ইমতিয়াজ মাহমুদ: [১] খুব সোজা সতর্কবাণী বলে দিই। মেহেরবানী করে আপনি যখন কোন সূত্র থেকে কোন তথ্য শেয়ার করছেন, তথ্যের উৎস ভালো করে দেখে নিন। এই কথাটা আপনাকে হয়তো আরও অনেকেই বলেছেন। সরকারের লোকেরা তো বলেই, টেলিভিশনেও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়, আপনার শুভানুধ্যায়ীরাও বলে নিশ্চয়ই, গুজব ছড়াবেন না। মুশকিল হচ্ছে আমাদের অনেকেই আছেন যারা এরকম তথ্যসূত্র সবসময় নিশ্চিত করতে পারেন না, ইচ্ছে করে না হলেও নিজের অজান্তেই গুজব ছড়িয়েই যাচ্ছেন। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নাই, সত্য মনে করেই নিজেও উত্তেজিত হচ্ছেন, আর অন্যদের মধ্যেও ছড়াচ্ছেন ভুল তথ্য। সম্প্রতি এরকম হয়েছে-খুবই আপনজন ধরনের একজন, অনেকটা পরিবারের সদস্যই বলতে পারেন, তিনি খুব করে ফেসবুকে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পরিবেশন করে বেড়াচ্ছেন, আপনার এক পোস্টেও এসে বেশ রাগের একটা মন্তব্য করতে বলেছেন এইরকম-হাজারের উপরে মানুষের প্রাণ গেছে ইত্যাদি। কোন সূত্র থেকে তিনি এইসব তথ্য পেলেন? একটা ওয়েব পোর্টালের সূত্র দিলেন। গিয়ে দেখি সেই ওয়েব পোর্টালে, এইটা যে একটা ফাও ফালতু ভুয়া জিনিস খবরের কাগজের মতো নাম ইত্যাদি নিয়ে একটা ওয়েবসাইট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে সেটা যে কেউ এমনিতেই বুঝতে পারবে।
[২] এখন বয়স্ক মানুষ, কী আর বলবো বলেন। দেখলেই বুঝা যায় যে এটা ফেইক, কিন্তু তিনি হয়তো পরিস্থিতির উত্তেজনায় ওইসব লক্ষ্যই করেননি। অথবা এমনও হতে পারে যে আপনি যখন নিজে একটা খবরের প্রত্যাশা করছেন বা আশঙ্কা করছেন তখন যে সূত্রই থেকেই আসুক খবরটা পেলেই সত্য মনে হয়। অথবা এটাও হতে পারে যে অন্তর্জালে যে কতরকম শয়তানী করে লোকে, সেটা হয়তো তিনি পুরোটা অনুধাবন করেন না-ভেবেছেন যে বিদেশ থেকে প্রকাশিত একটা খবরের কাগজ যখন এটা বলছে, নিশ্চয়ই সত্যি হবে। দোষ হয়তো তাঁকে দেওয়া যাবে না। আর দোষ দিলেও, কটু কথাতো বলতে পারবেন না আরকি। মুশকিল হচ্ছে যে এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন ছোট একটা কাণ্ড আপনার জন্যে বড় বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। আপনি আমি সকলেই জানি যে এই দেশে বিচার ব্যবস্থা দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। গণতন্ত্র তো দেশে নাই আরকি। এর ফলে পুলিশ যদি চায়, বা অন্য কেউ যদি আপনাকে হয়রানি করতে চায় তাইলে এইসবের একটা দুইটা লিঙ্ক দিয়ে আপনাকে সিরিয়াস বিপদে ফেলতে পারে। স্কুলছাত্রদের আন্দোলনের সময় আমাদের দেশে বিখ্যাত তারকা ধরনের মানুষকেও অনেক বিপদে পড়তে হয়েছে। আর যে সংবাদটা আপনি ছড়াচ্ছেন সেটা যদি মিথ্যা হয় তখন আপনার হয়ে কিছু বলাও কঠিন হয়ে যায়।
[৩] শোনেন, মতামত এক জিনিস আর তথ্য আরেক জিনিস। মতামতে আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন, আপনার মতামত ঠিক কি ভুল সেটা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তথ্য আরেক জিনিস। আবার বলছি, তথ্য ও মতামত এক জিনিস নয়। দেওয়ার সময় সত্যতা যাচাই করে নেওয়া জরুরি, কিন্তু মতামত হচ্ছে আপনার নিজের ব্যাপার। আমি যদি আপনার মতামত পছন্দ না করি তাতে কিছু যায় আসে না, তর্ক হতে পারে, ভিন্নমত হতে পারে। কিন্তু তথ্য ভুল দেওয়ার মানে হলো আপনি মিথ্যাচার করছেন। সূত্রটা দেখে নিবেন নির্ভরযোগ্য কিনা। আপনি যদি একটা নির্ভরযোগ্য বা সনাক্ত করা যায় এমন কোনো সূত্র থেকে উদ্ধৃত করে কোন তথ্য পোস্ট করেন ফেসবুকে সেই তথ্য যদি ভুলও হয় আপনার সেরকম দায় থাকে না। ধরেন কোনো খবরের কাগজ বা টেলিভিশন চ্যানেল যদি একটা খবর প্রকাশ করে তাইলে সেই তথ্য ভুল হলেও তার প্রাথমিক দায় সেই কাজের বা টেলিভিশনের। বিদেশি সূত্রও যদি হয়, বিদেশের মূলধারার কাগজ আছে, টেলিভিশন আছে সেগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু এরকম অজানা-অচেনা দৃশ্যটা ফেইক নিউজপেপারের সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের লিঙ্ক তো ঠিক না আরকি। [৪] অনেকে আছেন ইচ্ছে করেই মিথ্যাচার করেন। আপনি যদি সেরকম ইচ্ছে করে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াতে চান তাইলে আলাদা কথ-সেক্ষেত্রে এই পোস্ট আপনার জন্যে নয়। কিন্তু ওই কথাটা মনে রাখবেন-তথ্য আর মতামত। তথ্য আর মতামত-এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পার্থক্য ধরন ইত্যাদি নিয়ে লিবার্টির কন্টেক্সটে অনেক কথা মনে আসছে, সেগুলি পরে একসময় লিখব। নজর রাখুন, দৃষ্টি খোলা রাখুন।
লেখক: আইনজীবী। ৩১-৭-২৪। https://www.facebook.com/imtiaz.mahmood
আপনার মতামত লিখুন :