শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ০১:৩৫ রাত
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ০১:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খেলার মাঠ দখল করে থানা বানিয়ে কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাচ্ছেন আপনারা?

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ: ইউরোপের দেশগুলোতে এক একটা নদীতে কেন্দ্র করে পর্যটন থেকে শুরু করে পার্ক, খেলার জায়গা, নৌপথসহ নানা কিছু গড়ে উঠেছে। দানিছুব-রাইন-ভলগাসহ শত শত নদী শিল্প-সাহিত্য ছাড়াও মানুষের নিত্যদিনকার জীবনে কতো বড় বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ আমাদের পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কাছে এরা নস্যি। পুরো ইউরোপ মিলিয়ে যে কয়টি বড় উল্লেখযোগ্য নদী রয়েছে, এক বাংলাদেশেই পাওয়া যাবে এর কয়েকগুণ বেশি নদী।

কোনো জার্মানের সঙ্গে রাইন নিয়ে আলোচনা হলেই খুব গর্বের সঙ্গে বলি, জানো আমাদের দেশে রাজধানীর চার পাশে চারটা নদী। মাঝেমধ্যে মজাও করি এই বলে, ‘রাইন নিয়ে এতো কথা, আমাদের সবচেয়ে ছোট নদীটাও রাইনের চেয়ে চওড়া’। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু এই চার নদীকে আমরা দখল, ভরাট, অবৈধ বালি উত্তোলন এবং দূষণ দিয়ে প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলেছি। একসময়কার প্রতিটা খরস্রোতা নদী এখন ‘পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি’ টাইপের অবস্থা।

অথচ কীভাবে রাইনকে বাঁচাতে ছয় দেশ মিলে লড়াই করেছে, সেই গল্প সংক্ষেপে বলি। ইউরোপের ঠিক মধ্যিখানে ৬টা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে রাইন নদী। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, লিশটেনশটাইন এবং সুইজারল্যান্ড। মূলত রাইনের বড় অংশ পড়েছে জার্মানিতেই। আর এই নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছিলো সভ্যতা। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে পানির প্রয়োজন, নদীপথের যাতায়াত, বর্জ্য নিষ্কাষণ সব মিলিয়ে রাইনের পাড়েই গড়ে ওঠে বড়বড় সব শিল্পকারখানা। বিশ শতকের ৭০ থেকে ৮০ সালের দিকে এই দূষণ চরম আকার ধারণ করে। রাইনকে তখন বলা হতো ইউরোপের পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী। একসময় রাইন নদীর সামন ছিলো বিশ্ববিখ্যাত। স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয়। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে এতো বিষাক্ত হয়ে ওঠে রাইন, শুধু স্যামন না, সব ধরনের মাছই এই নদী থেকে বিলুপ্ত হয় চিরতরে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। ১৯৮৬ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে ঘটে বিশাল এক রাসায়নিক দুর্ঘটনা। রাইনের পানিতে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে কয়েকশ কিলোমিটার ভাটিতেও প্রায় সব প্রাণি মারা যায়।

অথচ সেই বছরই যখন তৎকালীন ডাচ পানিসম্পদ মন্ত্রী নিলি ক্রোয়েস বললেন, ‘আমি নদীতে স্যামন মাছ ফেরত চাই’, স্বভাবতই সবাই তাকে পাগল বলেই ধরে নিয়েছিলো। কিন্তু এই পাগলাটে মহিলা তা বাস্তবে করে দেখিয়েছিলেন। এই কাজে খরচ হয়েছিলো প্রায় ২৫ বিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের এখনকার জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক। রাইন রক্ষায় ছয় দেশ মিলে গঠন করে আন্তর্জাতিক রাইন রক্ষা কমিশন। রাইন নদীকে মোটামুটি পরিষ্কার করা গেছে গত তিন দশকের আপ্রাণ চেষ্টায়। মাছও ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওপরের রাইন অনেক রোমান্টিক হলেও নিচের রাইন আর জার্মান নেই। অর্থাৎ এখন বিভিন্ন প্রজাতির ভিনদেশি কাঁকড়া, মাছ দূরদূরান্ত থেকে আসছে রাইনে, যাদের আসলে জার্মানির পরিবেশের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। 

ফলে জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। এদিকে রাইনে এখন স্যামন পাওয়া যাচ্ছে হঠাৎ হঠাৎ। তবে তাতেও উচ্ছ্বসিত না হতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই স্যামন, রাইনের সেই স্যামন না। এগুলো আসছে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে। রাইনের স্যামন আজ শুধুই ইতিহাস। বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা কতো? কেউ বলে ৪০০, কেউ বলে ৭০০। এর কয়টাকে আমরা নিজের পরিবার মনে করি? নাকি অভাব না থাকায় আমরা এই সম্পদের আর যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না?  নদী দখল করে ভবন বানিয়ে, খেলার মাঠ দখল করে থানা বানিয়ে কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাচ্ছেন আপনারা? লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়