শিরোনাম
◈ গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক কতটা? ◈ জামায়াত এখনই নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে কেন? ◈ আসিফ-নাহিদরা পদত্যাগ করলেও সরকারে থাকতে পারেন ছাত্র প্রতিনিধি ◈ ঢাকার সড়কে চালু হচ্ছে গোলাপি রংয়ের ২,৬১০টি বাস ◈ চৌকিতে আমু ফ্লোরে ঘুমান সালমান, খাবার অনেক সময় গন্ধ হয়ে যায়: যেমন কাটছে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কারাজীবন ◈ মণিপুরে রক্ত ঝরাচ্ছে মোদির দল, ফাঁস কল রেকর্ড ◈ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন পোড়ানোর অভিযোগে শিক্ষার্থী গ্রেফতার ◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং পরামর্শক ◈ ইউরোপিয়ান ফুটবলে জানুয়ারির মধ্যবর্তী দলবদল শেষ, দামী খেলোয়াড় খাভিছা ◈ পেলে, ম্যারাডোনা ও মেসির সঙ্গে আমার তুলনা চলে না, আমিই সর্বকালের সেরা: রোনালদো

প্রকাশিত : ০১ আগস্ট, ২০২৪, ০৩:৩০ রাত
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবন কঠিন, রাজনীতি আরও কঠিন!

শাশ্বতী বিপ্লব

শাশ্বতী বিপ্লব: তোমরা যারা হতাশা, ক্ষোভ আর অভিমানে নিজের বন্ধু-পরিজন, পরিচিত/অপরিচিতদের উদ্দেশে ঘোষণা করছো যে, জাতি মনে রাখবে তাদের ভূমিকা। কারণ তারা তোমার মতো করে প্রতিবাদ করে না। তাদের বলছি, ইতিহাস  সাক্ষী, কেউ কিছু মনে রাখে না। একাত্তরের রাজাকারের ভূমিকা ভুলতে মাত্র ৪ বছর লেগেছে। জাতির পিতাকে হত্যা করতে আমাদের হাত কাঁপেনি। রাজাকারের গাড়িতে প্রাণের পতাকা তুলে দিয়েছি। এরপর দীর্ঘসময় মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। সেই দিনগুলো আবার এখন কারো মনে নেই। জাতীয় চারনেতাÑ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের অবদান কেউ মনে রাখেনি। বীরাঙ্গনাদের ভুলতে আমাদের একদিনও সময় লাগেনি। দেশতো পরের কথা, নিজের পরিবার তাদের ত্যাগ করেছে সবার আগে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তাদের ত্যাগ বেমালুম ভুলে গেছে।

কর্ণেল তাহের বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমানকে খালেদ মোশাররফদের হাত থেকে উদ্ধার  করেন। জিয়াউর রহমান সেটা মনে রাখেনি। কর্ণেল তাহেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে ফাঁসি দেয়। ১৯৭৭ সালে মাত্র দুই মাসে সশস্ত্র বাহিনীর ১১৪৩ জন সদস্যকে ফাঁসি দেয় জিয়া সরকার। মার্শাল ল এর নামে নির্বিচারে হত্যা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের নামতো দুরের কথা, এই ঘটনাই কেউ মনে রাখেনি। ৯০-এর স্বৈরাচারকে আমরা মনে রাখিনি। ১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসে আমরা লাল রঙে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করি। সেদিন যারা মরেছিলো, তাদের কেউ মনে রাখেনি। দিবসটাই হারিয়ে গেছে। নূর হোসেনকে নামকাওয়াস্তে মনে রাখলেও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে আমরা ভুলে গেছি। জাতীয় পার্টি আবার সগৌরবে রাজনীতিতে ফিরেছে। ২০১৪-১৫ সাল জুড়ে পেট্রোল বোমা হামলা আর আগুন সন্ত্রাসে নিহতদের মনে রাখেনি কেউ। 

পূর্ণিমাকে চেনো? ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতসহ চারদলীয় জোট জয়লাভের পর সংখ্যালঘুদের উপর চালানো চরম নৃশংসতার একজন শিকার। ১২ বছরের পূর্ণিমাকে ১১ জন মিলে গণধর্ষণ করেছিলো হিন্দু হওয়ার অপরাধে। বাংলা ভাই নামে এক ভাই জুটেছিলো আমাদের। তার স্টাইল ছিলো উল্টো করে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা। সেই আতঙ্ক আর নৃশংসতা কেউ মনে রাখে নাই। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সাড়ে চারশ স্পটে প্রায় পাঁচশ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ভুলে গেছি আমরা। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ৫ মের কোরআন পোড়ানো সন্ত্রাসসহ আরো পুরানো সব ঘটনা ছেড়েই দিলাম। অন্য নিকট অতীতের কথা বলি। ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের মূলশক্তি ব্লগারদের একের পর এক কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করা হয় হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, আরেফিন দীপনসহ আরো অনেক অসাম্প্রদায়িক মানুষকে। কয়জন মনে করে তাঁদের?

আল্লামা সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব রটিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়। ৬৭ জন প্রাণ হারায়। তবুও গুজবেই আমরা আস্থা রাখি। ফলাফলটা ভুলে যাই।  ২০১৬ সালের হলি আর্টজানের বিভৎস নৃশংসতাকেও আমরা ভুলতে পেরেছি। ১৮ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিরপরাধ মানুষকে জবাই করে হত্যা করা হয়। তাদের কেউ মনে রাখেনি। এই ঘটনার ঠিক ছয়দিন পরে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে আক্রমণের চেষ্টা করে জঙ্গিরা। প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হয় দুই পুলিশ কনস্টেবল এবং স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। কে মনে রেখেছে তাদের? জাফর ইকবাল স্যারকে মুহূর্তে ছুঁড়ে ফেলেছি আমরা। ভুলে গেছি বিদেশের নিশ্চিন্ত জীবন ছেড়ে দেশকে ভালোবেসে ফিরেছিলেন তিনি। ঘাঁড়ে কোপ খেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছিলেন। এরকম আরো অনেক কিছু ভুলেছি। কেমন বাংলাদেশ দেখেছি আমার শৈশবে, কৈশোরে, তারুণ্যে, আমাদের মনে নেই। কেমন অর্থনীতি, কেমন বাক-স্বাধীনতা, কেমন মানবাধিকার, আমাদের মনে নেই।

এমনকি, আওয়ামী লীগও মনে রাখেনি। যাদের ত্যাগ ও শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আজকের আওয়ামী লীগ, তাদের কাউকে মনে রাখেনি। অসাম্প্রদায়িকতাকে মনে রাখেনি, আদর্শকে মনে রাখেনি। রাজনীতি কাউকে মনে রাখে না। সাধারণ মানুষও মনে রাখে না। শুধু মনে রাখে সন্তানহারা মা-বাবা, পিতা-মাতাহারা সন্তান, তাদের পরিবার আর ভুক্তভোগী নিজে (যদি বেঁচে থাকে)। এবারও ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। একসময় সব ঝাঁপসা হয়, সব। জীবন কঠিন, রাজনীতি আরো কঠিন। ৩০-৭-২৭।  https://www.facebook.com/shashwatee.biplob.5

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়