শিরোনাম
◈ ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করব: ড. ইউনূস ◈ ‌আ.লীগ রাতে কালনাগিনী, দিনের বেলায় ওঝা: মামুনুল হক ◈ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বন্যার শঙ্কা ৮ জেলায় ◈ বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে পেটালো অন্য পক্ষ ◈ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর মোবাইল ফোন চুরি ◈ বোন পরিচয়ে আল জাজিরায় কথা বলা সেই তরুণী কে, জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ ◈ শিক্ষার্থী তাইম হত্যা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ বিচার দাবিতে  ◈ গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সেই সভা স্থগিত ◈ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই: ডয়চে ভেলেকে ড. ইউনূস ◈ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর বরখাস্ত ও সাইফুল বাধ্যতামূলক অবসরে

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৫৯ রাত
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির শুদ্ধি অভিযান ও দখল উৎসবে মেতে উঠারা সাবধান !

শাহাজাদা এমরান।। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র জনতার ঐক্যের বিনিময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের  পতনের মধ্য দিয়ে দেশে যে অন্তর্র্বতীকালীন  সরকার গঠিত হয়েছে সেটাকে পুরো বিশ্ব সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সাথে সাথে  সারা দেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয়েছে, চলছে চাঁদাবাজিও। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে এক লুটেরাকে বিদায় করেছে আরেক লুটেরাকে মসনদে বসার জন্য নয়। 

দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটকে রোধ করার জন্য ঘোষণা দিয়ে বলেছেন,  বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী যদি এ অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

একই সাথে এ সময়ে যাতে অন্য দল থেকে সুবিধাভোগী অথবা হাইব্রিড নব্য বিএনপি ওয়ালারা  যেন দলে যোগ দিতে  না পারে সে ব্যাপারেও তিনি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান সাহেবের এ কঠোর সিদ্ধান্ত জাদুর কাঠির ন্যায় কাজ করা শুরু করেছে । যদিও এই হীন অপকর্ম করার কারণে ইতিমধ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন গুলো গত ৬ দিনে ৬৭জন নেতাকর্মীকে বহিস্কার করেছে এবং বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শিরিন আক্তারের দলীয় পদ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমান অস্থির সময়ে বিএনপির  হাই কমান্ডের এ ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত দেশের বর্তমান অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে বড্ড নিয়ামক ভুমিকা রাখবে  বলে দেশের সচেতন সমাজ মনে করেন । 

এদিকে,  কুমিল্লায়  বিএনপি নামধারী কিছু নেতাকর্মী বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অভিযোগ রয়েছে জামায়াত শিবিরের কতিপয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও। যা সত্যিই সুখকর না। ছাত্রজনতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন  লুটেরা বাহিনীকে উৎখাত করেছে  নতুন আরেকটি লুটপাট বাহিনীকে বসানোর জন্য নয়। বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের কর্মীরা যত দ্রুত বুঝবেন তত দ্রুতই দেশের মঙ্গল হবে। 

আমরা জানি , আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছর কখনো  রাতের ভোটে বা একক ভোটে অথবা বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করে জাতির ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসে ছিলো। আওয়ামী লীগের সেই জগদ্দল পাথরকে কোন ভাবেই দেশের বিরোধী দল গুলো মুক্ত করতে পারছিলো না। তখন আমাদের জাতির সামনে দেবদূত হয়ে হাজির হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা সংস্কার করতে চেয়েছিলো।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সেই আন্দোলন হায়েনার মত বর্বরোচিত ভাবে পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে মেধাবী দামাল ছেলেদের তাজা রক্তে রঞ্জিত করেছিলো গোটা দেশের রাজপথ। গোটা দেশকে বানিয়ে ফেলছিল এক গণহত্যার কারাগার। কিন্তু আমরা দেখেছি ছাত্র জনতার দৃঢ় ঐক্যের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগই করেননি, তিনি গণআন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাত্র জনতা এ জাতিকে রাহুমুক্তির কবল থেকে রক্ষা করেছেন একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মান করবে বলে। 

কিন্তু আমরা সেদিন দেখেছি শেখ হাসিনার পতনের পরে সারা দেশে আনন্দ মিছিল বের হয়। সেই আনন্দ মিছিল থেকে একটি অংশ শুধু আওয়ামী লীগের অফিস, বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নয়, সাথে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, দোকান পাটও ভাংচুর করে। 

