শিরোনাম
◈ দলীয় কোনো কমিটিতে অন্য দলের কাউকে নেওয়া যাবে না: বিএনপি ◈ পাঠ্যবইয়ে আ’লীগ ‘সবচেয়ে বড় দল’, বিএনপির জন্ম ‘সামরিক শাসনামলে’ ◈ যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হাসিনার দুর্নীতির ফিরিস্তি খুঁজতে ◈ নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কারের বৈধতা দিতে পারব না: ফখরুল (ভিডিও) ◈ ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: অভিযোগ প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের ◈ রাখাইনে জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত, পুড়েছে শতাধিক বাড়িঘর ◈ তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে আট হাজারি ক্লাবে  ◈ সমন্বয়ক সারজিসের ইলিয়াসকে উপদেষ্টা বানানোর দাবি, যা জানা গেল ◈ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিয়ে মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্য সরকার জরুরি ◈ শেষ ওভারে ২৬ রান, সোহান তান্ডব ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে রংপুরের দুর্দান্ত জয়

প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:৪৯ দুপুর
আপডেট : ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হজ প্যাকেজ সিন্ডিকেট নাকি অব্যবস্থাপনা, কার কাছে বন্দী আমি : একজন ভুক্তভোগী প্রতিক্রিয়া

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রত্যেক মুসলিমের স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার হজ করার, আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা ও প্রিয় নবী (সা.)–এর রওজা জিয়ারত করার। এমন স্বপ্ন আমিও লালন করে আসছি অনেক বছর ধরে। সেভাবেই মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম, এবার যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছে, সেহেতু খরচ কম হবে এবং সেবাও আগের চেয়ে উন্নতমানের হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দিন শেষে ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’।

বাংলাদেশ থেকে হজ করার জন্য দুটি মাধ্যম রয়েছে—সরকারি ও বেসরকারি। আমি বেসরকারি মাধ্যমে হজ করার সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী একটি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রাক্‌–নিবন্ধনের জন্য তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফি জমা দিই। এজেন্সি সেদিনই রেজিস্ট্রেশন করে আমাকে প্রাক্‌–নিবন্ধন নম্বর জানায়।

২ সেপ্টেম্বর সরকার থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা জমা দেওয়ার এসএমএস পাই। আমি ৩ সেপ্টেম্বর ওই তিন লাখ টাকা এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিই। সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করি কিন্তু এজেন্সি থেকে কোনো কনফারমেশন পাই না। ওয়েবসাইটে গিয়েও আমার নাম পাচ্ছিলাম না।

পরে এজেন্সির মালিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তিনি সৌদি আরবে ধর্ম উপদেষ্টার হজসংক্রান্ত দলের সঙ্গে সফরে আছেন। তিনি আরও জানান, সরকার প্যাকেজ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁরা চূড়ান্ত নিবন্ধন করবেন না। অন্যান্য এজেন্সিও নাকি চূড়ান্ত নিবন্ধন করছে না।

পরবর্তী সময়ে ধর্ম উপদেষ্টা ৩০ অক্টোবর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন এবং সেদিনই আমার চূড়ান্ত নিবন্ধন করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ অক্টোবর, প্রায় দুই মাস আমার তিন লাখ টাকা এজেন্সির অ্যাকাউন্টে জমা ছিল কিংবা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করা হয়েছিল।

ধর্ম উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন, এবার হজের খরচ প্রায় এক লাখ টাকা কমেছে। শুনে খুব ভালো লেগেছিল। ভেবেছিলাম, এবার হজে যাওয়ার বিষয়টা হয়তোবা সিন্ডিকেটমুক্ত হবে। কিন্তু না, এবার সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এজেন্সির ভাষ্যমতে, খরচ এবার আরও বাড়ল।

সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি মাধ্যমে দুটি সাধারণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ‘সাধারণ প্যাকেজ ১’-এর সর্বোচ্চ খরচ ৪,৮৩,১৫৬ টাকা এবং ‘সাধারণ প্যাকেজ ২’-এর সর্বোচ্চ খরচ ৫,৭৫,৬৮০ টাকা। এর সঙ্গে খাবার খরচ বাবদ সর্বোচ্চ ৪০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাকি টাকা পরিশোধের সময় এল। এজেন্সি মালিককে প্যাকেজের ব্যাপারে জানতে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন, তাঁরা শুধু প্যাকেজ-২ অফার করছেন, যার খরচ সরকারি হিসাবমতে ৬,১৫,০০০ টাকা কিন্তু তারা ৬,০০,০০০ নেবে। আমি জানালাম, আমার বাজেট নেই, আমি প্যাকেজ-১–এ যাব। তিনি জানালেন প্যাকেজ-১ সম্ভব নয়। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, সরকার ঘোষিত সাধারণ প্যাকেজ–১ কেন তারা অফার করছেন না, তখন তাঁরা জানালেন, এই প্যাকেজে অনেক সমস্যা, তাই তারা এই প্যাকেজ অফার করছেন না।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, উভয় প্যাকেজের পার্থক্য শুধু বাসস্থানের দূরত্ব। প্যাকেজ–১–এর দূরত্ব হবে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ কিলোমিটার আর প্যাকেজ–২–এর দূরত্ব হবে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। উভয় ক্ষেত্রে বাসের মাধ্যমে চলাচল করতে হবে।

হজ হোক বা ভ্রমণ হোক—শুরু হওয়া উচিত প্যাকেজ মূল্য জানিয়ে। আমি প্যাকেজ মূল্য জানব, পছন্দের প্যাকেজ নির্বাচন করব, টাকা পরিশোধ করব, ভ্রমণ করে আসব। কিন্তু আমাদের হজব্যবস্থার যাত্রা উল্টো। এখানে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, এরপর প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। যেহেতু হজের অনেক কিছু সরকার এখন কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই পুরো ব্যবস্থা অনলাইনকেন্দ্রিক হওয়া উচিত।

সমস্যার সমাধান পেতে হজ হেল্পলাইন ১৬১৩৬–এ যোগাযোগ করি। তাদের জানালাম সরকার ঘোষিত প্যাকেজ আমার এজেন্সি অফার করছে না। জিজ্ঞাসা করলাম, এখন কী করব। তারা আমাকে বারবার বলল এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে।

আমি বললাম, তারা তো সরকারের ঘোষণাই মানে না, আমার কথা কীভাবে শুনবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি এজেন্সি পরিবর্তন করতে পারব কি না। তারা জানাল, পারব না।

জিজ্ঞাসা করলাম বেসরকারি মাধ্যমে না গিয়ে সরকারি মাধ্যমে যাওয়া যাবে কি না। তিনি পরামর্শ দিলেন মন্ত্রণালয়ের লিখিত আবেদন করতে। তাঁকে জানালাম, আমার থেকে টাকা নিয়ে সরকার আমাকে এজেন্সির কাছে জিম্মি করে ফেলল।

হজ হোক বা ভ্রমণ হোক—শুরু হওয়া উচিত প্যাকেজ মূল্য জানিয়ে। আমি প্যাকেজ মূল্য জানব, পছন্দের প্যাকেজ নির্বাচন করব, টাকা পরিশোধ করব, ভ্রমণ করে আসব।

কিন্তু আমাদের হজব্যবস্থার যাত্রা উল্টো। এখানে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, এরপর প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। যেহেতু হজের অনেক কিছু সরকার এখন কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই পুরো ব্যবস্থা অনলাইনকেন্দ্রিক হওয়া উচিত।

এজেন্সিগুলো সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে প্যাকেজ অফার করবে। হজ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বাসায় বসে কিংবা নিকটস্থ দোকান থেকে অনলাইনে ফি পরিশোধ করবে। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারও এ ধরনের সেবা দিতে পারে।

পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এজেন্সি বা মাধ্যম (সরকারি/বেসরকারি) পরিবর্তন করা যাবে। মানুষ হজ শেষে তার এজেন্সিকে রেটিং বা ফিডব্যাক দিতে পারবে, যাতে ভবিষ্যতে ভালো এজেন্সিরা আর ভালো সেবা দিতে পারে। কোনো এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা সমাধানের জন্য একটি সেল থাকতে হবে, যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেবে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, হজ ব্যবসায়ীদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশ একমাত্র মুসলিম দেশ, যে দেশে রমজান মাসে মোটামুটি সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় আর কোরবানির ঈদের সময় হজের খরচ বা পশুর দাম অসহনীয় করে তোলা হয়। আমরা এর থেকে কীভাবে মুক্তি পাব? ব্যবসার নামে আল্লাহর ইবাদতে এভাবে বাধা তৈরি করে রাখার মানসিকতা আমাদের থেকে কবে দূরে হবে? সূত্র : প্রথমআলো

মোহাম্মদ নুর হোসাইন

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, একজন ভুক্তভোগী

ই–মেইল: nur@sohopathi.com

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়