শিরোনাম
◈ আপা আপা বলা তানভীর: আ. লীগ দ্বারা নির্যাতিত দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছেন! ◈ ৭ হাজার ১৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলো মাত্র সাত দিনে ◈ প্রবাসীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণেও এবার মিলবে প্রণোদনা ◈ ফের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট চালু ◈ যেদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ◈ সংস্কার, সংলাপ ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগুবে অন্তর্বর্তী সরকার, জানালেন রিজওয়ানা ◈ ফেসবুকে চিত্রনায়ক নাঈমের স্ট্যাটাস ঢাকায় জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে , যা লিখলেন ◈ সংস্কার প্রয়োজন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের: অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ ফাতিমা কেন উপদেষ্টা নাহিদের বোন পরিচয় দিয়েছিলেন, জানালেন নিজেই  ◈ বিশ্ববাজারে তিন বছরে সর্বনিম্ন তেলের দাম

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২৪, ০৬:৪৪ সকাল
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২৪, ০৬:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্রাত্যজনের শব্দবোধ : প্যাড়া

মানবর্দ্ধন পাল

মানবর্দ্ধন পাল: ‘আরে ভাই, এতো প্যাড়া দিস না তো। অফিসে বসের প্যাড়া, পথে যানজট ও জলজটের প্যাড়া, বাজারে জিনিসপত্রের দামের প্যাড়া, ঘরে গেলে বউয়ের প্যাড়া- জীবন এখন প্যাড়াময় হয়ে উঠেছে।’ এভাবে ‘প্যাড়া’ শব্দটি আমরা প্রায়শ শুনতে পাই। বিশেষত একালের তরুণ ও যুবকেরা এই শব্দটি কথায় কথায় ব্যবহার করে। নিশ্চয়ই সবাই কমবেশি শব্দটি শুনেছেন। ব্যথা, যন্ত্রণা, ঝামেলা, অশান্তি, বেদনা, কষ্ট ইত্যাদি অর্থে ‘প্যাড়া’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। বাক্যে শব্দটির প্রয়োগ দেখেই এর অর্থ আমরা আন্দাজ করে নিই। আমার সংগ্রহে থাকা দেশ-বিদেশের বড়ো বড়ো কোনো অভিধানেই ‘প্যাড়া’ শব্দটি খুঁজে পাইনি। তাই এর সঠিক বানান আমি জানি না। তবে এটিই শুদ্ধ বানান হবে বলে ধারণা করি।

কেন করি, তার ব্যাখ্যাও দিতে চেষ্টা করেছি। এর বানান কেউ কেউ লেখেন ‘প্যাড়া’, কেউ বা ‘পেড়া’। এরকম বানানের দুটি শব্দ অভিধানে আছে। ইংরেজি শব্দ প্যাড়াগ্রাফের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘প্যাড়া’এর অর্থ অনুচ্ছেদ। আর ‘পেড়া’ একপ্রকার শুকনো মিষ্টির নাম। তাই এই দুই বানান দিয়ে তো আগেরটির অর্থ প্রকাশ করা যাবে না। তাই ভিন্ন বানানের আশ্রয় তো নিতেই হয়। বাংলায় একটি শব্দ আছে-পীড়া। এর অর্থ অসুখ, ব্যথা, কষ্ট, যন্ত্রণা ইত্যাদি। পীড়া থেকে হয় পীড়ন, পীড়িত, পীড়ক ইত্যাদি। এর একটি সহজ ইংরেজি শব্দ চধরহ ভেবে দেখুন, এই দুটি শব্দের সঙ্গে কিন্তু -পীড়া ও চধরহ-‘প্যাড়া’ শব্দের উচ্চারণ ও অর্থে খুব মিল আছে। একেবারে অঙ্গে ও অন্তরে মিল। তাই আমি নিশ্চিত যে, ‘পীড়ার বিকৃত বা পরিবর্তিত রূপ ‘প্যাড়া’। পীড়া এবং চধরহ যেন এই ‘প্যাড়া’ শব্দের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বাংলা শব্দের কারখানায় একাধিক শব্দ ভেঙেচুরে নতুন শব্দ তৈরি করা একটি পুরনো রীতি। শব্দের রসুইখানায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রেসিপিতে এমন নতুন শব্দের আইটেম রান্না হচ্ছে।

সেকালে রবীন্দ্রনাথ করেছেন, একালে আবদুল মান্নান সৈয়দ করেছেন। এখনো করছেন কেউ কেউ। সংস্কৃত ভাষায় ‘রোদন’ থেকে ‘রোদসী’ শব্দ ছিল। কাঁদছে যে নারী তাকে বলে ‘রোদসী’। এর অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ ‘ক্রন্দন’ শব্দ থেকে বানিয়েছেন ‘ক্রন্দসী’। বিশ শতকের সমান বয়সী সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম-ক্রন্দসী। এদেশের আবদুল মান্নান সৈয়দ এমনভাবে অনেক শব্দ তৈরি করেছেন। যেমন প্রচলিত ‘আপাদমস্তক’ না-লিখে তিনি লিখতেন-আপাদশির, আমুণ্ডুনখাগ্র। সবশেষে বলি, আমি ভাষাবিজ্ঞানী বা শব্দতাত্ত্বিক নই। ভাষা-গবেষকও নই। শব্দ সম্পর্কে আমার ধারণা ও মতামতই  কেবল যথাসম্ভব যুক্তি দিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করছি। আমি অল্পশিক্ষিত একজন ‘মাস্টার’ মাত্র। রামপ্রসাদের মতোই বলবো : ‘আমি মন্ত্রতন্ত্র কিছুই জানিনে, মা।’

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়