শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ বিমান ভেঙে নতুন এয়ারলাইনস তৈরির সুপারিশ ◈ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ: বেড়েছে পুলিশের উপস্থিতি, বিজিবি মোতায়েন ◈ দক্ষিণখানে কিশোরীকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে হত্যা, ২ আসামির স্বীকারোক্তি  ◈ মহাখালী রেলপথ অবরোধ তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের, ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ (ভিডিও) ◈ থানায় না গিয়ে অনলাইনে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার  ◈ ‘জনগণের সাড়া না পেয়ে অনলাইনে হরতাল-অবরোধ করছে আওয়ামী লীগ’ (ভিডিও) ◈ ১১ দাবি নিয়ে এবার মতিঝিলের রাস্তায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা  ◈ ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকায় নামতে না পেরে ৬ ফ্লাইটের সিলেট ও কলকাতায় অবতরণ ◈ রুপির দাম রেকর্ড নিম্নমুখী, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যু.দ্ধের আশঙ্কা ◈ বর্তমান পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা নিয়ে জালিয়াতির সুযোগ নেই: ইসি সানাউল্লাহ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:৫৭ দুপুর
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:১১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‌‘ আন্দোলন করার লোক কোথায়? আপনার দলের নেতাকর্মীরা তো এখন পলাতক’

জনতার চোখ’র প্রতিবেদন।। প্রিয় হাসু আপা, বিগত প্রায় ষোলটি বছর যে আন্দোলন দমিয়ে রেখেছেন আপনি, ক্ষমতা থেকে পালানোর ছয় মাস যেতে না যেতেই সেই আন্দোলনের পথেই হাঁটতে হলো আপনাকে? আপনিসহ আপনার দলের নেতারা তখন দম্ভ নিয়ে বলতেন, হরতাল জাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। যদিও বিরোধী দল খুব কমই হরতাল ডেকেছে। কারণ হরতালের দিন আপনার সড়ক পরিবহনের নেতারা গাড়ি চলবে বলে ঘোষণা দিতেন। বিরোধী দলকে তো হরতালের দিন মাঠেই নামতে দেননি। যদিও দুই একজন নেমেছেন তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছেন। এসব করার পর আপনাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সব সময় ব্যঙ্গ করে বলতেন, কোথায় গেল আন্দোলন? আন্দোলন দমনে যে শিক্ষা আপনি দিয়ে গেছেন এসব কি এখন আপনার দলের উপর পড়বে না বলে মনে করছেন? আর বিশেষ করে আন্দোলন করার লোক কোথায়? আপনার দলের নেতাকর্মীরা তো এখন পলাতক। কেউ বিদেশে। কেউ কারাগারে। যারা দেশে আছেন তারা তো নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিতেই ভয় পান। মাঝে মাঝে দুই/একজন কর্মীকে দেখা যায়। তাদের মুখে মাস্ক পরা। এই যখন অবস্থা তখন আন্দোলনের ডাক দিয়ে কি বুঝাতে চাইছেন? 
হাসু আপা, আজ আর কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতে চাই না। কারণ আন্দোলনের ডাক যখন দিয়েছেন তখন মনে হচ্ছে আপনি চাঙ্গা। প্রতিপক্ষকে দেখেই ছাড়বেন। বেশ ভালো। তবে গত ষোল বছরে আপনার আমলের আন্দোলন দমনের চিত্র চোখ বুজে একটু দেখে নিয়েন। তাহলে আপনার জন্যই ভালো হবে। আরেকটি কথা হয়তো আপনি জানেন, তারপরও বলছি- দেশের মানুষ কিন্তু আপনাকে এত সহজে আপন করে নিবে না বলেই মনে হয়। আপনার জানার জন্য বলছি, ক’দিন ধরে আপনাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ফেসবুকে এক আওয়ামী বুদ্ধিজীবীর খোলা চিঠি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি কি লিখেছেন একটু চোখ বুলিয়ে নিন। তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনাকে নিয়ে কে কি ভাবছে। লেখাটির শিরোনাম দিয়েছে ‘কান ফেলে শুনুন’। 

আপনি ক্ষমতায় থাকতে কথাগুলো কখনোই বলতে পারতাম না। কারণ লেখাটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দলীয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা আমার বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমাকে জানে মেরে ফেলতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতো না। দলীয় ফোরামে যদিও আপনার অনেক সমালোচনা করেছি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে এসব কথা বলবার মতো সাহস আমার কেন বাংলাদেশে কারোই ছিল না। প্রথম থেকে যদি বলি, তবে বলতে হয়, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দল চালাবার মতো মেধা, প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতা আপনার ছিল না। শুধু দলের ঐক্যের প্রতীক বিবেচনায় সেদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনাকে ওই আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত জনাব মালেক উকিল সাহেবের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ৩৯টি আসন পেয়ে তারা বিরোধী দলের আসন অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর পতনের পর অনেকেই বলাবলি করছিল, আওয়ামী লীগ আগামী একশ’ বছরেও রাজনীতিতে ঠাঁই পাবে না। কিন্তু সেটি পেয়েছিল আপনার নেতৃত্ব ছাড়াই।

