মহসিন কবির: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় গায়ক মাকসুদুল হক। এ পোস্ট দিয়ে নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েছেন গায়ক মাকসুদ।
মুহূর্তের মধ্যেই গায়কের পোস্টটি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হযয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। মন্তব্য ঘরে কেউ কেউ মাকসুদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি এমনভাবে সমালোচনা করতে পারলেন!’
ফেসবুক পোস্টে ‘বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে: হাসনাত’- এমন শিরোনামের একটি সংবাদের ফটোকার্ড শেয়ার দিয়েছিলেন মাকসুদ। আর তার ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘পূর্বাভাস: ডরাস ক্যা জিহাদি ভাই? ফাঁসি তো খুবই মামুলি জিনিস- তা হয় কারাগারের অভ্যন্তরে। কেউ স্বচক্ষে তা আজ অব্দি দেখে নাই। মাগার তোদের ফাঁসি বা জবাহ আমরা ফেসবুক ইউটিউব ও সকল টিভি চ্যানেলে সরাসরি লাইভ বা আনসেন্সর্ড দেখুম ইনশাআল্লাহ। ভালো কথা “জম তুপি” পইড়া আমাগো “মজা” নষ্ট করিস না মামা। এনকেলাপ ঝিন্দাভাত।’
তবে এই পোস্টটি এখন আর মাকসুদের টাইমলাইনে খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে পোস্টটির স্ক্রিনশট এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নেটদুনিয়ায়।
এ প্রসঙ্গে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন মাকসুদ। সেখানে তিনি লিখেন, ‘শুভ সকাল। ডরাই নাই! পোস্টটি আমি না ফেসবুক “রিপোর্ট”-এর ঠেলায় “রিমুভ” করসে।’
এর আগে ১২ নভেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। যেখানে তিনি লিখেন, ‘রাজনীতিবিদরা হাত মেলাচ্ছে, আর বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে।’ তার এই মন্তব্যটি মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। আর এ নিয়ে খবরের শিরোনামও হন তিনি।
কমরেড মাহমুদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ম্যাক হক কে চিনছেন? মেলায় যাইরে গানের গায়ক মাকসুদ। সেই মাকসুদ এখন নাম নিছে ম্যাক। বিপ্লবীদের জ*/বা/-ই করার হুমকি দিচ্ছে!! এই ফ্যাসিস্ট খু*নি মুজিববাদীদের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বললেই আপনাকে দুর্বল ভাবে। এখনো সময় আছে মুজিববাদীদের গু*ড়ি*য়ে দিন। হ*ত্যা*র হুমকির জন্য মাকসুদকে আইনের অধিনে আনুন। এই মিশনে আর কারা কারা জড়িত রিম্যান্ডে নিলেই বের হয়ে যাবে।
সাজ্জাদ শরীফ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আহা!আমাদের শৈশবের প্রিয় ব্যান্ড ফিডব্যাক এর মাকসুদ এর কি অবস্থা।একজন পটেনশিয়াল খুনী,যে সুযোগ পেলেই আমাদের খুন করে ফেলবে!একজন আওয়ামী লীগারও কি নাই যে জুলাই গনহত্যার জন্য অনুতপ্ত?
আমি তো দেখি বরং এর অনুতপ্ত তো নয়ই বরং উলটা আরও দ্বিগুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রিভেঞ্জ নেয়ার জন্য। এরকম হুমকি দিয়ে পোস্ট দেয়ার পরও bangladesh police কি করে? সকালে আবার তার ওই রিলেটেড পোস্টে লাইক দিয়েছে আরেক পটেনশিয়াল খুনী মেহের আফরোজ শাওন।
মির্জা মুজাহিদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, মাকসুদ কে একটা ফিডব্যাক দিই। লাইভ টেলিকাস্টে মাকসুদ কে একটা চেয়ারে বসানো হবে, সম্মানের সাথে। সামনে একটা প্রজেক্টর স্ক্রীন, বা পাশে বসবেন বিচারক।
স্ক্রীনে যাত্রাবাড়ির ম্যাস কিলিং এর দুইটা ভিডিও, এপিসি থেকে নাইম এর লাশ ফেলে দেয়ার দৃশ্য , বনশ্রীর পয়েন্ট ব্লযাংক শুট আর আশুলিয়ার ভ্যানে করে লাশ তোলার ঘটনা- আপাতত এই কয়টা ভিডিও দেখিয়ে উনাকে প্রশ্ন করা হবে 'এই খুনগুলো কে করেছে?' উনার যে উত্তরটা আমরা লাইভ টেলিকাস্টে দেখব ওটাই উনার 'মেন্টাল স্ট্যাটাস' - উনার মানসিক অবস্থার মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে তারপর বিচার প্রক্রিয়া চলতে পারে। এইটুকু উনি ডিজার্ভ করেন।
সোলায়মান আহমেদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ব্যান্ড শিল্পী মাকসুদ এর গান এতো পছন্দ করতাম কিন্তু তার চিন্তাভাবনা এতো নীচু প্রকৃতির। পছন্দ নাই করতে পারেন কিন্তু এই ধরনের বাজে লেখা আপনাদের মতো শিল্পীদের কাছ থেকে পেয়ে সত্যিই হতাশ হলাম।
রুশাদ ফরিদী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, মাকসুদ নেশার ঘোরে হোক বা সজ্ঞানেই হোক এইরকম ঘৃ-না-পূর্ণ নৃ-শং-স পোস্ট দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে আ-ই-নী প্রক্রিয়ায় ক-ঠো-র ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। একটা বয়সে ফিডব্যাকের মাকসুদ বলতে সবাই অজ্ঞান ছিলাম। আজকে সকাল পর্যন্ত সেই ভালোলাগা অনেকটাই ছিল। এখন মনের অন্ত:স্থল থেকে ঘৃ-না আসছে। ছিইইই!
