শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ০১:২৮ দুপুর
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ০১:২৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাতিন রহমান: শহরের ফুসফুসটা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে

রাতিন রহমান: রাজধানীর কলাবাগান এলাকার খোলা একটি জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি সেখানে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন হয়। স্থানীয় লোকজন জায়গাটি মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসন ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট এক নোটিশে জানায়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই নোটিশে এই জমিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ একটা জলজ্যান্ত ব্যবহার্য শ্বাস নেবার খোলা জায়গাকে ঢাকা জেলা প্রশাসন পুলিশকে দখলে দেওয়ার স্বার্থে নোংরা মিথ্যাচার করে পতিত জমি বানিয়েছে।

নোটিশ দেওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে মাঠ হিসেবেই রাখতে প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েক শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। প্রতিবাদের মুখে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় শিশু আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই ঘটনার সাথে জড়িত কলাবাগান থানার এস আই নয়নসহ মোট চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়। কিন্তু পুলিশ তেঁতুলতলা মাঠের দখল করার লক্ষ্য থেকে এক বিন্দু সরেনি। 

এর মধ্যে রবিবার তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করা ও ভিডিও করা সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলে পিয়াংশুকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় নির্মাণকাজে বাধা ও ঠিকাদারকে ধাক্কা দেওয়া। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। ওই মাঠের চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করছিল পুলিশ। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন তিনি। এরপরই আটক করা হয় তাদের। এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরিফ মো. ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় লোকজন ও শিশুদের এনে কাজে বাধা দেওয়ার কারণে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে কোনো অপরাধ পেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।

পুলিশের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, রাষ্ট্রের ডেকোরেটেড ফোর্স, জনগণের সেবার জন্য ২৪/৭ নিয়োজিত থাকার কথা তাদের। সেই বাহিনীর একটা থানা একটা আস্ত খেলার মাঠ, খোলা জায়গা, জনসাধারণের বুক ভরে শ্বাস নেবার বাতাস দখল করে নেবার জন্য প্রথমে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাঠটা পতিত জমি হিসেবে দখলের প্রস্তাব এনেছে, এরপরে সেই মাঠের সুফলভোগী অসংখ্য জনগণের দীর্ঘ দেড় বছরের প্রতিবাদ ও আপত্তি অবজ্ঞা করে মাঠ দখলে দেয়াল নির্মাণ শুরু করেছে। তার প্রতিবাদ করায় এবং ভিডিও করার অপরাধে ঠিকাদারের উপর ধাক্কা দেওয়া টাইপের হাস্যকর অভিযোগ এনে তাদের আটক করে থানাহাজতে ভরে রেখেছে। এরপরে আরেকজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন তাদের জবরদখল কার্যক্রমে বাঁধা দেবার অপরাধে তারা দুজনকে আটক করেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবেন। তিনি যেটা উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন সেটা হচ্ছে আটককৃত দুজনের একজন মা আরেকজন ছেলে, ছেলেটার বয়স ১৬ বছর। সে একজন কিশোর। তার অপরাধ সে ওই মাঠে প্রতিদিন খেলতে চায়। যা তার মৌলিক ও নাগরিক অধিকার।  

আমি নিশ্চিত তাদের জবরদখলের প্রতিবাদ করায় গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া সহকারী কমিশনার শরিফ মো. ফারুকুজ্জামান বা তার মত অসংখ্য পুলিশ সদস্যের শিশু-কিশোর আছে যারা একটা মাঠের অভাবে বিকেলে খেলতে পারে না, খোলা জায়গার অভাবে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারে না, চারদেয়ালে বন্দী জীবনযাপনে তাদের সঙ্গী শুধু মোবাইল বা ভিডিও গেমস, যাদের অনেকেই খেলাধুলা বা সুস্থ জীবনযাপনের সুযোগ না পাওয়ায় বখে গেছে, ইয়াবা ধরেছে, নিয়মিত মাদক নেয় এবং এই বখে যাওয়া মাদকাসক্ত সন্তানদের জন্য এই পুলিশ সদস্য কর্মকর্তাদের পারিবারিক জীবনটা পরিণত হয়েছে ভয়াবহ নরকে। যে জনগণের সেবা করার দায়িত্বে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন তারা, সেই জনগণের জায়গা দখল করে প্রতিবাদের কারণে সেই জনগণকেই আটক করে থানায় আটকে রাখার জঘন্য অচিন্তনীয় স্পর্ধার কথা না একপাশে রাখি। এই কংক্রিটের জঙ্গলে নিজেদের সন্তানদের শৈশব-কৈশোরের সুস্থ বিকাশ ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেও, আইনরক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ছেলের ইয়াবাখোর, মাদকাসক্ত হয়ে দেখেও কীভাবে তারা এতোদিনের পুরোনো একটা খোলা জায়গা, মাঠ, শ্বাস নেবার জায়গা দখল করার জন্য এমন বর্বর হয়ে যেতে পারে? কতটা বিবেচনাহীন নির্দয় হলে একটা কিশোরকে তার খেলার মাঠ রক্ষায় প্রতিবাদের অপরাধে ধরে হাজতে আটকে রাখা যায়? মামলা দেবার হুমকি দেওয়া যায়?

সর্বস্তরে প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে গতকাল কলাবাগান থানা পুলিশ মা-ছেলেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিতোষ চন্দ্রের ভাষ্যমতে সৈয়দা রত্না মুচলেকা দিয়েই ছাড়া পেয়েছেন। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, ‘তিনি (সৈয়দা রত্না) তার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং এমন কাজ তিনি আর করবেন না, এটা লিখিতভাবে জানিয়েছেন’। তার কথার টোনটা খেয়াল করুন। অর্থাৎ পুলিশের কাছে মাঠ রক্ষায় এই প্রতিবাদ বড় কোন ভুল। আর পুলিশ যে একটা আস্ত খেলা মাঠ দখল করে নিচ্ছে, সেটা খুবই স্বাভাবিক আইনসিদ্ধ একটা ঘটনা। 

মুচলেকা দিয়ে থেমে যাবার মতো মানুষ হলে এতোদূর আসতেন না, তিনি থামবেন বলেও মনে হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে রত্না মাঠটা বাঁচাতে তার কিশোর সন্তানসহ জেলে গেছেন, এই নষ্ট সময়ে অসমসাহসিকতার উদাহরণ তৈরি করেছেন, তার এই লড়াইটা জারি রাখতে আমরা তার পাশে থাকবো কিনা, আমরা মাঠটা বাঁচাতে সোচ্চার হব কিনা। শহরের ফুসফুসটা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, যতোটুকু বাকি আছে, ততোটুকুও কি দখল হয়ে যেতে দেবো? তেঁতুলতলা মাঠটা কি কলাবাগান থানা দখল করে নেবে আমাদের চোখের সামনে? নাকি আমরা সর্বাত্মক সোচ্চার প্রতিবাদে দখলটা ঠেকিয়ে আমাদের সন্তানদের বিকেলে খেলা-ধুলার সুযোগটা, শৈশব-কৈশোরটা রক্ষা করব, তাদের ইয়াবাখোর, মাদকাসক্ত হবার হাত থেকে বাঁচাব? সিদ্ধান্ত আমাদের হাতেই। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়