দ্বিতীয়ত, আপনি দলের ভেতর কোনো নেতৃত্বের বিকাশ একেবারেই সহ্য করতে পারেন নি। আপনার পিতা ভুলবশত তাজউদ্দীনকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন। আর আপনি সংজ্ঞানে কামাল হোসেনের মতো মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তোফায়েল, রাজ্জাক সাহেবদের মতো ত্যাগী নেতাদের নানাভাবে অপদস্থ করেছেন। তাদের জনপ্রিয়তা আপনি মেয়েলি প্রতিহিংসায় সহ্য করতে পারেননি।  অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় এসব নেতার অবদান জ্বলজ্বল করে এখনো জ্বলছে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সাহেবকে আপনি ধরে রাখতে পারেননি।
তৃতীয়ত, অতো বড় দলের নেতা হিসেবে কী বলা উচিত আর কী উচিত নয়- এই জ্ঞান আপনার ছিল না। আপনি কথা বলতেন সাধারণ মানুষের মতো ঝগড়ার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে। সেসব কথায় বড় নেতা কিংবা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো ছাপ ছিল না। মাধুর্যহীন, প্রতিহিংসার বাক্য এবং শব্দ আপনার বক্তব্যকে অত্যন্ত নিম্নমানের বক্তব্যে পরিণত করতো। একটি বক্তব্যের পনের আনা জুড়ে থাকতো বিরোধীদের সমালোচনা। আর সে সমালোচনায় কোনো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একেবারেই ছিল না। ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের রোষানল।

চতুর্থত, বঙ্গবন্ধু একটা বিশেষ আদর্শকে সামনে রেখে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন। আর আপনি একমাত্র ক্ষমতাকে ধরে রেখে লুটপাটের আদর্শ কায়েম করার জন্য স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার লক্ষ্য ছিল শুধুই ক্ষমতা এবং এক ভীতিকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আপনার সামান্য সমালোচনা করেও কতোজন যে গুরুদণ্ড এমনকি জীবন পর্যন্ত হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আমি নিজেও কিছুটা ভুক্তভোগী হয়ে সন্দ্বীপ পর্যন্ত দেখে এসেছি। সেটি ছিল পুরাকালের দ্বীপান্তরের মতোই।

পঞ্চমত, এদেশের মানুষ দুইবার আপনাকে খাতির করে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বাকি তিনবার আপনি নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি করে, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। তারপরও আপনি এখনো প্রশ্ন করেন, আমার কি অপরাধ ছিল? এটা তো একটা প্রতিবন্ধীর প্রশ্ন। আপনার তো আর কোনো অপরাধ করার প্রয়োজন নেই। শুধু এই বিনা ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যেকোনো শাস্তি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আপনি যদি আপনার অপরাধ না বুঝতে পারেন তাহলে আপনাকে প্রতিবন্ধী ছাড়া ভদ্রভাবে আর কী বলা যায়। 
ষষ্ঠত, আপনাকে থামাবার বা সাবধান করার কোনো মানুষ ছিল না। আপনার চারপাশে ছিল কেবল মেরুদণ্ডহীন স্বার্থ উদ্ধারকারী কিছু তোষামোদকারী। আপনি পাগলের প্রলাপ বকলেও তারা উলুধ্বনি দিয়ে তা সাপোর্ট করতো। আপনি একটা পরিশীলিত জনবহুল সভায় দাঁড়িয়েও মুখে লাগাম দিতে পারেন নি। কাউকে কাক বলেছেন, কাউকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলে দিয়ে পদ্মায় চুবাতে চেয়েছেন। এসব একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায়? হ্যাঁ মানায়। আপনার মতো ক্ষমতালোভী এরচেয়ে ভালো কথা আর কী বলতে পারে।

