অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: যে প্রতিষ্ঠানে তো বেশি অযোগ্য বস, সেই প্রতিষ্ঠানে ততবেশি তোষামোদি। বাংলাদেশে তোষামোদি নামক ভাইরাসের কারণে তোষামদিটা এখন প্যান্ডেমিক পর্যায়ে চলে গেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি নিয়োগ পেলে, বিভাগে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেলে, কেউ ডিন হলে ফুল আর পড়হমৎধঃঁষধঃরড়হং এর বন্যা বয়ে যায় যা আগে কখনো এই মাত্রায় দেখিনি। প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি অযোগ্য হয় তখন সেটা হয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাপার। আমি দেখেছি বস যদি অযোগ্য হয় তখন অধস্তনেরা তাদের মেধা দেখাতে পারেনা।
সর্বদা তটস্ত থাকতে হয় এই ভেবে বসকে আউটস্মার্ট করা যাবে না। বসের চেয়ে বেশি জানা বা বোঝা যাবে না। বসও সর্বদা স্মার্ট হওয়ার অভিনয় করতে গিয়ে সর্বদা ভয়ে তাকে কখন যদি ভেতরটা বের হয়ে আসে। ফলে স্মার্ট এবং যোগ্যদের সে সব সময় এড়িয়ে চলে। ভেতর থেকে অধস্তনদের মাঝে যারা স্মার্ট এবং যোগ্য তাদের ভয় ঢুকিয়ে রাখার চেষ্টা চলে। ফলে যোগ্যরাও তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটা সময়ে বসের চারপাশে কেবল তোষামোদকারীরাই স্থান পায়। এইটা একটা ভয়াবহ অবস্থা।
তখন সবাইতো সমান মর্যাদা পায়ই না উল্টো অযোগ্যরা বেশি সম্মান পেতে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে এখন আমি এই অবস্থা দেখছি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মানুষ থেকে শুরু করে যেকোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানের টেবিলের চার পাশে কারা ঘুরঘুর করে এর একটা পরিসংখ্যান নিলেই বুঝে যাবেন প্রকৃত অবস্থা। আমি যেইটুকু বলছি প্রকৃত অবস্থা সম্ভবত তার চেয়ে ভয়াবহ। ৃসবাই সমান না। পৃথিবী সকল কিছুতেই ডাইভারসিটি। সকলে যেমন দেখতে একরকম না, তেমনি সকলে একরকম যোগ্য না। সবাইকে সমান যোগ্য ভেবে সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়া অন্যায়। এতে সমাজে যোগ্য মানুষ তৈরি নিরুৎসাহীত হয়। যেই সমাজ বা প্রতিষ্ঠান যোগ্যদের যোগ্যতানুসারে যোগ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হয় সেই সমাজে যোগ্যতর মানুষ তৈরি হওয়া কমতে থাকে এবং একসময় আর জন্মায়ও না।
দেশ বা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যারা তাদের দায়িত্ব এইটা নিশ্চিত করতে এমন নিয়ম কানুন তৈরি করা এবং প্রতিপালন করা যাতে তার দেশের বা প্রতিষ্ঠানের যোগ্য মানুষেরা যোগ্য মর্যাদা পায়। প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হলেন তার ভিসি। সেই ভিসিকে জানতে হবে তার প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাদের কেমন অবদান। কার অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে আর কাদের অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধ্বংস হচ্ছে। সেই অনুযায়ী যোগ্যদের পুরস্কার এবং অযোগ্যদের তিরস্কার করার পদ্ধতি বানানো প্রশাসনের দায়িত্ব। এইটা করতে ব্যর্থ হওয়া মানে প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়া।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :