ফজলুল বারী: বছরের পর বছর ধরে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রী সংস্থার ছেলেমেয়েদের শুধু বিভিন্ন সংগঠনের ভেতরে ঢুকিয়ে নয়, অনলাইনেও নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া সহ সবখানে তাদের দাপট এখন প্রকাশ্য। আগে শিবিরের ছেলেমেয়েরা সংগ্রাম, ইনকিলাব, নয়াদিগন্তে কাজ করতো। এখন তারা ছড়িয়ে গেছে সবখানে। চলতি পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি দূতাবাসগুলোকে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। আরব আমিরাতের দূতাবাসে কাজ করা সাবেক এক শিবির নেতার মাধ্যমে সেটি আমার কাছে এসেছে।
পাশাপাশি দল টানা পনের বছর ক্ষমতায় থাকলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় নীতি আদর্শের শিক্ষাই সেভাবে কখনও দেয়া হয়নি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবির, ছাত্রীসংস্থার ছেলেমেয়েরা জামায়াতের নির্দেশনায় সাধারণ ছাত্রছাত্রী পরিচয়ে অনলাইন অফলাইনে সময়মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবার আওয়ামী লীগের সরকার উল্টে পড়ে গেছে মনে করে যারা ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ ছাড়ছিলেন তাদের অনেকেই শিবির ছাত্রীসংস্থার আত্মগোপনকারী নেতাকর্মী। তারাই আবরার হত্যার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রী পরিচয়ে বুয়েটসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছে। সময়মতো এরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আবেগের সঙ্গে এমন মিশে যায় যে তাদের দিকে কেউ আঙ্গুল তুললেই কৌশলের ঝড়ে সবাইকে বোকা বানায়। করোনার সময়ও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। শিবিরের এক ডাক্তারকে নিয়ে পোস্ট দেওয়াতে তারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে সরকার বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে ডিজিটাল মামলায় গ্রেপ্তার করে সামাল দেয়।
বর্তমানে জাপানে অবস্থানরত শিবিরের সাবেক এক নেতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, রংপুরে নিহত ছাত্র তাদের স্থানীয় নেতা। বিদায় রাহবার বলা তার এক পোস্ট পরে অনেকে শেয়ার করলেও আবেগের ঝড়ে সুবিধা করতে পারেননি। এই নেতা তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, গত পনের বছরে শিবিরের যে সব ছেলেমেয়েকে স্কুল থেকে গড়া হয়েছে তারাই এবারের আন্দোলন কাঁপিয়েছে। রংপুরে নিহত সেই শিবির নেতা এখন দেশে-বিদেশের হাজার হাজার ফেসবুক ইউজারের প্রোফাইল পিকচার, আন্দোলনের পোস্টার বয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার পরিবারকে গণভবনে ডেকে এনে মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কারণ একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি দেশের সবার প্রধানমন্ত্রী।
একবার বাংলাদেশ জঙ্গি হামলা এমন বেড়েছিল যে অনেক ছেলেকে চায়ের ফ্লাস্ক বোমা হাতে দিয়ে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছিল। এমন একটি ছেলে না মরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমি হাসপাতালে তাকে ইন্টারভ্যু করি। তাকে যে ব্রেনওয়াশ করেছে সে কয়েকদিন তার সঙ্গে ছিল। একসঙ্গে থেকেছে, খেয়েছে, নামাজ পড়েছে। অভিযানের তাকে বিদায় দেবার সময় বলেছে, পরের অভিযান সে করবে। তার সঙ্গে দেখা হবে বেহেস্তে। বেঁচে যাওয়ায় সে পরে বুঝতে পেরেছে সেই লোক আর অভিযান করবে না। বেহেস্তেও দেখা হবে না। এবার তেমন অনেককে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে। লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ২৯-৭-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :