শিরোনাম
◈ কবে দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান? (ভিডিও) ◈ যুবককে কুপিয়ে হত্যা, কেটে নিয়ে গেল হাত (ভিডিও) ◈ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ: সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ◈ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হলেন তাজুল ইসলাম ◈ ‘দেহ ব্যবসা’র ভিডিও প্রতিবেদন ইস্যুতে সোহানা সাবার হুঁশিয়ারি ◈ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ইতালির মোনফ্যালকনে ◈ নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদি সাক্ষাতে ঢাকার অনুরোধ, এখনো চুপ দিল্লি ◈ হদিস মিলছে না পলকের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী: ফখরুল ◈ ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি, যুবদল নেতাকে পুলিশে দিলো সেনাবাহিনী

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫০ দুপুর
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৫০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকা কি ফিলিস্তিনের গাজা হতে যাচ্ছিলো?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: কোটা আন্দোলনের ইস্যুকে বেহাত করে স্বার্থান্বেষী একটি মহল বাংলাদেশকে যেভাবে আক্রমণ করেছিলো, সেটি অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে ঢাকাকে কেন্দ্রীভূত করে যে প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে, তা কোটা আন্দোলনকে ম্লান করে দিয়েছে। বোঝাই গিয়েছে, জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদল-সহ আরও গোষ্ঠি সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা আগে থেকেই গ্রহণ করছিলো। জুন মাসে হাই কোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনে দাবি নিয়ে ছাত্ররা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলো, তাদের মধ্যে তখন একটি আবেগ লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যে সরকারি চাকরিতে কোটা বাদ দিতে আবার কোনো না কোনো সমস্যা হতে যাচ্ছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই একটি আন্দোলন গড়ে তোলার মতো কার্যক্রম চলছিলো। কোটা সংস্কারের বিষয়টি সব ছাত্র সংগঠন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী সমর্থন করছিলো।

২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে অক্টোবর মাসে একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করে এটাকে বাতিল করে দিয়েছিলো। কিন্তু এই বাতিলের বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিজনদের একটি অংশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে  একটি রিট করেছিলো ২০২১ সালে। সেটির উপর শুনানি হচ্ছিলো এবং সরকার এই শুনানিতে অংশ নিয়ে চেষ্টা করেছিলো, যাতে করে সেই পরিপত্র বহাল থাকে।

কিন্তু হাইকোর্ট সেই পরিপত্র বাতিল ঘোষণা করেছিলো। সরকার এর বিরোদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে, সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করে হাইকোর্টের যে রায়টি ছিল তা বাতিল করে দেয় এবং পূর্বের অবস্থা বজায় রাখার জন্য ৭ আগস্টে শুনানির একটি দিন ধার্য করেছিলেন। তাতে শিক্ষার্থীদেরও অংশ গ্রহণের অনুরোধ করে ছিলেন। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল এবং তারা দাবি করছিল সরকার যেন একটি পরিপত্র জারি করে ব্যবস্থা নেয়। যেহেতু আদালতের শুনানির দিন ধার্য করা ছিলো, তাই আদালত-সরকার সবাই আশা করেছিলো শিক্ষার্থীরা সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কিন্তু মনে হয় এই পরিস্থিকে কাজে লাগানোর জন্য একটি মহল সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছিলো। তারা আগে থেকে সরকারকে উৎখাত করার যে পরিকল্পনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন তারা ঢাকায় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে থাকে। এতেই বুঝা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যে টেলিফোন সংলাপ প্রকাশ পায়, তাতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো ঢাকায় সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। 

কোটা আন্দোলনের সব নেতা বা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা, কোনো অবস্থাতেই এটি রাজনীতির দিকে মোড় নেবে তারা সেটি কখনো চায়নি, কিন্তু নেপথ্যে রাজনীতিতে অনেক কিছু ঘটে, যা  অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বুঝতে পারেনি, এই ইস্যুটা এত দ্রুত দাবানলের মতো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। 
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারি চাকরি নিয়ে যে আবেগ সেটি তখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিলো। এই বিষয়টি সরকার বুঝতে পারেনি। আঠারো সালের আন্দোলন আর এবারের আন্দোলনের মধ্যে একটা ভিন্নতা আসতে পারে তা তারা বুঝতে পারেননি। কারণ এর পেছনে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো যারা আগে থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলো, তারা এই আন্দোলনকে ব্যবহার করার জন্য তাদের যে প্রস্তুতি সেটিকে এখানে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেবে, সেটিই করা হলো। প্রায় এক-দেড় মাস আগে থেকেই ঢাকায় ছাত্র শিবির, জামায়াত এবং বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সক্রিয় হয়ে উঠেছিলো।

