নিঝুম মজুমদার: একটা গোটা তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ কী বলছে, নিঝুম ভাই আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনি এই সমাজের একজন অংশ হয়ে কীভাবে তরুণদের মতামতের বিরুদ্ধে চলে গেলেন ভাই? অসংখ্য ই-মেইল, টেক্সট, মেসেঞ্জার, ফোনে আসা বার্তার একটা ডেমো এটি। বলতে বলতে আমি ক্লান্ত, শ্রান্ত এবং একই সাথে বিরক্তও বটে। কয়েক বিলিয়ন মানুষ যদি আজ আমার বিরুদ্ধে যায়, আমাকে ঘৃণা করে, তাতে আমি অবিচলভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশে থাকবো। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবো। আমার স্কুল, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছোট্ট ভাই ফারহান, তার মৃত্যু হয়েছে। বলা হয়ে থাকে রেমিয়ানরা ফরএভার ব্রাদার্স। আমার রেমিয়ান ভাইয়েরা আমাকে নানাভাবে ভৎর্সনা করেছেন, উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমি আমার অবস্থান থেকে এক বিন্দু নড়িনি। ফারহানের অকাল প্রয়াণে আমার কষ্ট আছে। বিষাদ আছে। যন্ত্রণা আছে। কিন্তু আমি সত্যকে ধরে রাখবোই। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ আমাকে একটা জিনিস শিখিয়ে দিয়েছে। তুমি যদি ঠিক হও। তোমার যদি যুক্তি থাকে তবে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকো। ১০০ জন কী বলছে তা জরুরি নয়, কোনটি সত্য, তা জরুরি। আমাকে স্টাবর্ন, ত্যাড়া, অযৌক্তিক নানাবিধ অভিধায় আপনি বিদ্ধ করতে পারেন, কিন্তু আমি আওয়ামী লীগের পাশেই থাকবো। কেন থাকবো? কোন যুক্তিতে থাকবো? একটা যুক্তিতেই থাকবো। শুধু একটা যুক্তিতে।
আর সেটি হচ্ছে-এই আন্দোলন, এই দাবি শুরুই হয়েছে অন্যের অধিকারকে হরণ করার অভিপ্রায় থেকে। একটা অন্যায্য অবস্থান থেকে। বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার অবস্থান থেকে। কীভাবে? ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর, এক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে কোটা বাতিল হয়। সরকার গেজেট/পরিপত্র জারি করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করেন ওহিদুল ইসলাম তুষার সহ আরো ৬ জন। রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল-নিশি জারি করেন এবং এর ব্যখ্যা সরকারের কাছে জানতে চান। পর্যায়ক্রমে হাইকোর্টের রায়ে উপরে উল্লেখিত নির্বাহী আদেশ (গেজেট/পরিপত্র) বাতিল হয়ে যায়। এই ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পক্ষে যেই রায় আসে, সেটার বিরুদ্ধে খোদ রাষ্ট্র পালটা আপিল করে। অর্থ দাঁড়ায়-সরকার নিজেই আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিপ্রায়ের পক্ষে অবস্থান করে। ছাত্রছাত্রীরা এটা বুঝতেই পারেনি কিংবা বুঝবার চেষ্টাই করেনি। ঠিক হাইকোর্টের রায়ের এই ঘটনার পর যখন ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করতে শাহবাগে বসে যায়, তখন আমার দৃষ্টিতে তা ছিলো অন্যায়। অন্যায়। অন্যায়। অন্যায় এবং অন্যায়। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে, তুমি কি সেটির প্রেক্ষিতে ধার্য করা ৭-ই অগাস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতে না হে তরুণ প্রজন্ম?
তুমি কি আপিলেট ডিভিশনের রায় শুনবার পর তোমার মতামত দিতে পারতে না হে তরুণ প্রজন্ম? তুমি কি আপিল বিভাগের রায়ের পর, সরকারের কাছে যেতে পারতে না হে তরুণ প্রজন্ম? তুমি এর কিছুই করোনি। তুমি ন্যায্য ও সাম্যের কথা বলেছো। তুমি মানবিক মর্যাদার কথা বলেছো। তুমি আইনের শাসনের কথা মুখ ভরে বলেছো। কিন্তু একই সাথে তুমি মনের গহীন থেকে চেয়েছো আদালতকে ব্যবহার করতে তোমার জন্য। তুমি এটার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে প্রচণ্ড প্রেশার দিয়েছো। তুমি একই সাথে ন্যায় চাও, আবার অন্য দিকে অন্যায় করবার পুরো সুযোগ চাও। তুমি কি আমার এই বক্তব্যের পেছনে পালটা যুক্তি দিতে পারবে? পারবে না। তুমি রাস্তায় গাড়ি আটকেছো। তুমি মানুষকে আটকেছো। তোমার মতের সাথে না মেলাতে তুমি তাদের অপমান করেছো। তুমি তাদের অপদস্থ করেছো। তুমি তোমার অধিকার নিয়ে চিন্তিত হয়ে অন্যের অধিকার কি নিমিষেই কেড়ে নিলে? তুমি কি তা ভেবে দেখেছিলে? সংবিধান তোমাকে তোমার মতামত প্রকাশের ক্ষমতা দিয়েছে। একই সাথে তোমার মতের বিপক্ষে যারা আছেন, তাদেরও সে ক্ষমতা দিয়েছে। তুমি কি সেই মতামতকে কখনো শ্রদ্ধা করেছিলে? তুমি কি করলে? তুমি প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিকৃত করে ভাবলে। নিজেদের রাজাকার বলে ঘোষণা দিলে এবং বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে ছাত্রলীগের উপর প্রথম আক্রমণটা করলে। এই যে আমি বললাম প্রথম আক্রমণটা তুমি করলে সেটা তোমাদের পক্ষের পত্রিকা প্রথম আলোই বলেছে, ছাত্ররা বলেছে এমনকি তোমাদের সাথে আন্দোলনে ছিলে, তারাও স্পষ্ট করে বলেছে ফেসবুকে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই আক্রমণটা কি তোমাদের সবাই করেছো? না, তোমরা সবাই করোনি এবং হয়তো তোমরা এটা পছন্দও করোনি। কিন্তু তুমি নিশ্চই জানো, একজন প্রতিনিধি হয়ে দায় তোমাদেরই নিতে হয়েছে। আর তারপর যা হয়েছে সেটা তোমরা জানো। আমি এই জায়গাতেই এসে থেমে যাচ্ছি শুধু এটা বলার জন্য যে, এই অন্যায্য দাবির শুরুটা তোমাদের হাত ধরে। আক্রমণটা তোমরা করেছো শুরুতে এবং এটাই সত্য। সত্য। সত্য। সত্য এবং সত্য। লক্ষ-কোটিবার তুমি এই ইতিহাস পাল্টাতে যাও, পারবে না। এটা প্রকাশ্যে হয়েছে। সবার সামনে হয়েছে। আমি তাই মনে করি এই পুরো ঘটনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর চাপিয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দেওয়া এক অন্যায় দাবি ও সংকট। বিশ্বাস করো তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনরত অংশ-তোমরা আমাকে একটি যুক্তি দাও তোমাদের পক্ষে। বিশ্বাস করো, আমি তোমাদের হবো। তোমাদেরই হবো।৩১-৭-২৪।
যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/হরলযড়ড়স.সধলঁসফবৎ
আপনার মতামত লিখুন :