সে ঘটনার সময় কুমিল্লার এসপি, ডিসিসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা পুলিশ সুপারের বাস ভবনে আশ্রয় নেন। তখন একজন ক্ষুদ্র  গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কোন একজন বিষয়টি আমাকে জানায়। তখন আমি সাথে সাথে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন সাহেবকে ফোন করি। সেদিন হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন দেবদূত হয়ে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের দিয়ে কোতয়ালী থানা ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের বাসভবন রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন।   

আমি গত দুই দিন বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য একজন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলি। তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা  যদি বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড , লুটপাট ও অবৈধ দখল করে থাকে তাহলে আপনারা  নির্ভয়ে লিখুন। কারণ আপনারা পত্রিকায় না লিখলে আমরা জানব কিভাবে ? আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। 

সোমবার(১২ আগস্ট)  সকালে কথা হয়  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক  সম্পাদক ও সাবেক এমপি  হাজী আমিন উর  রশীদ ইয়াছিন সাহবের সাথে । তিনিও সুস্পষ্টভাবে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন,  যদি বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী কুমিল্লায় চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী লুটপাট ও অবৈধ দখল করে থাকে তাহলে  আমাকে জানান। আমি দলীয় ব্যবস্থা নিব আর সেনাবাহিনীকে তথ্য দিয়ে দিন। দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে। কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের  সাথে আমি ইয়াছিন জড়িত না এবং আমাদের দল বিএনপিও জড়িত না।  এ সকল দখলবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের দলে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুদ্ধি অভিযান চলছে।  এ ধরনের ঘটনা যারা করবে, তাদের জন্য আমি ইয়াছিন কোন সুপারিশ করবো না। আপনারা পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনে প্রকাশ করুন। কারণ, আমরা পরিচ্ছন্ন কুমিল্লা গড়তে চাই। 

এই প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিনের আরেকটি বক্তব্য এখানে প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন, কোন হামলা বা প্রতিশোধ নেয়াটা আমি সমর্থন করি না এবং এটা অন্যায়। তারপরও বিতর্কের খাতিরে বলছি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যদি কোন হিন্দু প্রভাবশালী নেতা কারো উপর জুলুম করে থাকে, তাহলে যদি জুলুমের শিকার ঐ বিক্ষুদ্ধ ব্যক্তি তার উপর  হামলা করে,  তাহলে সেটাকে আপনারা  সংখ্যালঘুর উপর হামলা হিসেবে ধরলে অন্যায় হবে। এটাকে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়ার পর থেকেই আস্তে আস্তে কাজে ফিরতে শুরু করেছে প্রশাসন। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়াটাই  এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে যত তারাতারি সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দিন শেষে একটি দেশকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পুলিশ বাহিনীর কোন বিকল্প নেই। শোনা যাচ্ছে, পুলিশে ব্যাপক সংস্কার করা হবে। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়কে অনুরোধ করব, সংস্কার করুন, সাথে সাথে পুলিশকে স্বাভাবিক অবস্থায়ও নিয়ে আসুন। 
আশার কথা হচ্ছে, পুলিশ বাহিনী আস্তে আস্তে কাজে ফিরতে শুরু করেছে। থানা গুলোও প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠছে।  অনেক থানা ও ফাঁড়ি লুটপাট হয়েছে। ভাংচুর হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শতভাগ ফিট হতে হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমরা চাই পুলিশ তার আপন কাজে দ্রুত ফিরে আসুক সততা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে। 

লেখাটি শেষ করার আগে সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশেষ করে  কুমিল্লার নেতাকর্মীদের বলতে চাই, আপনাদের দলীয় হাই কমান্ড কিন্তু শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। আপনি কুমিল্লায় বসে যা জানেন, তা অনেক কম জানেন। আপনার জানার চেয়ে অভিযানের পরিমানটা অনেক বেশি। সুতরাং চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে থাকলে দয়া করে ছেড়ে দিন। ভালো হয়ে যান। দেশ গড়ার কাজে মনোযোগ দিন। নতুবা , ধরা পড়লে কিন্তু খবর আছে। দল থেকে বাদ পড়বেন, আর্মি ধরে পেদানি দিবে অতপর : জেলের ঘানি টানবেন। এখন কি করবেন এটা আপনার সিদ্ধান্ত। 

আমরা চাই,সকলে মিলেমিশে প্রিয় কুমিল্লা তথা লাল সবুজের প্রিয় বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব। যাতে এই দেশে আর কোন স্বৈরশাষকের জন্ম না হয় আর এই সৈরশাষকদের উৎখাত করতে আর যেন কোন মায়ের কোল খালি করতে না হয়। 

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক , দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক , বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা শাখা। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়