শিরোনাম
◈ জিম্মিদের ছেড়ে দিতে চায় হামাস, যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ চুক্তির দাবি ◈ চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু মে-তে, সাশ্রয় হবে কোটি টাকা ◈ দূতাবাসের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ◈ রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী সহ দেশ ত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ◈ ভারতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল দিল্লি, পাল্টা দিল নজর ঘোরানোর অভিযোগ ◈ ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২, ট্রাম্প বললেন ‘বন্দুক নয়, মানুষ গুলি করে’ ◈ পাকিস্তানের খনিজ ভাণ্ডারে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর, বিনিয়োগে বাধা নিরাপত্তা ও অবকাঠামো সংকট ◈ এবার চীনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ শেষের ইঙ্গিত ট্রাম্পের, টিকটক চুক্তি বিলম্বিত হতে পারে ◈ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত, পারস্পরিক স্বার্থে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান বিশেষজ্ঞের ◈ হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এবার ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙা ও শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে যা বললেন ফরহাদ মজহার

সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টায় ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পর প্রথমবার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা। যা মানতে না পেরে তার আমলে নিপীড়নের শিকার হওয়া ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এমন পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।

৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ও শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন ফরহাদ মজহার। যেখানে হঠাৎ শেখ হাসিনার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার পেছনে ৮টি কারণ সামনে এনেছেন তিনি।

ফরহাদ মজহারের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো যুগান্তরের পাঠকদের জন্য।

‘‘৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙবার উস্কানি শেখ হাসিনা স্বয়ং দিয়েছেন, এই সময়ে তার ভাষণ দেবার সিদ্ধান্তই ছিল উস্কানিমূলক। 

হাসিনার মাথায় রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ নিয়ে ইন্দো-মার্কিন-ইজরাইলি আঞ্চলিক পরিকল্পনা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অলিগার্ক, অর্থাৎ অল্প কিছু বিলিয়নারদের আধিপত্যের প্রতিষ্ঠা। যেমন ইলন মাস্ক, জুকারবার্গ, বিলগেটস প্রমুখ। এর কুফলও বাংলাদেশসহ গরীব ও প্রান্তিক দেশগুলোতে পড়বে। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে মার্কিন বর্ণবাদী গোষ্ঠীর মৈত্রীও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের গাজানীতি ভয়াবহ। ইতিমধ্যে ট্রাম্প বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার ‘নিয়ন্ত্রণ নেবে’ এবং এর ওপর তার ‘মালিকানা’ প্রতিষ্ঠা করবে।

এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাষণ বুঝতে হবে। নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে তিনি রাজনীতির যে ছক কষছেন সেদিকে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে হবে।

ছাত্রজনতার ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভের পরিণতি হচ্ছে ৩২ নম্বর ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া। এটা শুরু, শেষ নয়। আমরা দেখলাম একে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করে নাই। সেনাবাহিনী কিছুক্ষণের জন্যে এলেও ফিরে গেছে। জনগণের বিপরীতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় না করাবার নীতি সঠিক।

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দিল্লি প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে জানমাল রক্ষা করতে উপদেষ্টা সরকার ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হবে যে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার নাই। এটাই দিল্লী হাসিনার পক্ষে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবে।  

দিল্লী দাবি করবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে দিল্লী আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করতে পারে।

এই বাস্তবতা এবং সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। যদি আমরা সামনের দিনে আরো গভীর সংকটে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চাই তাহলে অবিলম্বে শেখ হাসিনার সংবিধান বাতিল করে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন, নতুন ভাবে বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করুন। এটা পরিষ্কার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখার শপথ করে আমরা আদতে ফ্যসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রেখেছি। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাড়ি ভাঙলাম অথচ শেখ হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরাপুরি কায়েম রাখলাম এটা কি হয়!

অতএব পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা যেন কোন গভীর সংকটে না পড়ি সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের ক্ষোভকে আমলে নিতে শিখুন। ছাই দিয়ে আগুন নিভানো যায় না।

এই বিষয়টি আরও বিস্তারিত বুঝবার জন্য মোহাম্মদ রোমেলের পোস্টটি দেখুন।

--------------------------

শেখ হাসিনার ভাষণের বিরোধিতায় ৩২ নাম্বার ভাঙ্গার ফলে বাংলাদেশের জনগণের এই মুহূর্তে কোন লাভ হয়েছে বলে আমার মনে হয় নাই ।

তাইলে ৩২ নাম্বার ভাঙ্গার রাজনীতি কি? এই রাজনীতিতে কে কি অর্জন করল? এর পর্যালোচনা দরকার। দেশে-বিদেশে এর প্রভাব কি পড়বে সেইটারও পর্যালোচনা দরকার । 

এই মুহূর্তে জরুরি প্রশ্ন হলো, জনতা এইটা ভাঙ্গতে গেল কেন? উত্তেজিত না হয়ে, কোন পক্ষ না নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। আমার মনে কয়েকটা কারণের কথা আসছে। সেইসব শেয়ার করি। 

১) হাসিনার আজকে ভাষণ এবং তার দলের মাসব্যাপী কর্মসূচিতে জনগণ ভিতু হয়েছে। ভাবছে এর পিছনে ভারতের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। ফলে তাদের প্রতিরোধের অংশ আকারে জনতা ৩২ নাম্বারে গেছে।

২) হাসিনা এবং তাদের দলের কারো মধ্যেই এখন পর্যন্ত তাদের অতীত খুন-গুম-লুটপাট-বিচারহীনতা নিয়া কোন সরি ফিলিং মানুষ দেখছে না। ফলে মানুষের মনে তাদের বিষয়ে ক্ষোভ কমে নাই। বরং তারা ফিরে আসার নানান হুমকি দিচ্ছে। দোষ অস্বীকার করছে। এইটাও জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

৩) হাসিনা তার পুরো শাসন আমলে তার বাপকে সামনে রেখে, দেবতা বানিয়ে তার সমস্ত অপকর্ম করে গেছে। ফলে ইতিহাসের শেখ মুজিবুর আর হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট আইকন শেখ মুজিবুরের পার্থক্য জনগণের মধ্যে এখন আর নাই। ফলে ৩২ নাম্বারকে জনগণ ফ্যাসিস্ট আস্তানা হিসাবে দেখছে। ফলে এইটা ভাঙ্গতে গেছে।

৪) ৫ আগস্ট সরকার গঠনের পর এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্টদের বিচার শুরু হয় নাই। বড় বড় নেতাদের অনেকেই পালিয়ে গেছে।দেশে যারা আছে তারাও গ্রেফতার হয় নাই। গ্রেফতার হওয়ার কোন ভরসাও সরকারের তরফ থেকে পাইতেছে না। ফলে মানুষের মধ্যে চরম হতাশা আছে। 

৫) এখন পর্যন্ত তরুণরা যে যে দাবি নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছিলেন তার একটাও পূরণ হয় নাই। তারা চুপ্পুকে অপসারণ করতে চেয়েছিলেন। পারেন নাই। নতুন সংবিধান/গঠনতন্ত্রের কথা বলতে ছিলেন। সেটাও হচ্ছে না। তারা 'জুলাই ইশতেহার ঘোষণা' করতে চেয়েছে। সেটাও পারে নাই। ফলে যেন একটা অর্জনহীন সময় চলে যাচ্ছে। 

৬) দেশের কোথায় কোন সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারে নাই সরকার। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। আমলাতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। পুলিশ কাজ করছে না। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। এর প্রকাশ ৩২ নাম্বারে দেখছি।

৭) দেশের অর্থনীতি এখনো গতি পায় নাই। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। 

৮) জনগণের জন্য এখন পর্যন্ত কোন পরিষ্কার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিশা নাই। ফলে তারা অস্থির দিশেহারা।

এতো বড় গণঅভ্যুত্থানের পর এতো এতো ফেইলরে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আগস্ট বিপ্লবীরা হতাশ। এই হতাশা নিয়ে জনগণ নিশ্চয় ঘরে চুপচাপ বসে থাকবে না। ফলে ফ্যাসিস্টদের বাড়াবাড়ির সুযোগেতারা আবার বের হয়ে আসছে। এবং সেই ক্ষোভ মিটাইতে আজকে তারা ৩২ নাম্বার ভাঙ্গতে গেছে।

আমি নিশ্চিত সরকার যদি ঠিকঠাক ফাংশন করত এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার চলত, তাইলে মানুষ আজকে ৩২ নাম্বারে গিয়ে অনাহুত এই ক্ষোভ প্রকাশ করত না। 

তাদের প্রত্যাশা এবং হতাশাকে যদি আগামী দিনে আমরা যথাযথ পথে পরিচালিত করতে চাই, তাইলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেন।

সরকার কিভাবে আরো ফাংশনাল করা যায় সেই ব্যবস্থা করেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার দ্রুত শুরু করেন। জুলাইয়ে আহতদের দিকে মনোযোগ দিন। সিন্ডিকেট ভাঙ্গার উদ্যোগ নেন। আমলাতন্ত্রকে টাইট দেন। দরকার হয় পুরো উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে সাজান।

আন্দোলনে যুক্ত সকল পক্ষের বিপ্লবীদের সাথে নিয়মিত ডায়ালগ করেন। তাদের পরামর্শ শুনেন। সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। তাদের নতুন রাজনৈতিক দিশা দেন। নাইলে এই অভূতপূর্ব শক্তির অপচয় এবং অপব্যবহার হবে। হবেই। ঠেকাতে পারবেন না।’’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়