শিরোনাম
◈ ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করব: ড. ইউনূস ◈ ‌আ.লীগ রাতে কালনাগিনী, দিনের বেলায় ওঝা: মামুনুল হক ◈ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বন্যার শঙ্কা ৮ জেলায় ◈ বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে পেটালো অন্য পক্ষ ◈ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর মোবাইল ফোন চুরি ◈ বোন পরিচয়ে আল জাজিরায় কথা বলা সেই তরুণী কে, জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ ◈ শিক্ষার্থী তাইম হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিচার দাবিতে  ◈ গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সেই সভা স্থগিত ◈ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই: ডয়চে ভেলেকে ড. ইউনূস ◈ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর বরখাস্ত ও সাইফুল বাধ্যতামূলক অবসরে

প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:২৮ বিকাল
আপডেট : ১৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:২৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বতীকালীন সরকার কাজ করছে , এবার তোমরা ক্যাম্পাসে ফিরে পড়াশুনায় মনোনিবেশ কর

 শাহাজাদা এমরান : কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি নিয়ে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে আন্দোলন শুরু করে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিন্ন এবংন্যায্য দাবি ছিল সরকারি চাকুরিতে যেন কোটা নয় , মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ, এতদিন ধরে আমাদের সরকারি চাকুরিতে মেধা কোটা ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। আর বিভিন্ন কোটা ছিল ৫৬ ভাগ। দেশের সর্বোচ্চ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে, বিসিএস পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যখন কোটার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে  চাকুরি পাচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নামে। এবং শিক্ষার্থী বন্ধুদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনটি শেখ হাসিনা সরকার বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করার অপচেষ্টা করছিল। যেমনটা করেছিল গত ১৬ বছর বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক আন্দোলনে। কিন্তু স্বৈরাচারি ভাবে গত ১৬ বছর দেশ পরিচালনা করতে করতে শেখ হাসিনা ভুলেই গিয়েছিলেন এদেশের ছাত্র জনতা যখনি কোন ন্যায্য দাবি নিয়ে নামে তখন তারা ফলাফল না নিয়ে ঘরে ফিরে না।

সরকারের দমন পিড়ন যত বাড়ছে ক্রমান্বয়ে রাজপথে নেমে আসছে দেশের প্রায় সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় তাদের অভিভাবকরাও। এক পর্যায়ে পাখির মতো গুলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যখন হাসিনা সরকার রাজপথ রঞ্জিত করে তুলল। রংপুরের আবু সাঈদ যখন বুকে পেতে দিল তাকে গুলি করার জন্য, ঠিক তখনি শেখ হাসিনার লেলিয়া দেওয়া নষ্ট ভ্রষ্ট পুলিশ মুহুর্তের মধ্যে ঝাজড়া করে ফেললো রংপুর রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক। আবু সাঈদের মৃত্যু কোটা আন্দোলনকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেল। জেগে উঠলো বিশ^ বিবেক। ৩ আগস্ট কুমিল্লাসহ সারা দেশে ছাত্র জনতার উপর নির্দয় বেহায়ার মতো হামলে পড়ে ছাত্র লীগ, যুবলীগ , আওয়ামীলীগসহ পুলিশ। এতে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে। তখনো শেখ হাসিনা বুঝতে পারেনি শিগগিরই তার গত ১৬ বছরের অত্যাচার, নির্যাতনের শাসনামল শেষ হতে যাচ্ছে। তৎকালীন স্বৈরশাষক শেখ হাসিনা জারি করলেন কারফিউ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিলেন কঠিন বল প্রযোগ করতে। কিন্তু আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী রাজি হলেন না, ছাত্র জনতার বুকে গুলি চালাতে। ৫ আগস্ট সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের কারফিউ ভেঙ্গে লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতা ইতিহাসের সর্ব বৃহৎ গণঅভ্যুত্থান ঘটান রাজধানী ঢাকায়। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় অত্যাচারিত প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্র প্রধান যিনি ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে। 

স্বৈরশাষক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী বন্ধুরা ৩৬ দিন খেয়ে না খেয়ে , শথ অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে রাজপথে ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পরেও তারা মাঠ ছাড়েননি। দেশের পুলিশ বাহিনী যখন হাসিনার পতনের সাথে সাথে থানা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন তারা থানা পাহারা দিয়েছে, সংখ্যালঘুদের মন্দির,গির্জা রক্ষা করার জন্য রাত জেগে পাহাড়া দিয়েছেন। চুড়ি,ডাকাতি রোধ করতে কাজ অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করেছেন, সারা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনে কাজ করেছেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন। সর্বশেষ দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের সর্বত্র বিভিন্ন স্থাপনার ওয়ালে রং করে,ছবি এঁকে, নানা ধরনের স্লোগান লিখে পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধন করতে সহায়তা করছেন। 

২ দিন সরকার বিহীন দেশ চলার পর গত ৭ আগষ্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক ইউনূসসহ ১৭ উপদেষ্টা শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পথ চলা শুরু করেছেন। গত ১০ আগস্ট আরো ৪জন নতুন উপদেষ্টা শপথ নিয়ে এখন সরকারের কলেবর দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। 

ছাত্র জনতার  রক্তের উপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু আস্তে আস্তে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সেহেতু  আমি মনে করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বন্ধুদের এবার ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। মনোনিবেশ করতে হবে পড়াশুনায়। দেশ গঠনে কোন ত্রুটি হলে রাজপথে এসে প্রতিবাদ করা যাবে,সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলা যাবে প্রতিনিয়ত.. । তবে এখন ক্যাম্পাসে ফিরে যাও বাবারা।

৫ আগস্ট ২০২৪ যে ইতিহাস  তোমরা সৃষ্টি করেছ, তা রক্ষা করার জন্যই তোমাদের পড়াশুনার সফল সমাপ্তি করতে হবে। বেশি দিন রাজপথে থাকলে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবিুঝ সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে জবি,চবিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে  সমন্বয়কদের পদত্যাগের খবর আসছে। যা এই মুহুর্তে মোটেই কাঙ্খিত না। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে দুই জন সমন্বয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আছেন, তাদের অনুরোধ করব, আপনারাসহ আপনাদের ১০জনকে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি করেন এবং সারা দেশ থেকে ৬৪ জেলার ৬৪জন নিন। যে কোন প্রয়োজনে তারা সরকারের সাথে লিঁয়াজো করবে। আর অন্যরা দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়ে পড়াশুনা শুরু করুক। গত প্রায় দেড় মাসে আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তাই এখনি   বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সবাইকে দ্রুত রাজপথ থেকে উঠিয়ে নিন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিলুপ্ত করুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাখা। কারণ, এতদিন ঐক্য ছিল একটি অভিন্ন দাবিতে। এখন কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাইতে পারে কেউ কেউ। আর যেখানেই ক্ষমতা সেখানেই কিন্তু দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসতে পারে।

 সুতরাং, আপনারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে নতুন সূর্য উদয় করেছেন , তা  কোন হায়েনার ছোবলে অস্তমিত হোক - একজন ক্ষুদ্র গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এটা জীবনের বিনিময়েও  চাই না। অতএব, সময় থাকতেই  সতর্ক হোন প্লিজ।   


লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক,দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি,কুমিল্লা জেলা
০১৭১১-৩৮৮৩০৮, sahajadaamran@yahoo.com

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়