শিরোনাম
◈ নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে ৫ জনের নাম দিলো বিএনপি ◈ ট্রাম্পের জয়ে ডলার আরো শক্তিশালী, অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য একযোগে কখনো এতটা বাড়েনি ◈ শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন কাজে পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ মিলবে : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ◈ গ্রাহকদের প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ বাংলাদেশের ১৩ ক্রিকেটার আইপিএলের মেগা নিলামে ◈ আমি যুদ্ধ শুরু করব না, আমি যুদ্ধ বন্ধ করে দেব : বিজয়ী ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থকে এগিয়ে নিতে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চান শেখ হাসিনা ◈ ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে খালিদ মহিউদ্দিনের টক শো, যা বললেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম ◈ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে ব্রাজিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ◈ ৩১ হাজার পিস টাপেন্টাডল ও ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৫৮ দুপুর
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭ নভেম্বর মুক্তির মিছিলের প্রজ¦লিত অগ্নি শিখা

 শাহাজাদা এমরান : ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ (১৯৭১), ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি’ (১৯৭৫),বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী,গণতন্ত্র, সাম্য, মৈত্রী ও সর্বোপরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এই শব্দগুলো একই সূত্রে গাঁথা। 

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মূল তাৎপর্য বুঝতে হলে আপনাকে সর্বাগ্রে উপরের প্রতিটি বাক্যকে নিঁখুত ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। একটির সাথে অপরটি এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে, কোন একটিকে বাদ দিলে আপনি ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বুঝতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। আর এর প্রতিটি শব্দের সাথেই জড়িয়ে আছে এদেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা ও বিশে^র দরবারে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশী জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়ার গৌরবের বীরত্ব গাঁথার ইতিহাস। আর এই গৌরবকে যিনি অর্জন করে দিয়েছেন, তিনি হলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের  প্রবর্তক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপদ্রষ্টা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা  ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন ঘুমন্ত অসহায় নিরস্ত্র বাংলাদেশের মানুষের উপর হায়েনাদের মতো বর্বোরেচিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ,২৬ মার্চ সকালে যখন দেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ও রূপসা থেকে পাথুরিয়ায় আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব মুহুর্তের মধ্যে শূণ্য হয়ে গিয়েছিল,সারা জাতি যখন এক মহা রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূণ্যতার মধ্যে পড়ে হানাদার বাহিনীর বন্দুুকের নলের মধ্যে থেকে নিজেদের জীবনকে পরম করুনাময় আল্লাহ্র কাছে সঁপে দিয়েছিল । ঠিক এর পর দিনই জাতির সামনে ত্রাতা হিসেবে আভিভূর্ত হয় একটি নাম, জিয়াউর রহমান। যিনি ২৭ মার্চ ১৯৭১  চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি....।

মুহুর্তের মধ্যেই তৎকালীন দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ জেনে গেল, না, আমরা আর নিরস্ত্র নেই, আমরা একা নই। এটা কোন গন্ডগোল নয়। এটা হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ, জনযুদ্ধ,আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। যেই যুদ্ধে ছিল আমাদের সামনে আমাদের বাঙ্গালি সেনাবাহিনীর অফিসার ও জওয়ানরা। তখন সারা দেশের নানা প্রান্তে জীবনের মায়ায় পালিয়ে থাকা আওয়ামীলীগ নেতৃত্বও জেনে গেল, অকুতোভয় সৈনিক মেজর জিয়ার নেতৃত্বে  আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নেমে গেছে। শুরু হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হলো। জিয়াউর রহমান ফিরে গেলেন ব্যারাকে। 

স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সেনাবাহিনীর এক দল বিপদগামী সদস্যদের দ্বারা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মম ভাবে নিহত হন। ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামীলীগেরই এমপি, মন্ত্রী ও দলীয় নেতারা। এরপর চলতে থাকে একের পর এক নানা নাটকিয়তা। ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যšত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব । যে  স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের  জন্য এদেশের ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছিল আর সম্ভ্রম হারিয়েছিল দুই লক্ষ মা-বোন। 

৩ নভেম্বরের  সেই দিন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর আরেকটি উচ্চাভিলাষী দল তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের ৬ ময়নুল রোডের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে  অরাজকতার সকল সীমা লঙ্গিত হয়। এ ঘটনা দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সেনা ছাউনিতে থাকা জওয়ানরা। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। 

তাদের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমেই রক্ষা পায় সদ্য অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কয়েকদিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষে সিপাহী-জনতা ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের  প্রবর্তক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপদ্রষ্টা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে মুক্ত করে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে। তাই ৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের এক অনন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যমন্ডিত দিন। সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদ, একনায়কতস্ত্র, একদলীয় শাসন, জনজীবনের বিশৃঙ্খলাসহ তখনকার বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটে। একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে দেশ একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে ফিরে আসে।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তৎকালীন বহুল প্রচারিত দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন।  ৬ নভেম্বর  বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা।

সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভন্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়। যেমনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট।

৭ নভেম্বরের চেতনাই হচ্ছে-বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা. স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।

৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছিলাম। আইনের শাসন, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে এসেছিল। দেশ, জনগণ, স্বাধিকারসহ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনা অর্জিত হয়েছিল। এই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি পেয়েছিল এক যোগ্য নেতৃত্ব জিয়াউর রহমানকে, যিনি ’৭১-এ জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন।

কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্রগ্রামে সেনাবাহিনীরই আরেকটি পরাজিত শক্তির হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জাতির ভাগ্যাকাশে আবার ধেয়ে আসে কালো মেঘ। ক্রমান্বয়ে নানা ভাবে নানা সময়ে আমরা ৭ নভেম্বরের মূল স্পিরিট থেকে বিচ্যুত্তি হয়ে পড়ি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ৭ নভেম্বরের ট্রেনকে লাইনচ্যুত করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আবার সেই ছাত্র জনতার সম্মিলিত প্রয়াসে ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেই ট্রেন আবার লাইনে ফিরে এসেছে। 

এবার সময় এসেছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে দেওয়া। তাহলেই জেগে উঠবে প্রিয় স্বদেশ,পথ হারাবে না মোদের বাংলাদেশ। 

লেখক : সাংবাদিক,সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, মোবাইল : ০১৭১১-৩৮৮৩০৮

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়