ইলোরা জামান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, যে সাইকো মাকসুদ নিজের স্ত্রীকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন করে দিব্যি পার পেয়ে যেতে পারে, মিডিয়ায় কোনো রকম উচ্চবাচ্চ ছাড়াই, আবার মানুষ তাকে শোনেও, তার কাছ থেকে এইধরনের সিক কথা বার্তাতো আসবেই। এগুলো আপনাদের পাওনা। আপনারাই এই সাইকোদের মাথায় ওঠান। বাছ বিচার না করেই।
লজ্জা না থাকা মানুষেরা ভয়ংকর হয়। সমাজে অসম্মানিত হওয়াকে যে পাত্তা দেয় না, সে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অসংলগ্ন ও বেপরোয়া হয়ে উঠবেই। শেষমেশ সিক মেন্টালিটির সাইকো হয়ে উঠবেই। অনেক দেখেছি।
এজন্যই আমি মানুষের নৈতিকতাকে মূল্য দেই। যাকে আমার অনৈতিক মনে হয় তার কোনো ধরনের নাচা-গানা, সাংস্কৃতিক কিছু কিংবা গঠনমূলক কাজকেও আমি পাত্তা দেইনা। সে যতবড় তালেবরই হোক না কেন। ঘেন্না করে।
আবদুল্লাহ তাহের নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আমার এককালের প্রিয় শিল্পী মাকসুদ এই ভাষায় লিখতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারিনা। অথচ তার বাংলাদেশ, গনতন্ত্র এইসব গান আমাদেরকে অনুপ্রেরণা দিতো।
দেশকে কারাগার আর গুম খুনের অভয়ারণ্য বানানো ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সময়ের সাহসী তরুনদের জবাই করার আস্ফালন নিশ্চয়ই একধরনের অপরাধ। পাবলিকলি এই হুমকি দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে আহ্বান করছি। Sorry ব্রাদার আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে আজ থেকে বয়কট করলাম।
মিনহাজ রশিদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, এর আগে হারপিক একই কথা বলছে, এরপর এই ফিডব্যাকের মাকসুদ ওরফে ম্যাক ডিরেক্ট হত্যার হুমকি দিলো। এরা পালায়ে গিয়েও এভাবে হুমকি দেয়। চিন্তা করতে পারেন?
এতবড় গনহত্যার পরও এদের কর্মীদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। এদের সাথে কীরকম আচরণ করতে হবে সেটা যদি বুঝতে না পারেন, তবে আফসোস।
আপনি যখন এদের সাথে ডিল করবেন, তখন এরা যে পদ্ধতি বোঝে সে পদ্ধতিই প্রয়োগ করতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে এদের ঠিক করতে পারবেন না।
শওকত আলী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, মাকসুদ,বিখ্যাত গায়ক! সেও একজন রক্তপিপাসু! মানে যেই ই হোক না কেন,BAL মানেই রক্তপিপাসু হবে এইটা অবধারিত। এদের মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নাই,অনুশোচনা তো দূর কি বাত। উলটা এইসব বলতেসে! ও কি দেশে না বাইরে? দেশে হলে ওরে ধরা হবে না কেন? হুমকি কি অপরাধ এর পর্যায়ে পড়ে না?।
যদিও পোস্টটি পরবর্তী সময়ে আর মাকসুদের টাইমলাইনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আজ (১৮ নভেম্বর) সকালে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। বলেন, ‘‘শুভ সকাল। ডরাই নাই! পোস্টটি আমি না ফেসবুক ‘রিপোর্ট’-এর ঠেলায় ‘রিমুভ’ করসে।’’
প্রসঙ্গত, ১২ নভেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। যেখানে তিনি লেখেন, ‘রাজনীতিবিদরা হাত মেলাচ্ছে, আর বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে।’ এরপরই তাঁর এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খবরের শিরোনাম হন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :