শাহাজাদা এমরান : ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে আর কত জীবন দেবে বাংলাদেশের মানুষ ? দিনে দুপুরে এভাবে প্রকাশ্যে নির্বিচারে অন্যায় ভাবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করবে অন্য দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী এটা কি মেনে নেওয়া যায় ?
বিএসএফ যেটা করেছে সেটা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের সীমান্তে এমন ঘটনা আর ঘটেছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। ভারত এক্ষেত্রে সমস্ত ভদ্রতা, ভব্যতা,কূটনীতির রীতি সব কিছুকেই বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করে একের পর এক সীমান্তে হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্র নীতিই ভারতের এই আচরণকে ক্রমান্বয়ে উৎসাহিত করছে।
ভারতের সীমান্ত বাহিনীর হাতে সর্বশেষ হত্যার শিকার হয়েছে গত ৭ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার
সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের পাহাড়পুরের যশপুর এলাকায় । এই যশপুর বিউপি এলাকায় কামাল হোসেন নামের একজন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইতিমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহত কামালের মরদেহ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। হত্যা ও লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি আমাদের বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কুমিল্লার অধিনায়ক লে. কমান্ডার মো. ইফতেখার হোসেন নিশ্চিত করে
বলেছেন,নিহত কামাল ভারতের ২৫ গজের ভিতরে ডুকে গেছে।
আমি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, গত ১০ বছরে কমপক্ষে ১৫ শ বাংলাদেশীকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী
বাহিনী যা বিএসএফ নামে পরিচিত তারা গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা ভুলে যাইনি কুড়িগ্রামের
কাঁটাতারের বেড়াতে ঝুলিয়ে রাখা সেই ফেলানীর কথাও। কি অন্যায় করেছি আমরা? কি অপরাধ আমাদের? কেন এভাবে নির্মম ভাবে একের পর এক আমাদের দেশের নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এর জবাব কে দিবে? আমরা লক্ষ্য করছি গত ৫ আগস্ট ভারতের মদদ পুষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ভারত আমার দেশে একের পর এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিভিন্ন ঘটনা করে যাচ্ছে।
কোন দেশে যদি কেউ অনুপ্রবেশ করে তাহলে আন্তর্জাতিক একটি আইন আছে। অনুপ্রবেশকারীকে আগে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করে। কিন্তু তারা তাকে আটক না করে, গ্রেফতার না করে
আইনের হাতে সোপর্দ না করে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে। পৃথিবীর এমন কোন অসভ্য দেশ কি আছে
যারা এই হীন কাজটি করবে?
আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক । ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশ আমরা স্বাধীন করেছি । কারো পরাধীনতা মেনে নেওয়ার জন্য নয়। ভারতের সরাসরি মদদে গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষকে পরোক্ষ ভাবে ভারতের অধীন করে রেখেছিল। আমাদের দেওয়ার বিপরীতে ভারতের কাছে কিছু চাওয়াকে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভী এটা সভ্য নয় বলে অভিহিত করেছিল। আওয়ামী লীগের নতজানু পররাষ্টনীতির কারণেই ভারত আমাদেরকে কখনো পানিতে মারে, কখনো শুকিয়ে মারে আবার কখনো গুলি করে হত্যা করে।
এতদিন ভারতীয় বাহিনী আমাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা বলেছিলাম আওয়ামী লীগের নতজানুর
পররাষ্ট্রনীতির কারণে এই হত্যা কান্ড সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু এখন তো ভারতের আশীর্বাদ পুষ্ট ভারতের
মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ নেই এখন কেন হত্যা হবে? এখন তো ঐ সরকার ক্ষমতায় এসেছে যে সরকারকে
জনগন চেয়েছে। এ দেশের ছাত্র জনতা তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে ড. ইউনুসকে ক্ষমতার মসনদে
বসিয়েছে , ভারত আমার দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য নয়।
গত কিছুদিন আগে আমাদের দেশের বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশফাকুজ্জামান
সিদ্দিকি বলেছেন, অন্য কোন দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী আমার দেশের কাউকে হত্যা করলে বিজিবি
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। এ কথা শুনে দেশের জনগণ কিন্তু খুব খুশি হয়েছিলো। কিন্তু আজ আমার
প্রাণের কুমিল্লায় কামাল হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমরা এর বিচার পাবো না। আমাদের সরকার কি
মাথা উঁচু করে এ হত্যার প্রতিবাদ জানাবে না? নাকি আমরা শুধু ভারতের কাছে মার খেয়েই যাবো?
নিহত কামাল হোসেন যদি মাদক বিক্রেতা কিংবা পাচারকারী হয় বা অন্য কোন অপরাধে অপরাধী হয় তাহলে
তার বিরুদ্ধে আইনসমতে ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু আমাদের কতিথ বন্ধু রাষ্ট্র তা না করে সরাসরি গুলি
করে দাদাগিরি প্রমান দিয়েছে।আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের আর কোন নাগরিক যেন ভারতীয় বিএসএফ এর হাতে হত্যার শিকার না হয়। কুমিল্লার কামাল হোসেনই যেন ভারতের পাপের শেষ চ্যাপ্টার হয়। আপনাদের এই দেশের ছাত্র জনতা রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে কোন দেশের কাছে নত জানু হয়ে থাকার জন্য নয়। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে স্পষ্ট করে প্রতিবাদ জানানো হোক। প্রয়োজনে এবার প্রতিরোধ। আমাদের জীবন যেন আর ভারতের লালসার শিকার না হয়।
লেখক : সাংবাদিক,সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :