‘নারীবাদী’ নেতৃত্বের এখনো জন্ম নেয়নি। কিন্তু সমাজপ্রগতি তো কোনো আনুষ্ঠানিক নেতার হাত ধরে আসে না, ঘটে সমাজের সাধারণ অনেক মানুষের অসাধারণ সব উদ্যোগে। 

আশা করবো, ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল, সামন্তসংস্কৃতির লেজুড়বৃত্তি নয়। জীবনের, ধর্মের, রাজনীতির, এবং শরীরের ‘সত্য’ নিয়েও সাহসের সাথে কথা বলবেন, হে প্রিয় বিপ্লবী ও প্রগতিশীলগণ। আশা করছি, আপনারা বিলিয়মান বাস্তবতায় আটকে না থেকে উদীয়মান বাস্তবতা অনুধাবন করবেন, সেই আগামীকে স্বাগত জানাবেন। আরেকটু সাহসী হবেন বিশ্বাস প্রকাশে, পরীমনিদের মতো। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়