অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ডা. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর লকার থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫৫ হাজার ইউরো, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) নিজ ভেরিফায়েড পেজে স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
স্টেটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রক্ষক না হয়ে তিনি (এস কে সুর) ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারেই ব্যাংকটির সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর রাখা ৫৫ হাজার ইউরো, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ৭০ লাখ টাকার এফডিআর ও প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের এক কেজি সোনার অলংকারও সেখান থেকে জব্দ করা হয়েছে।’
এর আগে রোববার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুদক পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকে উপস্থিত হয়। এরপর লকারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে মিটিং সম্পন্ন হয়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান নাটকীয়তায় দুদক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকেই অবস্থান করেন। দীর্ঘ সময়েও তারা সুরের ব্যক্তিগত লকার খুলতে পারেননি। পরে সুরের তিনটি লকার তারা খুলতে সমর্থ হন।
এ সময় তিনটি এসডি (সেফ ডিপোজিট) নম্বরে মোট ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইউরো ৫৫ হাজার, মার্কিন ডলার এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০, এফডিআর ৭০ লাখ টাকার ও স্বর্ণালংকার ৮৬ দশমিক ২২ ভরি (১০০৫.৪ গ্রাম)। এসব অর্থসম্পদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হেফাজতে রাখা হয়।
দুদক কর্মকর্তারা লকারে থাকা স্বর্ণালংকারের তালিকা তৈরি করেন। তাতে দেখা যায়- ৮৬ দশমিক ২২ ভরি স্বর্ণের মধ্যে চেইন ২৩টি, টিকলি দুটি, কানের দুল ১৪টি, লকেট তিনটি, চুড়ি ছয়টি, টারসেলসহ সীতাহার দুটি, আংটি তিনটি, কয়েন তিনটি, চামচ একটি, নোলক একটি, ব্রেসলেট একটি, টারসেলসহ গলার হার তিনটি এবং টারসেলসহ মুকুট একটি।
এ ছাড়া হাতে পরার চূড় দুই পিস, চুড়ি দুই পিস, সীতাহার এক পিস, মুকুট দুই পিস, লকেট দুই পিস, টিকলি এক পিস, গলার চেইন তিন পিস, গলার হার দুই পিস, কানের দুল আট পিস এবং স্বর্ণবোতাম চার পিস।
দুদক পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘ এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ২৩ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়েই তার নামে বিপুল অর্থসম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
দুদক সূত্র জানায়, তিনটি লকার থেকে এক লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো, এক কেজি স্বর্ণ এবং ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি এসকে সুরের ধানমণ্ডির বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও সাড়ে চার কোটি টাকার ফিক্স ডিপোজিটের ডকুমেন্ট উদ্ধার করে সংস্থাটি। সেখানেই বাংলাদেশ ব্যাংকে তিনটি লকার থাকার নথি পায় তারা। আদালতের নির্দেশে এসব লকার খোলার অনুমতি পায় দুদক।
মূলত এসকে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন। কয়েকজন আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এর আগে গত বছরের আগস্টে এসকে সুরের পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক। আলোচিত পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এসকে সুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
একই বছরের ২৯ মার্চে এসকে সুরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসকে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :