সাদিয়া নাসরিন: আগেও বলেছি, আবারও বলছি, আমি কোটা আন্দোলন করা শিক্ষার্থী বা অ-শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস করি না। হাতে গোলাপ নিয়ে আসলেও পাকিস্তানি বীজ থেকে বের হয়ে আসা যেকোনো মুভমেন্টকে আমি অবিশ্বাস করি। আমি জানি, এই আন্দোলনের পার্পাস এবং অনেস্টি অব পার্পাসে যথেষ্ট ঘাপলা আছে। এই অবিশ্বাস বিভিন্ন দফায় চলমান কোটা কর্মকাণ্ডের ফল। এই কোটা আন্দোলন থেকে ‘আমি রাজাকার’ প্ল্যাকার্ড ধরা হয়েছিলো। এই কোটা আন্দোলন নূরার মতো ধান্ধাবাজ হারামজাদা জামাতী চামচাকে নেতা তৈরি করেছিলো। এবারও একই ঘটনা। ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী শ্লোগান দিচ্ছে, তুমি কে-আমি কে? রাজাকার, রাজাকার। ইটস নট অ্যা স্পোর্টিং গেইম। নো। মনে রাখবেন, রাজাকার শব্দের সাথে গণহত্যা জড়িত। বুদ্ধিজীবী হত্যা জড়িত। রাজাকার শব্দের সাথে এই দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর ধর্ষণের যন্ত্রণা জড়িত।
এখন মেধাবী শিক্ষার্থিরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলছে। ‘আমি রাজাকার’ শ্লোগান দিচ্ছে। কোথায় দাঁড়িয়ে তারা এই ‘আমি রাজাকার’ শ্লোগান দিচ্ছে? সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে, পঁচিশ মার্চ কালরাতে যে বিশ্বদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছিলো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বা ‘বাঙালি এথনিক ক্লিনজিং’, ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারির রক্তে ভেসে গিয়েছিলো যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, যার প্রতিটি দেয়ালে পঁচিশে মার্চের গণহত্যার তাণ্ডব আঁকা এখনও, সেই রাতে যে বিশ্ববিদ্যালয়োর রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রীদের উপর মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়েছিল, যে গুলির স্বাক্ষী এখনও বিরাজমান, চৌদ্দ ডিসেম্বরে যে বিশ্বদ্যালয় থেকে মেধাবী শিক্ষকদের বেছে বেছে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলো রাজাকাররা, যে বিশ্বিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করার মাধ্যমে স্বাধীনতার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিলো,
যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আমার দেশ, তোমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ এবং ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’ স্লোগানে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠেছিলো, যে বিশ্বিদ্যালয় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক অংশীদার, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যে ক্যাম্পাসে স্তুপ করে রাখা হয়েছিল শহীদদের লাশ; সেই ক্যাম্পাসে আজ শহীদ শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারির রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, শহীদদের উত্তরসূরীরা নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, ‘তুমি কে-আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’। কোটা থাকুক বা না থাকুক, সেটি ভিন্ন আলোচনা। তার আগে আমি চাই, এই ‘মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী আন্দোলন’ রাষ্ট্রিয়ভাবেই দমন করা হোক। লাখো শহীদ ডাক পাঠালো, সব সাথীদের খবর দে সারা বাংলা ঘেরাও করে রাজাকারদের কবর দে।
১৫-৭-২৭. https://www.facebook.com/sadia.nasrin
আপনার মতামত লিখুন :