নসরুল হামিদ, ফেসবুক থেকে: গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছবির মতো সুন্দর গ্রাম কলসিন্দুর। বাংলাদেশকে সাফ জেতানো বীর কন্যাদের মধ্যে ৮ জনই এই গ্রামের। এদের সাথে আমার সুন্দর কিছু স্মৃতি আছে। যার শুরুটা ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর। আমাদের শাহরিয়ার (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সেদিন অনেক রাতে ফোন করে বলল কলসিন্দুর গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখেন বিপু ভাই। ওখানকার ফুটবলার মেয়েরা বিদ্যুৎ চায়। ওদের স্বপ্নের কথা ফেসবুকে লিখেছেন গল্পকার আনিসুল হক। (তখনো আমাদের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।) কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যাদের কথা আগেই জানতাম। এএফসি কাপ, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ ফুটবলসহ প্রতিটি টুর্নামেন্টে ওরা দারুণ খেলছিল। ওদের ইচ্ছা পূরণ করতে সেদিনই ফোন করি পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। ময়মনসিংহ থেকে আড়াই-তিন ঘন্টার পথ কলসিন্দুর, প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা। দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন তৈরি করে সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানোটা ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু আমরা সবাই মিলে চ্যালেঞ্জটা নিলাম। বিদ্যুৎ কর্মীদের রাতদিন চেষ্টায় মাত্র দুই মাসের মাথায় আমরা কলসিন্দুর সহ আশেপাশের নয়টি গ্রামের ৮০৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হই।
২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো কলসুন্দর। সেই বাঁধভাঙ্গা খুশির দিনে আমিও ছিলাম ওদের সাথে। ছিল জারেফ হামিদ, লেখক আনিসুল হক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন সহ অনেকেই। তবে সেদিন অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছিল লাল ট্র্যাকস্যুট পড়া কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যারা। বিদ্যুৎ পেয়ে সেদিন ওদের চোখ মুখে যে আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখেছি তা ভোলার মত না।
তখনো মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে কলসিন্দুরের অনেকের মধ্যে জড়তা ছিল, আপত্তি ছিল। কিন্তু বিদ্যুতের কল্যাণে টেলিভিশন আর ডিশ লাইন পৌঁছানোর ফলে মানুষের ধ্যান ধারণা পাল্টাতে শুরু করে। কলসিন্দুরের মানুষ দেখল দুনিয়ার প্রায় সব দেশ, এমনকি ইরানের মত মুসলিম দেশের মেয়েরাও দাপটের সাথে ফুটবল খেলছে। আর সবচেয়ে বড় যে কাজটা হলো- বিশ্বকাপ সহ ফুটবলের বড় বড় আসর দেখে মেয়েদের স্বপ্নটা আরো বড় হলো। দেশের হয়ে আরো বড় কিছু অর্জনের সাহসটা বেড়ে গেল।
সেই সাহস আর স্বপ্নে ভর করে এগিয়ে গেছে কলসিন্দুরের কিশোরিরা। তারাই আজ পরিণত হয়েছে। নাম লিখেছে ইতিহাসের পাতায়। বাংলাদেশকে করেছে মহীয়ান। কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যাদের এই অদম্য স্বপ্নযাত্রায় কিছুটা হাত বাড়িয়ে দিতে পেরেছি- এটাই দারুণ তৃপ্তির।
নসরুল হামিদ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আপনার মতামত লিখুন :