শিরোনাম
◈ যে কারণে বাংলাদেশকে লাখ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হচ্ছে ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা, বেশির ভাগই ভারতে অবস্থান করছেন ◈ আওয়ামী লীগ এখনই নিষিদ্ধ নয়, তবে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে : উপদেষ্টা নাহিদ ◈ ক্ষমতার ভারসাম্য, একজন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় : বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:২১ রাত
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বড়ো মানুষের বড় অভাব।। 

নাসির উদ্দিন, ফেসবুক থেকে নেয়া : 'বাঙ্গালীকে বেশি প্রশংসা করতে নেই। করলেই তারা আকাশে উঠে যায়। আকাশে উঠে গেলেও ক্ষতি ছিল না। সমস্যা হলো আকাশ থেকে থুথু ফেলা শুরু করে'।  উদ্বৃতিটি কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কুটু মিয়া উপন্যাসের। সাহিত্য হলেও কথাগুলো প্রবচন ধরনের।

প্রবচন শব্দটি সংস্কৃত। লোকমুখে প্রচলিত দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় উক্তির নাম প্রবচন। জীবনের কোনো গভীর সত্যের সরল প্রকাশ। কোনো বক্তব্যের স্বচ্ছন্দ, ইঙ্গিতময় ও আন্তরিক বর্ণনা। প্রবচন আদিতে উপদেশ ও শাস্ত্রবাক্যে ব্যবহৃত হতো। প্রাক বৈদিক যুগ থেকেই এর প্রচলন। 

বাঙ্গালী প্রকৃতই বড়ো মাপের মানুষ হওয়ার সক্ষমতা রাখে না। এটা রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু সবার বেলায় প্রযোজ্য। ড. ইউনুসকে বড়ো মানুষ ভাবার লোকেরও কমতি নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনুসের সরাসরি ছাত্র একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো ইমরুল হাসান তাদের একজন। সেদিন গভীর রাতে এ সম্পর্কে এক ঘন্টা পজিটিভ অনেক কথা হলো তার সাথে। তিনি আবার আওয়ামী লীগেরই অনুসারী। দলের প্রতি তারও যথেষ্ট আবেগ রয়েছে। 
কিন্তু রিসেট বাটনে পুস ইস্যুটি নিয়ে ড. ইউনুসকে পরিমাপে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ঋণাত্মকই। কারণ তিনি যে ভঙ্গিতে এবং শব্দপ্রয়োগে কথাগুলো উল্লেখ করেছেন সেটি বড়ো মাপের ব্যক্তিত্বের সাথে যায়না। তিনি বড়ো মাপের মানুষ নন। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও তার অবজ্ঞা স্পষ্ট। এটা স্বাধীনতার প্রতি ধৃষ্টতা। আমার আপত্তি সেখানেই। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে ১৯৭১ কে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। আবার ৪৭ এর অমীমাংসিত রাজনৈতিক চেতনাকে উপেক্ষা করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি অসম্ভব। তবে মূল বক্তব্যটি তিনি রেখেছেন ছাত্রদের রেফারেন্সে। অর্থাৎ রিসেট বাটন কথাটি তার নয়, ছাত্রদের। 

দেখে নেই, প্রশ্নকর্তার প্রসঙ্গটি, "ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। যা এখন জাদুঘর। সেটি বিনষ্ট করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শোক দিবস হিসাবে ১৫ অগাস্টের ছুটি বাতিল হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের বহু ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে"।

প্রশ্নটি ছিলো, “এ নিয়ে সমালোচনা আছে। অনেকে বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফ্যাসিবাদের আইকন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?”

ড. ইউনূস এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। বরং তিনি বলেন, “আপনি পুরনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো।”

“কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনও প্রশ্ন নাই। কেন প্রাণ দিলো?” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।
এর পরই তিনি বলেন, “প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন। অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।”

 তাপসী তাবাসসুম উর্মী। বহুল চর্চিত ইস্যু। বিশেষ করে আওয়ামী ঘরাণায়। কারণ, তলিয়ে যাওয়ার সময় বেঁচে থাকার খড়কুটো। এটি আওয়ামী লীগের জন্য ভীষণ দৈন্যতার। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও দল হয়ে উঠতে পারেনি তারা। চেষ্টাও করেনি। বৃহৎ এই দলটির এখন কোনো নেতা কর্মী নেই। সমর্থকরাই এখন নেতা। তবে সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরেই দলের প্রতি রয়েছে ব্যাপক প্রভাব ও আবেগ। এই আবেগের ওপরই ঘুরে দাঁড়িয়ে যায় দলটি।

অন্তর্জালে সমর্থকরা ফের আবেগময় যুদ্ধ শুরু করেছে। উর্মী এবং আরও ছোট ছোট ইস্যু নিয়ে তারা ভীষণ সরব।
যদিও দলের প্রধান শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের  লুটপাট দুর্ণীতির ইস্যুটি বিশ্বজুড়ে বহুল চর্চিত বিষয়। বলা হচ্ছে আরব শেখদের রাজত্বের বাইরে বিশ্বের আর কোনো নেতৃত্বের এমন অর্থমোহের কলঙ্কজনক ইতিহাস নেই। এমনকি এই শেখ পরিবার ক্ষেত্রবিশেষে আরব শেখদেরও ছাড়িয়ে গেছে। মূলত বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল শেখ পরিবারের পারিবারিক সাম্রাজ্যে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাট ছিল শেখ হাসিনার সবচেয়ে উপাদেয় খাদ্য। তাঁর স্বজনতোষী ক্রনি ক্যাপিটেলের মাধ্যমে দেশ, লুন্ঠনের এক স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। লুটের উদ্দেশ্যে মেগা প্রকল্পগুলোতে মূল ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানো হতো। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের 'গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প' দাবি করেছে, শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। তার ছেলে জয় ও বোন রেহানার মেয়ে টিউলিপের মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক এই দূর্ণীতিতে সহায়তা করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ব্যয় করলেও ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশী হওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী। এক্ষেত্রে প্রাক্কলন পর্যায়েই অতিরিক্ত ব্যয় ধরে অগ্রিম অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। রূপপুর কেন্দ্রটি ২৪ শ মেগাওয়াট ক্ষমতার। অথচ একই দেশ ও প্রতিষ্ঠান ভারতের কুদানকুলামে ৬ হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণ করছে মাত্র ৬.৯৭ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায় প্রতিদিন এই পরিবার এবং দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদেরও দূর্ণীতির ফিরিস্তি দেখলে ভীমড়ি খেতে হয়। এতো দূর্ণীতি স্বত্ত্বেও শেখ পরিবারের প্রতি সমর্থকদের এমন আবেগের বিষয়টি বিস্ময়কর। 

উর্মী একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সরকারি চাকরিজীবীদের ৭৯–এর কন্ডাক্ট রুল অনুযায়ী আচরণ করবেন। তার আচরণ সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারবে না। সেটাই কন্ডাক্ট রুলের ২৩-এ তে বলা আছে। এই শপথ নিয়েই তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই বিপ্লব করার জন্য নয়। ফলে স্পষ্টতই তিনি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এখন তাকেই অতি আবেগের মাশুল গুণতে হবে। আবার এমন নয় যে তাকেও বড়ো মানুষের মাপকাঠিতে ফেলা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়