১৬-১৭ জুলাইয়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে ওঠে এবং সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের দূরত্ব সৃষ্টি করতে সফল হয়। এর প্রেক্ষাপটে দেখা যায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, সেই উত্তেজনা থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রশিবির ও জামায়াতের ক্যাডার ঢাকায় চলে আসে। যার নমুনা আমরা লক্ষ্য করি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে মিছিল-মিটিং হচ্ছিল তাতে প্রচুর পরিমাণে বহিরাগত অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের হাতেই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫-৬ জন শিক্ষক নাজেহাল হয়েছিল। সরকারি মহল তখনো বুঝতে চায়নি যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এই আন্দোলনকে কোন দিকে নিয়ে যাবে। ফলে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে দেখা যায়। সেই প্রতিক্রিয়ায় ভাঙচুর, হল দখল এবং ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এই কোটার বিষয় নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু এদের সঙ্গে যে বিশাল বহিরাগত শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে, সেটি হয়তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের বোঝা বা জানার কথা নয়।
 
এর ফলেই ১৮-১৯ তারিখ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, রামপুরা, উত্তরা, মিরপুর, গাবতলী, সাভার, মোহাম্মদপুর এলাকায়, সেই ২০১৩ সালের মতো কর্মসূচি নেওয়ার অবস্থা চলে আসে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রংপুরে কিছু অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে যখন গুলি করা হয় এবং চট্টগ্রামে যখন তিনজন শিক্ষার্থী মারা যায়, সেখানে যে সংঘর্ষ, সংঘাতের সৃষ্টি হয়। তখনই ১৮ তারিখের কর্মসূচি তীব্রতর হয়ে উঠে। এই অবস্থায় ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে তখন বহিরাগতরাও অংশগ্রহণ করেছিল, তা তারা জানতো না। এই বহিরাগতরাই ঢাকায় বিটিভি ভবনসহ, সেতু, বেতার ভবন, দুর্যোগ ভবন, মেট্রোরেলে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, এটা কিন্তু তাৎক্ষণিক বিষয় নয়। এটির পূর্ব প্রস্তুতি সম্ভবত তাদের আগেই ছিল।

কোটা আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঢাকা, নরসিংদী, চট্টগ্রামে ব্যাপক পরিমাণে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। ২০ তারিখে এটি আরও ব্যাপকতা লাভ করছিল, যার ফলে দেখা যাচ্ছিল ঢাকায় সরকারি স্থাপনা, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোনো কিছুই বাদ পড়ছিল না। যা জাতিকে হতভম্ব করেছিল। তখন গণমাধ্যম কর্মীদের এসব অবস্থান কর্মসূচির জায়গাতে যেতে দিচ্ছিল না, ফলে সেখানা কী হচ্ছিল তা জানা যাচ্ছি না। আসলে সেখানে তাদের বসিয়ে রেখে মূল পরিকল্পনাকারীরা সরকারের প্রতিষ্ঠান, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যানবাহন পুড়িয়ে, ফেলা লুটপাট করা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলো, তাতে মনে হচ্ছিল ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় তছনছ করছে, ঠিক একইভাবে ঢাকাতে করা হচ্ছে। এটি যদি আরও সময় পেত তাহলেই কিন্তু সরকার উৎখাতের যে নীলনকঁশা, সেটি তারা পরিকল্পনা করতে পারতো।

ইতোমধ্যে আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, অন্য কোনো পক্ষ যদি যুক্ত হয় সেই দায়ভার তারা নেবে না। বিশেষ করে যখন বিএনপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়ার ডাক দিয়েছিলো, তখন বোঝা গিয়েছিলো কোটা আন্দোলন বেহাত হয়ে গিয়েছে, এখানে সরাসরি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করার পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে। সেই অবস্থায় সরকার সেনাবাহিনীকে নামাতে বাধ্য হয়। কারণ ইতোমধ্যে বহু কার্যক্রম ভেস্তে গিয়েছিলো, পুলিশ, বিজিবিও আক্রান্ত হচ্ছিলো। এ রকম পরিস্থিতি আরও ভেস্তে দেওয়া হলে তারা সাধারণ নিরীহ মানুরেষ ওপর আক্রমণ করবে এবং সরকার উৎখাতের জন্য গণভবনে আক্রমণ করা তাদের কাছে বিচিত্র্য কোনো কিছু ছিলো না। কারণ তারা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় তাদের বিশাল বাহিনী ঢাকায় কার্যকর ছিলো।

নরসিংদী কারাগার থেকে যেভাবে জঙ্গিদের মুক্ত করে নেওয়া হলো, তা থেকেও বোঝা যায় তারা দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছিলো এবং সরকার উৎখাতের আন্দোলন হতে যাচ্ছিলো। সরকার উৎখাত আন্দোলন হতো একটা ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ, রক্তাক্ত পরিণতি। এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশে হতে যাচ্ছিলো, যা অনেকটাই বর্তমান গাজায় যেভাবে ইসরায়েল বাহিনী তছনছ করছে, তেমনি ঢাকায় হতে যাচ্ছিলো। এ কারণেই আমার মনে হয়, ঢাকাকে গাজার মতো পরিণত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার উৎখাতকারীরা, এভাবেই অগ্রসর হয়েছিলো। এতে কোটা আন্দোলনকারীরা তখন আর কোনো ভূমিকার অবস্থানে ছিলো না। পরিচিতি: শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট। শ্রুতিলিখন : ইশাদুল মিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়