গতকাল রবিবার শপথগ্রহণের পরই শুভেচ্ছায় ভাসছেন এই নির্মাতা। তাকে নিয়ে সহকর্মী ও ভক্তরা সকলেই লিখছেন ফেসবুকে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বরেণ্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
একদিকে যেমন শুভেচ্ছাবার্তা, অন্যদিকে আবার ফারুকীকে নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। বিগত সরকার আমলের (আওয়ামী লীগ) নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার পুরোনো ছবিগুলো এখন ফেসবুক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তিশার (ফারুকীর স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা) শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয়ের বিষয়েও প্রশ্ন তুলে হচ্ছে। ফারুকীকের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা মাঝে কথা বলেছেন জনপ্রিয় মিডিয়াকর্মী আব্দুন নূর তুষার।
দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপদেষ্টা হয়েছে এতে এত দাহের কিছু নাই। কেউ নিজে নিজে গিয়ে এইসব আসনে বসে পড়ে না। তাকে পছন্দ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা- তাকে ও তার সঙ্গে অন্যদের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সে কেবল এই নিয়োগে সম্মতি দিয়েছে। আমরা দেখি, সে কেমন কাজ করে! যারা বিশ্বাসী তারা নিশ্চয়ই মানবেন যে, এসব পদ-পদবি ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। এর কোনো যুক্তি নাই। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন অথবা কেড়ে নেন। চাকরি বা পরীক্ষা যোগ্যতায় হয়- ক্ষমতা ও পদ লাভ সবসময় যোগ্যতা নয়। এখানে পছন্দ-অপছন্দ ভাগ্য সময় বহু প্রভাবক কাজ করে। আমি এই নিয়োগে আনন্দিত।’
সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্র পরিসরের একটি মন্ত্রণালয়। এর বাজেটও কম। এর ক্ষমতাও কম। এখানে এর আগে আসাদুজ্জামান নূর বেশ কিছুদিন মন্ত্রী ছিলেন। সংস্কৃতি জগতের নামকরা লোকজন এখানে গেলে সেটা ভালোই। সমস্যা হলো যারা ইন্টারনেটে গালাগালি করে গালিব হয়েছিলেন সেই গালিভারগুলো গালির ভারেই ডুবে গেলেন। দেশ পরিচালনায় ভাগ পেলেন না। এখন তারা ফারুকীর ছিদ্র খুঁজতে শুরু করেছেন। ভাই, এই পছন্দটি একজন নোবেল বিজয়ীর পছন্দ। যিনি আপনাদেরই পছন্দের লোক। আপনারা তার ওপরে আস্থা রাখেন। পোস্ট দেন, ভিডিও দেন, গালি দিয়েন না। গালি দিয়ে যে কাজ হয় না, সেটা এখন অন্তত বোঝেন। আর এটাও মন দিয়ে বোঝেন যে, শক্তিশালী লোককে গালাগাল দিতে হয় না। এখন আপনারা দ্রুত নিঃসঙ্গ হবেন। কারণ আপনাদের চারপাশ থেকে ভক্তকুল সরে যাবে। যেহেতু আপনারা মৌচাকে ঢিল মেরেছেন- মধু মোম কিছুই পান নাই।’
আব্দুন নূর তুষার আরও লিখেছেন, ‘অন্যদিকে যারা আপনাদের পাশে থেকে কথা বলার কথা ছিল, তারা গালাগালি খেয়ে এরই মধ্যে আপনাদের পরিত্যাগ করেছে। প্রকৃত যৌক্তিক মানুষদের আর পাশে পাবেন না। এখন নিজেরা নিজেরা দ্রুতগতিতে একে অন্যের বিরুদ্ধে চলে যাবেন। এটাই গালাগালির পরিণতি। মনে আছে আমার “ম্যারিকো” শেষ হয়ে গেছে বয়কটে- একথা বলে এক লোক আমার সঙ্গে এমন কুতর্ক করলেন ও গালাগাল দিলেন যে আমি আর কথা বাড়ালাম না। আজকে শেয়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রদানকারী প্রথম দশটি কোম্পানির একটি কিন্তু ম্যারিকো। এখন প্রমাণিত যে, তিনি ভক্তদের মিথ্যা বলেছেন তখন। এদের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন ক্রমশই কমবে। ফারুকী যা ঠিক মনে করত সেটাই বলত। এটাই তার শক্তি। সে নিজের কথা বলার শক্তি রেখেছে। কিছু পারুক বা না পারুক- আমি ফারুকীর এই সম্মানপ্রাপ্তির বিষয়টিতে খুশি।’
ভিআইপিদের প্রটোকলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই দেশে আগামীতে সংস্কৃতিকর্মীদের দুর্দশা আরও বাড়বে। অন্তত আমার একটা ভাই তো সাময়িক পতাকার গাড়ি ও ক্ষমতা পেল। এই শহরে আমার সবচেয়ে বিরক্তির কারণ ছিল ভিআইপিদের গাড়ির সামনে মাইকে পুলিশের সরেন, সরেন বামে যান বলে লাল বাটন নেড়ে আগের গাড়িকে সরতে বলা। এবার অন্তত দুজনকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার সময় আমি জানবো পেছনে ভাই আছে। একজন ফারুকী আরেকজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। আর যদি এই রাস্তা ছেড়ে দেওয়া দাসের অনুভূতি থেকে মুক্তি পাই তবে ভাবব তারা কিছুটা হলেও নিয়ম বদল করেছে।’
পুরোনো একটি ঘটনা শেয়ার করে তুষার বলেন, ‘প্রফেসর সি এস করীম আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি উপদেষ্টা হবার পর আমি একদিন তার গাড়িতে চড়েছিলাম। তিনি সাইরেন বাজাতে দিলেন না। পুলিশকে সরেন সরেন বলতে দিলেন না। আমরা গল্প করতে করতে তার বাড়ির দিকে গেলাম। তিনি তার আদাবরের বাড়ির সামনে পুলিশকে না বসিয়ে ভেতরে বসাতেন। বলতেন এসব তো সাময়িক। বাড়ির সামনে পুলিশ বসিয়ে রাখা তার কাছে ভালো লাগে না। পাহারা ভেতরে বসেও দেওয়া যায়। ক্ষমতার প্রদর্শন বিষয়টা লজ্জার।’
সবশেষ তিনি লিখেছেন, ‘আমার ধারণা এরকম ছোট কাজ দিয়েই বোঝা যায় মানুষটা কত বড়। ফারুকী ও সায়েদুর ভাই ছোট ছোট ভালো কাজ করবেন- এটাই আশা করি।’
আপনার মতামত লিখুন :