শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২২, ০১:৩১ রাত
আপডেট : ১৩ মে, ২০২২, ০১:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রহমান বর্ণিল: শ্রীলঙ্কা সংকট থেকে যারা দিবাস্বপ্নে বিভোর!

রহমান বর্ণিল: শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে বাংলাদেশেও এরকম হবে বলে যারা আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন তাদের জন্য ভয়াবহ দুঃসংবাদ হলো বাংলাদেশে অদূর কিংবা সুদূর ভবিষ্যতেও আপনাদের এরকম পরিস্থিতি দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বড় অর্থনীতির দেশ চারটি- বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে কেবল ভারত। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে তাদের দুই দেশের জিডিপি যোগ করলেও বাংলাদেশের ডিজিপি তার চেয়ে বড়। এমনকি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের রপ্তানির চেয়েও বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে আমাদের অবস্থান বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ চুয়াল্লিশ বিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সম্মিলিত রিজার্ভের দ্বিগুণ। এছাড়া যেখানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১২শতাংশ সেখানে শ্রীলঙ্কার ঋণ জিডিপির প্রায় ৪৮শতাংশ। শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ ১৬৫০মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশের ২৯২মার্কিন ডলার। সবচেয়ে বড় কথা শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণে সুদের হার যেখানে গড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সেখানে আমাদের ঋণে সুদের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। 

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হচ্ছে পর্যটন শিল্প। সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্সের উৎসও এটি। করোনা মহামারীর কারণে দেশটির রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বড় এই খাতটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে বৈদেশিক অর্থায়নে তৈরি হওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণদাতা দেশগুলোকে সুদ দিতে দিতে রিজার্ভ এসে নেমেছে শূন্যের কোটায়। যেখানে বাংলাদেশে বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ চুয়াল্লিশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হবে মর্মে যারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এবার তাদের জন্য ভয়াবহ আরেকটা দুঃসংবাদ দিই। চলতি অর্থ বছরের এখনো দুই মাস অবশিষ্ট থাকতেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যটন শিল্পই যেখানে ছিল শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স অন্যতম উৎস, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শ্রম রপ্তানি, তৈরি পোশাক এবং কৃষি ও কৃষি পণ্য রপ্তানি খাতে নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হচ্ছে। আপনাদের স্বপ্ন কোনো দিক থেকেই বাস্তবে ধরা দেওয়ার সম্ভাবনা রইলো না।

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অযৌক্তিক খাতে বিনিয়োগে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করেছে শ্রীলঙ্কা। হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে বানানো বড় বড় প্রকল্পগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। আন্তর্জাতিক বন্ডমার্কেট থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়েছে। সেটার মাল্টিপল ইফেক্ট পড়েছে অর্থনীতিতে। বিদেশি বিনিয়োগের আশায় বৈদেশিক ঋনে তারা বিরাট বিরাট মেঘা প্রকল্প করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোনো দেশই শ্রীলঙ্কায় তেমন বিনিয়োগ করেনি। যার দরুন প্রকল্পগুলো থেকে কোনো রিটার্ন ছাড়াই রিজার্ভ থেকে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ যেসব প্রকল্পে ঋণ নিয়েছে, সেগুলো দৃশ্যমান এবং রাষ্ট্র সেখানে সরাসরি উপকৃত হবে। কৃষি খাতে আমাদের বিস্ময়কর সাফল্য রয়েছে, খাদ্যে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।

তথাকথিত ঋণের ফাঁদ যুক্তিটিও বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর সব উন্নত রাষ্ট্রসমূহও ঋণ গ্রহণ করে অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। পরিশোধের সামর্থ্য থাকলে বৈদেশিক ঋণ কোনো সমস্যা নয়। ‘বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি পতিত হবে স্বপ্নে যারা বিভোর’ তাদের জন্য আরো বিরাট হতাশার বিষয় যে, বাংলাদেশ এই যাবৎ বৈদেশিক ঋণের একটা ইনস্টলমেন্টও যথাসময়ে পরিশোধ না করার রেকর্ড নেই।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়