শিরোনাম
◈ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা নদী ও সাগরে মাছ শিকারে  ◈ "ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে আ.লীগ" ◈ ইসরায়েলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ◈ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হচ্ছে যেভাবে  ◈ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন, খালি পেটে রাষ্ট্র সংস্কারের আলাপ মাথায় ঢুকবে না: হাসনাত ◈ অতীতের সুনাম, ঐতিহ্য ও গৌরব ফেরাতে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে ছাত্রদল ◈ দেশে ডলার সরবরাহে সংকট ও দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে ◈ অন্তর্বর্তী সরকারকে অব্যাহত অর্থনৈতিক–রাজনৈতিক সমর্থনের আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের ◈ আগামীর রাজনীতি কেমন হবে ? ◈ সমুদ্রপথে হাজী পাঠানো গেলে বিমান থেকে ভাড়া ৪০ শতাংশ কমবে : ধর্ম উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:১৩ রাত
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘রিসেট বাটন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা, পরে ব্যাখ্যা

মহসিন কবির : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯-তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৭ সেপ্টেম্বর সেই সফরের সময় ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানেই ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথা বলেছিলেন।  

প্রায় ১৯ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে তার কাছে অন্তর্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াসহ আরও কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিলো।

সরকার পতনের পর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের যে বাড়িটি ছিল, যেটিকে পরবর্তী জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটিকে “বিনষ্ট” করা হয়েছে; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শোক দিবস হিসাবে ১৫ অগাস্টের (শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী) ছুটি বাতিল করা হয়েছে; শেখ মুজিবুর রহমানের বহু ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, এ নিয়ে সমালোচনা আছে। অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

উপস্থাপকের এ প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ড. ইউনূস। তিনি উপস্থাপককে বললেন, আপনি পুরনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো। কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনও প্রশ্ন নাই। কেন প্রাণ দিলো? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।

এর ঠিক পরেই তিনি বলেছেন, প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।

এভাবেই তিনি ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথা বলেছেন। এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। বিভিন্ন চন নানা ভাবে মন্তন্তব্য করেছেন। 

অনেকে বলছেন, চাইলেই অতীত মুছে দেওয়া যায় না। এমনকি, কেউ কেউ এও মনে করছেন, এই কথার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস প্রশ্নে মুহাম্মদ ইউনূস তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। কারও কারও মতে, এখানে কেবলই একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, এটিকে কেন্দ্র করে একদল মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছেন।

প্রবাসে থাকা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের  ফেইসবুকে লিখেন, যখন সংশোধন বা সিস্টেম ম্যালফাংশন ফিক্স করার আর কোনও উপায় থাকেনা, ঠিক তখন আপনাকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই রিসেট অপশন বা বাটন চাপ দিতে হয়।

সোহলে মানজুর নামে একজন ফেসবুকে লিখেন,  অনেকের কম্পিউটার জ্ঞানের বহর দেখলাম। পিসি ম্যালফাংশন করলে অনেক সময় রিসেট বাটন চাপলে ঠিক হয়ে যায়। এতে কিছুই ডিলিট হয়না।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আমার ইতিহাস উনি মুছে দেওয়ার কে?”

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ফেসবুকে লিখেছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গর্বিত অংশ এবং আমাদের সত্তা- ইতিহাস কোনোদিন রিসেট হতে পারে না I 
প্রধান উপদেষ্টা এবং ওনার প্রেস উইংকে ধন্যবাদ জানাই এই বিষয়টার ‘clarification’ দেয়ার জন্য। 

গীতি আরা নাসরিন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, রিসেট বাটন: ‘ড. ইউনূস নতুনভাবে শুরুর কথা বুঝিয়েছেন, ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি’।

সাজ্জাদ মজুমদার সাজু নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ড. ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথাটি উল্লেখ করে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, যা বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে, সেটি থেকে বের হয়ে এসে নতুনভাবে শুরু করার কথা বুঝিয়েছেন। তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি।

কামরুজ্জামন হুসেইন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথা বলে তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি। 

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের 'রিসেট বাটন' চাপা বিষয়ক মন্তব্যের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তার প্রেস উইং থেকে ১০ অক্টোবর বিবৃতি দিয়েছে।

এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস 'রিসেট বাটন' চাপার কথাটি উল্লেখ করে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, যা বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে, সেটি থেকে বের হয়ে এসে নতুনভাবে শুরু করার কথা বুঝিয়েছেন। তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি। 

এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ যখন কোনো ডিভাইসে রিসেট বোতাম চাপেন, তখন তিনি নতুন করে ডিভাইসটি চালু করতে সফটওয়্যার সেট করেন। এতে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন হয় না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে ঢাকায় আসার পর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে জনগণ নেতৃত্ব দিয়েছে। এটি আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। প্রথম স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে অধ্যাপক ইউনূস মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই তিনি বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন সরকারকে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচারণা শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করার জন্য তিনি বাংলাদেশ নিউজলেটার প্রকাশ করেছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়