এম এইচ বাচ্চু : বিশ্ব নন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাকিবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার বলে গণ্য করা হয়। ১০ বছর ধরে শীর্ষ অল-রাউন্ডার এর রেকর্ডের অধিকারী সাকিব এখনো একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ফরম্যাটে সর্বোচ্চ র্যাংকিং ধরে রেখেছেন। তিনি ইএসপিএন দ্বারা বিশ্বের ৯০তম বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্থান পেয়েছেন। ২৬ তারিখ নিয়ে গুঞ্জন ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে ছাব্বিশের ঝড় যে সাকিব আল হাসানের একটা প্রেস কনফারেন্স থেকে অবসরের ঘোষণা আসবে তা হয়ত কেউ আঁচ করতে পারেননি।
হঠাৎ ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা ভালোভাবে নেননি ক্রিকেট ভক্তরা। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে তিনি অনেকটাই সমালোচিত হয়েছেন। সেসব বিষয় নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। বিশ্ব গণমাধ্যমে সাকিব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
অবসরের ঘোষণার পরেই ভারতের টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষ দশে উঠে এসেছেন সাকিব আল হাসান। শুধু সাকিবই না, মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর মিরপুরও উঠে এসেছিল ভারতের টুইটার ট্রেন্ডে। সারাবিশ্বেই ক্রিকেট ট্রেন্ডিংয়ে ওপরে আছেন সাকিব।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে সাকিব এখন হত্যা মামলার আসামী। এছাড়া শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, 'একটা মামলা হয়েছে, আসলে সবারই অধিকার আছে। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন, এটা কেমন ধরনের মামলা ছিল কিংবা আমি ঐ সময় কোথায় ছিলাম। আমার কাজ কী ছিল কিংবা আমি কী করছিলাম। সুতরাং এ বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি বলতে চাই না।'
শেয়ার কারসাজির অভিযোগ ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিষয়ে সাকিব বলেছেন, 'আমার জীবনে আমি আসলে নিজে থেকে কখনো ট্রেড করিনি, কেউ যদি এটা বন্ধে ট্রেডিং নিয়ে কথাও বলেছি, প্রমাণ দিলে আমি খুশি হব। এসব আসলে এখন যে কেউ যে কারোর মতো করতে পারে। এ জিনিসগুলো যদি সুন্দর করে বলত, আমার জন্য মানসিকভাবে ভালো হতো। কারণ, মিথ্যা অভিযোগগুলো আমার মনে হয় না ভালো কিছু করে দেশের জন্য বাইরের মানুষের কাছে। আমি যেহেতু ট্রেডই করিনি নিজ থেকে, স্বাভাবিকভাবে আমার ভুল করার বা ওটার সঙ্গে যে শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে, সেটাও আমার জন্য দুঃখজনক।'
নাতালিয়া নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, সাকিব আল হাসান যদি জনগণের ভালোবাসায় খুশি থাকতো তাহলে আজ দেশে ফিরে অবসর টেস্ট খেলে সম্মানের সাথে বিদায় নিতে পারতো। তার ক্ষমতার পূজারী ও হতে হবে বলে আজকে এই অবস্থা। এখনো সময় আছে ভুল স্বীকার করুন জনগনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন, দেশের জনগণ অনেক উদার, আপনাকে ক্ষমা করে দিবে আশা করি।
দেব চৌধরী নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপই ছিল সাকিবের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সাউথ আফ্রিকার সাথে শেষ টেস্ট খেলে, দেশের মাটিতেই নিতে চান অবসর। কি ভাবছে বিসিবি? সরকারই বা কি করবে? সাকিব যে মামলার আসামি!
হাস সাকিব নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাকিব আল হাসানের অবসরের ঘোষণা। অপ-রাজনীতির স্বীকার হওয়ার আগে অবসর নেওয়া টা সমপোযগী সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
সৌরভ রায় নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, টেস্ট আর টি টুয়েন্টি থেকে অবসর এর ঘোষণা দিলেন সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের প্লেয়ার রা এই 'অবসর' এর ঘোষণা টা 'ঠিকঠাক টাইমে' দিতে পারেনা, সাকিব থেকেই শুরু। সাকিব বুঝে গেছেন 'আর হচ্ছেনা!' ব্যক্তি সাকিবের অনেক কলঙ্কময় অধ্যায় আছে, ক্রিকেটার সাকিব গ্রেট! বাংলাদেশের এমন মানের প্লেয়ার আগে আসে নাই,আর আসবেও না! ক্রিকেটের সব সুন্দর মুহুর্তের জন্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, ক্রিকেটে রাজনীতি এনে যারা ক্রিকেটকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের অন্যতম নায়ক এই সাকিব আল হাসান। আর কোন সাকিব যেন ক্রিকেট পাড়ায় না আসতে পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আর একটা কথা কোন ক্রিকেটারের যদি রাজনীতি করার শখ জাগে তবে সে যেন ক্রিকেটকে বিদায় দিয়ে তারপর রাজনীতি করে।
আবু সালেহ রনি নামে এক ফেসবুকে লিখেছেন, সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমরা কেউ সমালোচনার উর্দ্ধে নই। তেমনি ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা থাকলেও আমার কাছে মাঠের সাকিবই গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোস্টার বয়। ঐ নতুনের কেতন না ওড়া পর্যন্ত সাকিবহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট সাধারণই মনে হবে বহুবছর। কারণ সাকিব মানেই নতুন নতুন রেকর্ড!
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সাকিবের 'আগাম' অবসরের ঘোষণা সত্ত্বেও বিশ্বাস করি জাতীয় দল, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রত্যাশা মেটাতে আবারও তাঁকে মাঠে ফিরিয়ে আনবে। শুভ কামনা সাকিব আল হাসান।
রাজনৈতিক কারণে সাকিবের দেশে ফেরা এখন অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও আছে। তাই সাকিব দেশে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলতে পারলেও প্রয়োজনে দেশ ত্যাগ করতে পারবেন- তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনও সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারবো।’
এদিকে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তা ইস্যুতে সাকিবকে কোনও সাহায্য তারা করতে পারবেন না, ‘বৃহস্পতিবার দুই দফায় কথা হয়েছে সাকিবের সঙ্গে। আমি তো আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ না। সেটার পার্ট হতে পারবো না। একজনকে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য নাই। সেটা আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে এবং তার দিক থেকে আসতে হবে। বোর্ড থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার সামর্থ্য বিসিবির নাই।’
কানপুর টেস্টের আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আকস্মিক এক সিদ্ধান্তে সবাইকে অবাক করেছেন সাকিব আল হাসান। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
আপনার মতামত লিখুন :