শাহাজাদা এমরান : গত ১০ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর কুমিল্লার পাঠক নন্দিত পত্রিকা দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিন এ প্রকাশিত একটি খবর হচ্ছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার ৮টি মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ? এই খবর জানতে গিয়ে জানা গিয়েছে, এই মাজার গুলোতে বসে রাতের বেলা মাদক সেবন করতো এবং নানা কর্মকান্ড পরিচালিত হতো।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাজারে বিশ্বাস করি না এটা যেমন সত্য আবার এটাও সত্য যে, একজন ব্যক্তির আস্থার স্থল, বিশ্বাসের স্থল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে আমি এটাও সমর্থন করি না।
কিছু দিন ধরে কুমিল্লাসহ সারা দেশে বেশ কিছু মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিন দিন এর প্রবনতা বাড়ছে। এটাকে এখন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। আমি ঐদিন টকশোতেও স্পস্ট ভাষায় বলেছি, কারো বিশ^াসকে জোড় পূর্বক ভেঙ্গে ,গুড়িয়ে দেওয়ার নাম ইসলাম না। এভাবে মাজার ভাঙ্গার মিছিল না করে বরং যারা মাজার পূজারি করে তাদের মোটিভেশন করে সঠিক পথে নিয়ে আসাই হবে শুভ বুদ্ধির পরিচয়।
অনেকেই মনে করেন যে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনটা ২০২৪ সালেই হয়েছে। আসলে তা নয়। নবাব সিরাজ উদ দৌল্লার পতনের পর ইংরেজরা ২শ বছর আমাদেরকে শাসনের নামে শোষন করে ছিলো।ইংরেজদের দ্বারা আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। যার কারণে ইংরেজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। তারপর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান জন্মের পরে তাদের কাছেও আমরা বৈষম্য শিখেছি । পাকিস্তানিরাও আমাদের শাসনের নামে শোষন করেছে। দীর্ঘ ২৩ বছর তাদের বৈষম্যের যাতাকলে আমরা পিষ্ট হয়েছি। কিন্তু মুক্তি পাইনি। তাই বৈষম্যকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছে ১৯৭১।
দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই সংগ্রাম করেই ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বৈষম্য দূর করে ১৬ ডিসেম্বর ৭১ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি সেক্টর নষ্ট করে গিয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনুসের নেতৃত্বে দেশ বিনির্মানে প্রত্যেকটি সেক্টর সংস্কার করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে যদি আমরা মাজার ভাঙ্গি, গীর্জা ভাঙ্গি, মন্দির ভাঙ্গি তাহলে বৈষম্য বিরোধী আমাদের মূল স্পিরিটটা অন্য দিকে দাবিত হবে। দেশ এগিয়ে নেওয়ার মূল মন্ত্রটিই বিনষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের এখন প্রয়োজন আজে বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে দেশ গঠনে ড. ইউনূসকে সমর্থন করা।
পবিত্র হাদিস শরীফে আছে, কবর জেয়ারতের উদ্দেশ্যে করবের কাছে যেতে পারবে। কিন্তু মাজারে গিয়ে সেজদা দেওয়া, কবর পাকা করা, কবরে কিছু রেখে পূজা করা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের দেশের এক শ্রেণির লোক আছে যারা মাজারে গিয়ে সেজদা করে। কিন্তু পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট বলা আছে, সেজদা করতে হবে কেবল আল্লাহ তায়ালার দরবারে। আমাদের এ কপাল আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নত করলে ঐ ব্যক্তির ইমান থাকবে না। সেটা সরাসরি শিরক হয়ে যাবে।
আমরা যেমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম কাজে বাঁধা দিতে পারি না। তাদের ধর্মীয় বিশ^াসে আঘাতও করতে পারি না। কারণ, কারো ধর্মকাজে বাঁধাদান ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে ইহুদীদের বিশ^াসকে ভালোবাসা দিয়ে , মোটিভেশন করে জয় করে তাদের ইসলামে এনেছেন। শক্তি প্রয়োগ করে নয়। সুতরাং যারা মাজার পূজা অর্চনা করে তাদের বিশ^াসের সাথে আমরা একমত পোশন করব না। আমরা চেষ্টা করব, তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে সত্যের পথে ধাবিত করতে। কিন্তু ভেঙ্গে কিংবা গুড়িয়ে দিয়ে নয়। তাহলে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় কোমলমতি ছাত্রদের রাজপথে ঢেলে দেওয়া রক্ত বৃথা যাবে। তাদের আত্মা কষ্ট পাবে।
আমি আবারো বলছি, মানুষের বিশ্বাসের আস্থায় আঘাত করবেন না। তাদের আস্থার জায়গাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবেন না। তা করলে দেশে আবার একটি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হবে। আমাদের বর্তমান সরকার ড. ইউনূস ইতিমধ্যে ৬ টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছে। তারা কাজ করছে ১৬ বছরের ঝঞ্ঝাল দূর করতে । আপনারা নতুন নতুন ঝামেলা সৃষ্টি করলেতো সরকার মূল কাজ করতে পারবে না। তাদের সময় দিন। সময় তো একটু লাগবেই। সময় লাগলেও যেন একেবারে সব কাজ শেষ করা হয়। সেই সময়টুকু সরকারকে দিতেই হবে।
আমি আগেই বলছি, আমি মাজার পূজারী না। যারা মাজারে গিয়ে অনৈতিক কর্মকা- করেন, সেজদা দেন, চুমু দেন তারা এগুল করবেন না প্লিজ। যারা এগুলো পছন্দ করেন না, তারা পছন্দ করাওয়ালাদের মোটিভেশন করে আপনার পক্ষে আনুন। তাহলে দেখবেন সমাজে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করবে।
আমি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বলবো, আপনারা আপনাদের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দিন যেন, যারা মাজার ভেঙ্গে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের যেন কঠোর হস্তে দমন করে।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক , দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি,কুমিল্লা জেলা।০১৭১১-৩৮৮৩০৮। sahajadaamran@yahoo.com
আপনার মতামত লিখুন :