শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:৪১ বিকাল
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুমনের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তি যে ভুলটা করেছেন : আনিস আলমগীর

সাংবাদিক আনিস আলমগীর এর ফেসবুক থেকে নেয়া :  
 
বাংলাদেশে সিটিজেন জার্নালিজম কে শুরু করেছে আমি জানি না। তবে ব্যারিস্টার সুমনকে আমি এই কৃতিত্ব দিতে চাই। হঠাৎ কোথাও অনিয়ম দেখলে সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা, অনিয়মটা তুলে ধরার জন্য ফেইসবুক লাইভে আসার কাজটা তার আগে কেউ করেছে কিনা, আমার চোখে পড়েনি।
 
তার কাজটা আমার খারাপ লাগত না। আঞ্চলিক ভাষায় নিজস্ব ঢঙে তিনি চেষ্টা করেছিলেন এবং সফলও হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ তার ফলোয়ার ছিল।
 
আমি একদিন হাইকোর্টে প্রবেশ করছিলাম, আমার গাড়ির ড্রাইভার তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। আমি তার চোখ দিয়েই দেখেছি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যারিস্টার সুমনের জনপ্রিয়তা।
 
তার সঙ্গে আমার কখনো কথা হয়নি। হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে একদিন তাকে উল্কার গতিতে হাঁটতে দেখেছিলাম, আসলে সবসময়ই তাকে তেমনই দেখি। আমি পেছন থেকে তার হাতে স্পর্শ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলাম। তিনি দাঁড়ালেন, আমার মুখের দিকে তাকালেন, কিছু না বলে বা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সামনে চলে গেলেন।
 
১০/২০ হাত এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং ফিরে আমার দিকে তাকালেন। সম্ভবত তার মনে হয়েছিল আমি পেছন পেছন দৌড়ে গিয়ে "সুমন ভাই, সুমন ভাই" বলব। তার এই আচরণ আমার কাছে খুব অদ্ভুত লেগেছিল।
 
ভাই, আমি কোনো সিনেমার নায়ক নই, কিন্তু "সেলিব্রেটি কাল্ট" আমার দেখা হয়ে গেছে। ইরাক যুদ্ধ কভার করার পর রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন—এটা শুধু নয়, রাস্তায় সাধারণ জনগণ আমাকে ছুঁয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছে—"আপনি সেই আনিস আলমগীর!"
 
তাই যখন কেউ আমার সাথে "বালছাল ভাব" দেখায়, আমি হাসি। আমাকে যখন লোকজন ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছে তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। আর এখন যখন হিরো আলমও সোশ্যাল মিডিয়ার সেলিব্রিটি, তখন তোমার সুমনের ভাব নেওয়ার দরকার নাই।
 
কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল এই জনপ্রিয়তা ও অহংকার তাকে শেষ করে দেবে। তখন সে সদ্য এমপি হয়েছে। পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তবে আমি তাকে জনগণের ইস্যুতে কথা বলতে তেমন দেখিনি।
 
আমি সেদিন তাকে অনুরোধ করতে চেয়েছিলাম, যেন তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ব্যাপারে সংসদে কথা বলেন। বাংলাদেশে এই কালো আইনের মাধ্যমে হাজারো পুরুষ নির্যাতিত হচ্ছে। এই আইনে ৪০ বছরের একজন পতিতাও যদি কোনো পুরুষের সঙ্গে একটা সেলফি তুলে আদালতে গিয়ে বলে যে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে, তবে সেই পুরুষের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
 
খালেদা জিয়ার আমলে তৈরি এই আইনটি শেখ হাসিনা সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ড সংযোজন করেছেন।
আমি চেয়েছিলাম সুমন যেন সংসদে এই বিষয়ে কথা বলেন। কারণ সে নিজেই একজন আইনজীবী, তার মতো এই আইনের দুর্বলতা আর কেউ ভালো বুঝবে না। যাই হোক, আমার কথা বলা হয়নি, এবং তার এমপি পদও থাকেনি।
 
গতকাল গভীর রাতে দেখলাম ব্যারিস্টার সুমনকে পুলিশ মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ দেখলাম, পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। তাকে যেসব মামলায় ধরা হয়েছে, হত্যামামলার আসামি করা হয়েছে—এসব আমার কাছে প্রহসনমূলক মনে হয়েছে। আশা করছি, সে যদি সত্যিকার অর্থে কোনো খারাপ কাজ করে থাকে তবে তার বিচার হবে, কিন্তু প্রহসনমূলক বিচার আমি চাই না।
 
সুমনের মতো একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি যে ভুলটা করেছেন, তা হলো জনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদে এসেছিলেন, জনগণ আশা করেছিল তিনি আওয়ামী লীগের গোলামী করবেন না। তার কণ্ঠে নিন্দা ও প্রশংসা দুটোই থাকবে। কিন্তু শেষমেশ তিনি ছাত্র-জনতা দমন আন্দোলনকে সমর্থন করলেন।
 
এভাবেই আমাদের জনগণের আশাকে হতাশায় পরিণত করে রাজনৈতিক নেতারা। সুমনও তার ব্যতিক্রম হতে পারলেন না—যা হওয়া উচিত ছিল, এবং সেটাই খারাপ লাগছে।
 
জানি না, তার মতো তরুণ নেতারা ভুল স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলে হয়তো একদিন ক্ষমাও পেয়ে যাবেন, নাকি ইতিহাসের আঁস্তাকুঁড়ে চলে যাবেন।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়