শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক ◈ মাগুরায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার ◈ জয়নাল থেকে বনে গেছেন ডা.আরিফ, নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা (ভিডিও) ◈ গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি : প্রেস সচিব ◈ ঢাকা মহানগরীতে মহাদুর্ভোগ

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৯ রাত
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা

এম এইচ বাচ্চু : গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে জনতা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার বার বার অনুরোধ করলেও শুনছেন না তারা।  

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর প্রতি আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, একজন অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, এটি কীভাবে রোধ করা যায়- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না, প্রতিহিংসা প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। বিচারের ভার নিজ হাতে নেবেন না। অতীত সমালোচনা কিংবা নৈরাজ্যের বদলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। নৈরাজ্য কোনো সমাধান হতে পারে না বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ-পদোন্নতিতে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকতে হবে। বৈদেশিক নির্ভরতা থেকে দেশকে বের করে আনতে হবে আমাদের।’

আইন নিজেদের হাতে তুলে না নিতে বিএনপি নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছে দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রতিশোধ নিবেন না। প্রতিশোধের ভাষা হবে আইনগতভাবে। মামলা হবে, বিচার বিভাগ মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবেন। আইনের মাধ্যমে সবকিছু মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নিবো না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ফলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মারধরের ফলে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসব ঘটনায় অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারের পাঠানে এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। এসব ঘটনা দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে বলে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, গত ১৫ বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যে নজির দেখা গেছে, তা আমাদের সমাজের বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের গুরুতর অভাবকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান জরুরি ছিল এবং নতুন বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকারের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের ছাত্র জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

এর আগে বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। পরে রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে বেধড়ক পিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মারধরের এক পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। নিহত ওই ব্যক্তির নাম নাম তোফাজ্জল।

আতিক উল খানি নামে একজন লিখেছেন এটাই বাংলাদেশ...৷ চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে নিহত... বিলিয়ন ডলার সাফল্যের সাথে চুরি করায় সম্মানিত...

আবরার ফাহাদ শামিম নামে একজন লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএইচ হলে চোর সন্দেহে একজন গণপিটুনিতে নিহত। তার সারা শরীরে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন ছিল। একজন মানুষকে খাওয়ার পর মেরে ফেললো' কিন্তু সে কি জানতো যে এটাই তার শেষ খাওয়া! আসলে  কি আমরা মানুষ।

রিফাত রহমান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএইচ হলে চোর সন্দেহে একজন গণপিটুনিতে নিহত। তার সারা শরীরে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন ছিল। ক্যাম্পাসে তো ছাত্ররাজনীতি নাই। তাহলে কারা করলো এই কাজ? দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন ঘটনার আশা করা যায়? 

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ বলছে, 'শিক্ষার্থীরা' রাত বারোটার একটু পরে এই লোককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর হাসাপাতাল মৃত ঘোষনা করলে সেই 'শিক্ষার্থীদের' আর পাওয়া যায়নি।

আইন নিজেদের হাতে কোনভাবেই তুলে নেওয়া যাবেনা। সবাই সংযত হয়ে অপরাধীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার অন্য কোন বিকল্প নেই। এমন সামান্য বিষয়ে একজন জ্বলজ্যন্ত মানুষকে এভাবে হত্যা করা ভয়ঙ্কর অপরাধ।

বদরুল আলম প্লাবন নামে একজন লিখেছেন, আমাদের কর্ম পন্থা আমাদেরকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রলীগ নেতা গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। তার অতীত বিষয়ে  জানা যায়, শামীম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমন মৃত্যু কখনো কাম্য নয়, সকলের আরো সচেতন হওয়া উচিত। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়