১৯৯৬ সালের মেয়াদে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সকল বুদ্ধিজীবী আপনার পক্ষে ছিলেন। কারণ আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তারা আপনাকে সাবধান করে ‘সাধু সাবধান’ রচনা করতেন। কিন্তু আপনি তাদের সকলের মুখেই চুনকালি মেখেছেন। এজন্য ২০১৪ থেকে আপনি তাদের দিক থেকে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। ২০২৪-এ এসে তারা কেউই আপনার পাশে ছিল না। শুধু আপনার ঠোঁটের জন্য আপনার পতন বারো আনা ত্বরান্বিত হয়েছে। আদালতও একবার আপনার জিহ্বা সংবরণ করার জন্য হুঁশিয়ার করেছিল। কিন্তু আপনার স্বভাব আপনি বিন্দুমাত্র পরিত্যাগ করতে পারেননি। আপনি প্রচুর মিথ্যা কথা বলতেন যা একজন রাষ্ট্রনায়ককে মানায় না। জয়-পরাজয় নিয়েই তো রাজনীতি। আপনি কখনো হেরে যাবেন এটা ভাবতে পারেন নি। আপনার আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ থেকে বহুদূর সরে এসেছিল। আপনার আওয়ামী লীগ একেবারে গ্রাম পর্যন্ত টাউট-বাটপার আর মাস্তান তৈরি করেছিল। বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলেছিলেন একটা মধ্য চরিত্রের সেবক শ্রেণি। আর আপনি গড়ে তুলেছিলেন একটা সন্ত্রাসী লুটেরা শ্রেণি। আপনি কখনোই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। আমলা কামলা আর প্রতিরক্ষার মানুষ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন শুধু আপনার ক্ষমতার জন্য। কিন্তু কে আর চিরকাল ব্যবহৃত হতে চায়? আপন বিবেচনা থেকেই তারা একদিন পিছুটান দিতে বাধ্য হয়।

আপনি উন্নয়নের ঘ্যানর ঘ্যানর ফিরিস্তি আওড়ান যা খুবই বিরক্তিকর। কান ঝালাপালা হয়ে গেছে জনগণের।  জনগণ উন্নয়ন চায়, কিন্তু তারচেয়ে বেশি চায় তার রাজনৈতিক অধিকার তথা ভোটাধিকার। আপনি সেই পবিত্র অধিকার পদদলিত করেছেন। যা আপনার সমস্ত উন্নয়নকে ম্লান করে দিয়েছে। আপনার হাতে সুযোগ ছিল ইতিহাস রচনার। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আপনার আর কি চাই। অর্থ-সম্পদ থাকবে আপনার পায়ের নিচে। আপনি হতে পারতেন নির্লোভ ত্যাগী মহীয়সী। কিসের অভাব আপনার। আপনি সেসব না করে লুটপাটে নামলেন নিজেই। আর পিওনকে বানালেন চারশ’ কোটি টাকার মালিক। জনসভায় দাঁড়িয়ে পাগল আর উন্মাদের মতো আপনি আবার সেসব কথা গর্বের সঙ্গে বলে বেড়ান। এদেশের মানুষকে আপনি নির্মমভাবে আশাহত করেছেন। মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল আপনার কাছ থেকে। আপনি সে প্রত্যাশার মোটেও যোগ্য ছিলেন না। আপনার কোনো সংশোধন নেই। আজ ভারতে বসেও আপনি যে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য প্রদান করেন তাতে আপনাকে পাগল ছাড়া আর কী বলা যায়?

আওয়ামী লীগ আর রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না, একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি তা মনে করি না। হয়তো আসবে। কিন্তু সেটি বহুদূরের পথ। বাইরে বাধার দরকার নেই। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ প্রজন্ম কোনমুখে দাঁড়াবে জনগণের দরজায়? বদলাতে হবে। খোল নলচেসহ। সেটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। ততদিনে ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে কিনা কে জানে। যাই হোক একটি প্রগতিশীল পার্টির কর্মী হিসেবে মনে করি আপনার ফিরে আসা না আসা কোনো ম্যাটার করে না। ম্যাটার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। যেটি বিক্রি করে আপনি খেয়েছেন। আর ভবিষ্যতে তা বিলীন হওয়ার পূর্বাভাস আমাদেরকে ব্যথিত করে। তবে এদেশের জনগণ বড়ই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে জানে। তারা সময়মতো রুখে দাঁড়াবেই। রক্ষা করবে তাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। সেটি ইতিহাসের অবধারিত নিয়মেই হবে। 

আর শেষে আপনাকে বলি, স্বভাব পাল্টান। সেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাজে না লাগলেও বৃদ্ধ বয়সে আপনার নিজের কাজে লাগবে। আগেই বলেছি- এসব কথা আগে হয়তো বলতে পারতাম না। এখন বলছি। জানি দৈবাৎ যদি ক্ষমতায় ফিরে আসেন তবে আমাকেই আগে খুঁজবেন। কারণ আপনি সংশোধন হবেন না। হবেন আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ।

দেখলেন তো আপা, আপনার দলীয় বুদ্ধিজীবী কি বলেছেন? এমন কথা সারা দেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন কি করবেন আপনিই ভালো জানেন। তারপরও দূর থেকে আপনার মঙ্গল কামনা করি সব সময়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়